Advertisement
E-Paper

অবশেষে ১৭ বছর পর ধোনিদের দুর্গে ফাটল ধরালেন কোহলিরা, বেঙ্গালুরুর কাছে ৫০ রানে পর্যুদস্ত চেন্নাই

আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর জয়ের ধারা অব্যাহত। ইডেন গার্ডেন্সে কলকাতা নাইট রাইডার্সের পর এ বার চেন্নাই সুপার কিংসকেও তাদের ঘরের মাঠে হারাল তারা।

cricket

চেন্নাইকে হারিয়ে উল্লাস কোহলিদের। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫ ২৩:১৩
Share
Save

১৭ বছর! হ্যাঁ ঠিক ১৭ বছর পর চেন্নাই সুপার কিংসকে তাদের ঘরের মাঠে হারাল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। আইপিএলের প্রথম বছর ২০০৮ সালে চেন্নাইয়ে জিতেছিল বেঙ্গালুরু। সেটাই ছিল প্রথম বার। এত বছর ধরে সেটাই ছিল শেষ বার। অনিল কুম্বলে, বিরাট কোহলি থেকে ফ্যাফ ডু’প্লেসি, অধিনায়ক বদলে গেলেও ফল বদলায়নি। বার বার চেন্নাই থেকে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে বেঙ্গালুরুকে। সেই ফল বদলালেন রজত পাটীদার। ১৭ বছর পর আবার দক্ষিণী ডার্বি জিতল বেঙ্গালুরু। ব্যাট, বল, ফিল্ডিং, তিন ক্ষেত্রেই দাপট দেখাল তারা। ৫০ রানে চেন্নাইকে হারিয়ে আইপিএলে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষেই থাকলেন কোহলিরা। আইপিএলে ঘরের মাঠে এই প্রথম এত বড় রানে হারল চেন্নাই।

পাটীদার অধিনায়ক হওয়ার পর বদলে গিয়েছে বেঙ্গালুরু। তারকা সংস্কৃতি ছেড়ে বার হওয়ার পর বদলে গিয়েছে তারা। এই দলে কোহলি ছাড়া কোনও তারকা নেই। প্রতি বছর বেঙ্গালুরুকে নিয়ে একটাই অভিযোগ থাকত। বড় বড় নাম থাকলেও দল হিসাবে খেলতে পারত না তারা। মাথা ভারী দল বলা হত বেঙ্গালুরুকে। যাদের প্রথম চার ব্যাটার বিধ্বংসী হলেও তার পরে কেউ থাকতেন না খেলা শেষ করার জন্য। বোলিং বরাবর ভোগাত তাদের। এ বার সেই ফাঁক ভরাট করেছে দল। নিলামে যে বেঙ্গালুরু খেটেছে তা প্রথম দু’টি ম্যাচ থেকেই পরিষ্কার। গত বারের চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্সের পর পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইকেও সহজে হারাল তারা।

টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন চেন্নাইয়ের অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড়। চেনা ফর্মুলা। প্রথমে বল করে প্রতিপক্ষকে যত কম রানে সম্ভব আটকে রাখা। পরে শিশিরের মাঝে সেই রান তাড়া করা। কিন্তু শুক্রবার চেন্নাইয়ে শিশির পড়ল না। ফলে চেনা ফর্মুলা কাজে দিল না। উল্টে বেঙ্গালুরুর করা ১৯৬ রানের চাপে ভেঙে পড়ল চেন্নাইয়ের ব্যাটিং।

বেঙ্গালুরুর নতুন ওপেনার ফিল সল্ট আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও দলকে খুব ভাল শুরু দেন। তিনি থাকায় কোহলি কিছুটা সময় পান। সল্ট পাওয়ার প্লে কাজে লাগিয়ে একের পর এক বড় শট খেলছিলেন। মাত্র ১৫ বলে ৩২ রান করে ফেলেছিলেন। বাধ্য হয়ে আফগানিস্তানের স্পিনার নুর আহমেদকে বলে আনেন চেন্নাইয়ের অধিনায়ক রুতুরাজ। পঞ্চম ওভারের শেষ বলটি ‘রং ওয়ান’ করেন নুর। অর্থাৎ, তাঁর বল পিচে পড়ে ডানহাতি ব্যাটারের ভিতরের দিকে ঢোকার বদলে বাইরের দিকে যায়। সল্ট বলটি বুঝতে পারেননি। তিনি ব্যাট চালান। ব্যাটে-বলে হয়নি। বল যায় মহেন্দ্র সিংহ ধোনির কাছে। তার পরেই উইকেটের পিছনে বিদ্যুতের ঝলক।

সল্ট বুঝতেও পারেননি আউট হয়েছেন তিনি। কারণ, ক্রিজ় ছেড়ে তিনি বার হননি। তাঁর পা সামান্য উঠেছিল। সেই পা নামানোর আগেই ধোনি উইকেট ভেঙে দেন। লেগ আম্পায়ারের কাছে আউটের আবেদন করার সময় ধোনির মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সল্ট আউট। সতীর্থদের তিনি ইশারায় বোঝান, পা ক্রিজ় থেকে উঠেছিল। তখনই তিনি উইকেট ভেঙেছেন। তৃতীয় আম্পায়ারও রিপ্লে দেখে জানিয়ে দেন, সল্ট আউট হয়েছেন। পরে জানা যায়, মাত্র ০.০৯ সেকেন্ডে সল্টকে স্টাম্প আউট করেছেন ধোনি।

তিন নম্বরে নামা দেবদত্ত পাড়িক্কল ১৪ বলে ২৭ রান করে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের শিকার হন। কোহলি ছন্দে ছিলেন না। কয়েকটি বড় শট খেললেও অনেক ডট বল খেলেন তিনি। অবশেষে নুরের বলেই রাচিন রবীন্দ্রের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কোহলি। ৩০ বলে ৩১ রান করেন তিনি। উইকেট পড়লেও বেঙ্গালুরুর রান তোলার গতি কমেনি। তাতে বড় ভূমিকা অধিনায়ক পাটীদারের। অর্ধশতরান করেন তিনি। তবে তার নেপথ্যে চেন্নাইয়ের ফিল্ডারদের ভূমিকা কম নয়। এক বার দীপক হুডা, এক বার রাহুল ত্রিপাঠী ও এক বার খলিল আহমেদ তাঁর ক্যাচ ছাড়েন। সেটা কাজে লাগান পাটীদার। ৩২ বলে ৫১ রান করে আউট হন তিনি।

লিয়াম লিভিংস্টোন রান না পেলেও জিতেশ শর্মা ও টিম ডেভিড গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। বিশেষ করে ডেভিড। শেষ ওভারে স্যাম কারেনকে পর পর তিন বলে তিনটি ছক্কা মারেন তিনি। ফলে এক সময় যেখানে দেখে মনে হচ্ছিল, ১৮০ রানের মধ্যে বেঙ্গালুরুর ইনিংস শেষ হবে সেই ইনিংস ১৯৬ রান পর্যন্ত যায়। চেন্নাইয়ের হয়ে এই ম্যাচেও সফল নুর। চার ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তিনি।

চেন্নাইয়ের উইকেটে ১৯৭ রান তাড়া করা শক্ত। সেই কাজটা আরও শক্ত করে দিলেন বেঙ্গালুরুর পেসারেরা। জশ হেজ়লউড, ভুবনেশ্বর কুমার ও যশ দয়ালের সামনে সমস্যায় পড়ল চেন্নাইয়ের ব্যাটিং। টি-টোয়েন্টিতেও অভিজ্ঞতা কতটা দরকার তা দেখালেন হেজ়লউড, ভুবনেশ্বরেরা। দ্বিতীয় ওভারেই ত্রিপাঠীকে আউট করলেন হেজ়লউড। পর পর দু’ম্যাচে ব্যর্থ চেন্নাইয়ের নতুন ওপেনার। আগের ম্যাচে অর্ধশতরান করলেও এই ম্যাচে শূন্য রানে আউট হলেন অধিনায়ক রুতুরাজ। এক ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে চেন্নাইকে বড় ধাক্কা দেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার।

মিডল অর্ডারে আরও সমস্যায় পড়ল চেন্নাই। দীপক হুডা ও স্যাম কারেন স্কোরবোর্ড সচল রাখতে সমস্যায় পড়লেন। ডট বল খেলায় চাপ বাড়ছিল। ভুবনেশ্বরের বলে ৪ রান করে হুডা ও লিভিংস্টোনের বলে ৮ রান করে আউট হন কারেন। ৫২ রানে ৪ উইকেট পড়ে যায় ধোনিদের।

অপর প্রান্তে উইকেট পড়লেও একদিকে টিকেছিলেন রাচিন। আগের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি। কিন্তু এই ম্যাচে একা তাঁর পক্ষে কিছু করা সম্ভব ছিল না। দরকার ছিল সঙ্গীর। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে নেমে শিবম দুবে কয়েকটি বড় শট খেললেও রান তোলার গতি খুব বেশি বাড়েনি। পেসারদের পর স্পিনারেরাও ভাল বল করছিলেন। শিশির না পড়ায় বল ধরতে সমস্যা হচ্ছিল না। যত খেলা গড়াচ্ছিল তত চাপ বাড়ছিল চেন্নাইয়ের উপর। ৩০ বলে ৪১ রান করে যশ দয়ালের বলে রাচিন আউট হলে বড় ধাক্কা খায় চেন্নাই। সেই ওভারেই ১৯ রানের মাথায় শিবমকে আউট করেন দয়াল। ৮০ রানে ৬ উইকেট পড়ে যায় চেন্নাইয়ের।

শেষ ছ’ওভারে জিততে দরকার ছিল ১১০ রান। এই পরিস্থিতি থেকে চেন্নাইকে উদ্ধার করার ক্ষমতা ৪৩ বছরের ধোনির ছিল না। সেই জন্যই হয়তো আট নম্বরে ধোনির বদলে অশ্বিনকে নামায় চেন্নাই। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, হার মেনে নিয়েছে তারা। যতটা সম্ভব রান তোলার চেষ্টা করছিলেন জাডেজারা। যাতে নেট রানরেট কিছুটা ভাল হয়। বেঙ্গালুরু চেষ্টা করছিল, চেন্নাইকে অলআউট করার। বড় শট মারার বদলে দৌড়ে রান নেওয়ার দিকেই নজর ছিল জাডেজা ও অশ্বিনের। সেই চেষ্টাও বেশি ক্ষণ টেকেনি। লিভিংস্টোনের বলে ১১ রান করে আউট হন অশ্বিন।

২৮ বল বাকি থাকতে মাঠে নামেন ধোনি। হার নিশ্চিত জানার পরেও চিপকে দর্শকদের চিৎকারে কান পাতা যাচ্ছিল না। শেষ দিকে কয়েকটি বড় শটও মারেন তিনি। শেষ ওভারে ধোনির ব্যাট থেকে জোড়া ছক্কাও দেখা যায়। তাতে অবশ্য খেলার ফল বদলায়নি। শেষ পর্যন্ত ১৪৬ রানে শেষ হয় চেন্নাইয়ের ইনিংস। ধোনি ১৬ বলে ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন।

সংক্ষেপে
  • চলতি বছর আইপিএলের ১৮তম বর্ষ। ২০০৮ সাল থেকে শুরু হয়েছিল এই প্রতিযোগিতা। এখন এই প্রতিযোগিতায় খেলে মোট ১০টি দল। তাদের মধ্যেই চলে ভারতসেরা হওয়ার লড়াই।
  • গত বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। তিন বার এই ট্রফি জিতেছে তারা। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও চেন্নাই সুপার কিংস পাঁচ বার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, দিল্লি ক্যাপিটালস, পঞ্জাব কিংস ও লখনউ সুপার জায়ান্টস এখনও পর্যন্ত এক বারও আইপিএল জিততে পারেনি।
CSK RCB IPL

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}