Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
T20 World Cup 2024

বিরাট-রোহিত উপন্যাস, ‘দুই পুত্রের’ বিশ্বজয়ের কাহিনির মুখবন্ধ লিখলেন বিশ্বজয়ী অধিনায়কের মা

বিশ্বকাপ জেতার পর এখনও দেশে ফিরতে পারেনি ভারতীয় ক্রিকেট দল। তার মধ্যেই ‘দুই পুত্রের’ ছবি সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নিয়েছেন রোহিত শর্মার মা। ‘দুই পুত্রের’ লেখা উপন্যাসে জুড়ে দিয়েছেন মুখবন্ধ।

picture of Virat Kohli Rohit Sharma

বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা। ছবি: এক্স (টুইটার)।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪ ১৮:৫৪
Share: Save:

রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি। দু’জনের ঝুলিতেই একটি করে বিশ্বকাপ ছিল। কিন্তু একসঙ্গে বিশ্বজয় করা হয়নি ভারতের অন্যতম দুই সেরা ব্যাটারের। ১৬ বছর একসঙ্গে খেলার পর বিশ্বকাপ জিতলেন তাঁরা। তাঁদের লেখা উপন্যাসে মুখবন্ধ জুড়ে দিলেন রোহিতের মা।

শনিবার বিশ্বকাপের রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের শেষ বল হওয়ার পর হাঁটু মুড়ে বসে পড়েছিলেন রোহিত। চারটে চাপড় মেরে মাটিতে চুমু খেয়েছিলেন ভারতীয় দলের অধিনায়ক। বিশ্বজয়ের মুহূর্তে রোহিত বার্বাডোজ়ের মাটিকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি। তার পর শুয়েই পড়লেন হাত-পা ছড়িয়ে। অন্য দিকে, জয়ের সঙ্গে সঙ্গে দৌড় শুরু করেছিলেন কোহলি। চোখে-মুখে উচ্ছ্বাসের বিচ্ছুরণ। এক নিমেষে উধাও ৭৬ রানের ইনিংসের ক্লান্তি। এক দৌড়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন বোলার হার্দিক পাণ্ড্যর কাছে।

বার বার ফাইনালে উঠেও ট্রফির নাগাল পাননি রোহিত, বিরাটেরা। দু’বার টেস্ট বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে এক দিনের বিশ্বকাপের ফাইনালেও হার। নিশ্চিত ক্ষত তৈরি হয়েছিল বুকের ভিতরে। হয়তো খানিকটা দগদগেও হয়ে গিয়েছিল বার বার আঘাতে। ২০ ওভারের বিশ্বকাপ তাঁদের সেই ক্ষতে আরামের প্রলেপ লাগিয়ে দিয়েছে।

ছলছল চোখ, মুখ ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছিল চিৎকার। জোরে, আরও আরও জোরে। শরীরের সব শক্তি দিয়ে চিৎকার করতে চাইছিলেন ভারতীয় দলের অধিনায়ক এবং তাঁর পূর্বসূরি। গায়ে সেঁটে যাওয়া ‘চোকার্স’ তকমা এক টানে ছিঁড়ে ফেলতে চাইছিলেন। খানিক পর নিজেকে সামলে নিয়ে রোহিত দৌড়লেন হার্দিকের দিকে। বরোদার অলরাউন্ডার তখন কাঁদছেন। আইপিএলের সমালোচনা, পারিবারিক জটিলতার মধ্যে থেকে উঠে আসা নায়ক বিহ্বল। রোহিত তাঁকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে নিয়েছিলেন। সেই হার্দিক, যিনি আইপিএলে রোহিতকে অনভ্যস্ত বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং করতে পাঠিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত প্রথম একাদশ থেকেই বাদ দিয়ে দেন। খেলিয়েছিলেন ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে। হার্দিককে কোলেও তুলে নেন অভিমান ভুলে।

Picture of Rohit Sharma

বিশ্বকাপ জয়ের পর মাঠে শুয়ে রোহিত। ছবি: এক্স।

অভিমান! বিশ্বজয়ের পর কি আর অভিমান পুষে রাখা যায়? এক দিকে রোহিত যখন আবেগ সংযত করতে পারছেন না বা করতে চাইছিলেন না, অন্য দিকে কোহলি তখন শিশুর মতো উচ্ছ্বাসে ভাসছেন। আনন্দ ভাগ করে নিতে চাইছিলেন সকলের সঙ্গে। মাঠ থেকেই ভিডিয়ো কলে কথা বলে নেন কাছের কারও সঙ্গে। কে ছিলেন অন্য প্রান্তে? অনুষ্কা শর্মা? টেলিভিশনের ক্যামেরা ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফ্রেমবন্দি করেনি।

কেউই বুঝতে পারছিলেন না ঠিক কী করা উচিত। আবেগে পিচের মাটি খেয়ে নেন রোহিত। কোহলি জাতীয় পতাকা হাতছাড়া করতে চাইছিলেন না। গায়ে জড়িয়ে নিয়ে ঘুরছিলেন মাঠে। লাফাচ্ছিলেন। সতীর্থদের সঙ্গে ভাঙড়াও নেচে নেন এক প্রস্থ। রোহিত আবার ২২ গজে ভারতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করেও শান্ত হতে পারছিলেন না। জাতীয় পতাকা এক বারে পুঁতে ফেলার চেষ্টা করলেন মাঠে। পারলেন না। হাল ছাড়লেন না। বিদেশের মাটি খুঁড়ে তেরঙা লাগিয়ে দিলেন।

Picture of Rohit Sharma

বার্বাডোজ়ের মাঠে জাতীয় পতাকা গাঁথছেন রোহিত। ছবি: এক্স।

তখনও বিশ্বকাপটা হাতে পাননি রোহিত, কোহলি। জয়ের উচ্ছ্বাসটা যেন সম্পূর্ণ হচ্ছিল না। সতীর্থ, কোচ, সাপোর্ট স্টাফ, রিজার্ভ হিসাবে যাওয়া রিঙ্কু সিংহ, খলিল আহমেদরাও তখন মাঠে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের মাঠের দখল নিয়ে নেন ভারতীয়েরা। এক ধারে বসেছিলেন জেতা ম্যাচ হেরে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারেরা। এডেন মার্করামেরা শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন রোহিত, কোহলিদের উৎসবের দিকে।

একটা বিশ্বকাপ বদলে দেয় কত কিছু। এমন সময় ঠিক কী করা উচিত? জানা নেই রোহিত, কোহলির কারও। দু’জনেই যখন প্রথম বার বিশ্বকাপ জিতেছিলেন, তখন তরুণ ছিলেন। সিনিয়র হিসাবে দায়িত্ব কী! শুধুই উচ্ছ্বাসে গা ভাসিয়ে দেওয়া। নাকি আরও কিছু কর্তব্য থাকে? দর্শকদের দিকে হাতজোড় করে কৃতজ্ঞতা জানান রোহিত। সতীর্থ থেকে সাপোর্ট স্টাফ প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানান। কোহলিও সকলকে হাত ধরে টেনে আনেন। উৎসবের আঙিনায় যেন কেউ বাদ না পড়ে যায়!

পর পর ফাইনালে হারের কষ্টটা এত দিন গলার মধ্যে দলা পাকিয়েছিল দু’জনেরই। আবেগের বিস্ফোরণে সেই কষ্টটা ক্যারিবিয়ান বাতাসের সঙ্গে মিশে যেতে চাইছিল। শুধু হারি না, আমরা পারিও— এই কথাই বোধ হয় চিৎকার করে বলতে চাইছিলেন তাঁরা। ১৬ বছর এক সঙ্গে খেলে একটা বিশ্বকাপ। একটা হলেও তো বিশ্বকাপ। কোহলি যেমন স্ত্রীকে ফোন করেছিলেন, তেমন রোহিতও ডাগ আউটে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলেন স্ত্রীকে। ধরবেন না কেন? ওঁদের সাফল্যে স্ত্রীদের অবদান, ত্যাগ কম নাকি। অনুষ্কা বা রিতিকা সাজদেরা হয়তো মাঠে লড়াই করেন না। স্বামীদের লড়াইয়ের শক্তি, অনুপ্রেরণা, সাহস, উৎসাহ তো দেন। তাঁরাই তো ব্যর্থতার দিনে নিকটতম সঙ্গী। সাফল্যের দিনে তাঁদেরই তো বুকে টেনে নেবেন।

ভারতীয় দলের সংস্কৃতি হল অধিনায়ক ট্রফি নিয়ে তুলে দেন তরুণদের হাতে। সরে যান এক পাশে। ভিকট্রি ল্যাপেও সামনে এগিয়ে দেওয়া হয় তরুণদের। বিশ্বকাপ জেতার পরও পিছনে থাকবেন অধিনায়ক। হতে পারে না। হতে দেননি কোহলি। তিনি রোহিতকে বলেছিলেন, ‘‘তোমারও ট্রফিটা ধরা উচিত। তোমার সামনে থাকা উচিত। তার পর আমরা ছবি তুলব।’’ তার পরেই ছবি তুলেছিলেন এক সঙ্গে। রোহিত-কোহলি পাশাপাশি। কোহলির হাতে বিশ্বকাপ, কাঁধে জাতীয় পতাকা। অধিনায়কের কাঁধে তাঁর কন্যা। এটাই তো শনিবারের সেরা ছবি। এই ফ্রেমটার আড়ালেই আছে ১৬ বছরের লড়াই, উত্থান, পতন। সতীর্থের সম্পর্ক ছাপিয়ে গড়ে উঠেছে বন্ধুত্ব। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন।

চ্যাম্পিয়নেরা বোধ হয় এমনই। অর্জন না করে থামতে জানেন না। আবার কারও জায়গাও আটকে রাখেন না। বিশ্বজয়ের পরেই দু’জনের অবসরের সিদ্ধান্ত। সেরা ব্যাটারদের টাইমিং তো এমনই হয়। বিশ্বকাপ ফাইনালের পর প্রতি মুহূর্তে একটা করে অধ্যায় রচনা করেছেন রোহিত এবং কোহলি। তৈরি করেছেন উপন্যাস। যার মুখবন্ধ লিখে দিলেন রোহিতের মা পূর্ণিমা শর্মা। তিনি সোমবার সমাজমাধ্যমে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। সেই ছবি— কোহলির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি। রোহিতের কাঁধে তাঁর মেয়ে। এই ছবির উপরে লেখা রয়েছে, ‘‘সর্বকালের সেরা দুই ক্রিকেটার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে।’’ ছবির নিচে তিনি লিখেছেন, ‘‘ওর কাঁধে মেয়ে। গোটা দেশ ওর পিছনে। পাশে ওর ভাই।’’ রোহিতের মায়ের শেষ লাইনটি ক্রিকেটপ্রেমীদের মুগ্ধ করেছে। যেখানে তিনি রোহিত এবং কোহলিকে ‘দুই ভাই’ বলে অভিহিত করেছেন। কোহলিকেও তিনি ছেলের মতোই দেখেন। ‘দুই ছেলে’কে নিয়ে তাঁর এই পোস্ট অল্প সময়ের মধ্যেই ভাইরাল হয়েছে।

রত্নগর্ভা মা। ছেলেদের কাঁদতে দেখে তিনি কি পেরেছিলেন চোখের জল আটকে রাখতে? নিশ্চিত আঁচলের খুঁটে চোখ মুছেছেন। ছেলেদের সমালোচনার দিনেও হয়তো চোখের জল ফেলেছেন লুকিয়ে। রোহিত, কোহলিরা বিশ্বকাপটা বুকে আঁকড়ে রাখছিলেন। মা-ও তো এত দিন সব ঝড় ঝাপটা থেকে আঁকড়ে রেখেছিলেন সন্তানদের। তিনিও রোহিত, কোহলিকে ছেড়ে দিলেন বিশ্বজয়ের উচ্ছ্বাসের ঝড়ে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy