বিনেশ ফোগাট। — ফাইল চিত্র।
আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে হেরে অলিম্পিক্সে রুপো হাতছাড়া হওয়ার পর মাত্র একটি ছবিতে নিজের হতাশার প্রকাশ করেছিলেন বিনেশ ফোগাট। শুক্রবার রাতে সমাজমাধ্যমে একটি লম্বা বার্তা দিলেন তিনি। তিনটি ছবিতে লেখা তাঁর প্রায় দু’হাজার শব্দের বার্তায় পরিষ্কার, বিনেশ আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসতে চান। শুধু তাই নয়, সম্ভব হলে খেলতে চান ২০৩২ সালের ব্রিসবেন অলিম্পিক্সেও।
নিজের বার্তার একদম শেষ প্যারায় বিনেশ লিখেছেন, “আমার কাছে বলার মতো অনেক কিছু আছে। তবে শব্দে সেগুলো বর্ণনা করা কখনওই যথেষ্ট হবে না। ঠিক সময়ে আমি আবার কথা বলব। মনে রাখবেন, ৬ অগস্টের রাত এবং ৭ অগস্টের সকালে আমরা হাল ছাড়িনি, প্রচেষ্টা থামাইনি এবং আত্মসমর্পণ করিনি। তবে সে দিন ঘড়ির কাঁটা থেমে গিয়েছিল। সময় সঠিক বিচার করেনি। আমার ভাগ্যেও হয়তো তাই-ই ছিল।”
এর পরেই তিনি লিখেছেন, “হয়তো আলাদা পরিস্থিতিতে আমি ২০৩২ সাল পর্যন্ত খেলতে পারব। কারণ, আমার মধ্যে লড়াই এবং কুস্তি সব সময় অটুট থাকবে। বলতে পারব না ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করে আছে। তবে এটা নিশ্চিত যে, আমি যা বিশ্বাস করি তার জন্য সর্বদা লড়াই চালিয়ে যাব।”
বিনেশের কথায় উঠে এসেছে এক বছর আগে দিল্লিতে মহিলা কুস্তিগিরদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে পথে নামার কথাও। তিনি লিখেছেন, “কুস্তিগিরদের প্রতিবাদের সময় ভারতের মহিলাদের সম্মানরক্ষা, জাতীয় পতাকার পবিত্রতা এবং মূল্যবোধ রক্ষা করার জন্য কঠোর লড়াই করছিলাম। যখন ২০২৩-এর ২৮ মে ভারতীয় পতাকার সঙ্গে নিজের ছবিগুলো দেখি, সেগুলো আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। আমার ইচ্ছা ছিল এই অলিম্পিক্সে ভারতের পতাকা উঁচুতে উঠুক। আমার কাছে এমন এক ভারতীয় পতাকার ছবি থাকুক যা সত্যি করে এই পতাকার মূল্যকে তুলে ধরে এবং তার পবিত্রতা ফিরিয়ে আনে। আমি ভেবেছিলাম, ভারতীয় পতাকার পবিত্রতা কতটা নষ্ট হয়েছে এবং কুস্তিগিরেরা কী পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, তা তুলে ধরতে পারব।”
নিজের বার্তায় অনেককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিনেশ। তবে সবচেয়ে বেশি করে লিখেছেন চিকিৎসক দিনশ পারদিওয়ালা এবং তাঁর কোচ উলার আকোসের কথা। ওজন কমাতে গিয়ে অসুস্থ হওয়ার সময় পারদিওয়ালাই বিনেশের চিকিৎসা করেছিলেন। তাঁকে নিয়ে বিনেশ লিখেছেন, “ডাঃ দিনশ পারদিওয়ালা ভারতীয় খেলাধুলোয় নতুন নাম নয়। আমার জন্য এবং অন্যান্য অনেক ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের জন্য তিনি কেবল একজন চিকিৎসক নন, ঈশ্বরের বেশে একজন দেবদূত। চোটের পরে যখন আমি নিজের উপর বিশ্বাস করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম, তখন তাঁর দায়বদ্ধতা, কঠোর পরিশ্রম এবং আমার প্রতি আস্থাই আবার আমাকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়েছিল। এক বার নয়, তিন বার (দু’টি হাঁটু এবং একটি কনুই) উনি আমার অস্ত্রোপচার করেছেন এবং আমাকে দেখিয়েছেন যে মানুষের শরীর কতটা শক্তিশালী হতে পারে। ওঁর কাজের প্রতি এবং ভারতের খেলাধুলোর প্রতি ওঁর দায়বদ্ধতা, মানবিকতা এবং সততা নিয়ে কেউ কখনও সন্দেহ করবে না। আমি তাঁর এবং তাঁর পুরো দলের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
কোচকে নিয়ে বিনেশ লিখেছেন, “উলার আকোসকে নিয়ে যা-ই লিখব, সবই কম হবে। মহিলাদের কুস্তির জগতে আমি তাঁকে সেরা কোচ, সেরা পথপ্রদর্শক এবং সেরা মানুষ হিসাবে পেয়েছি। যে কোনও পরিস্থিতি উনি শান্ত মনোভাব, ধৈর্য এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরিচালনা করতে পারেন। ওঁর অভিধানে অসম্ভব শব্দটি নেই। যখনই আমরা কুস্তির ম্যাটের উপরে বা বাইরে কোনও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, তখনই তিনি একটি পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুত থেকেছেন। একটা সময় ছিল যখন আমি নিজেকে খুব সন্দেহ করতাম। আমার লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলাম। উনি জানতেন আমায় ঠিক কী বলতে হবে এবং কী ভাবে আমাকে আমার পথে ফিরিয়ে আনতে হবে। উনি একজন কোচের চেয়েও বেশি কেউ ছিলেন, কুস্তিতে আমার পরিবারের মতোই। আমার জয় এবং সাফল্যের কৃতিত্ব কখনওই নিতে চাইতেন না। আমি যা-ই করি না, ওঁর আত্মত্যাগের জন্য কোনও রকম ধন্যবাদই যথেষ্ট হবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy