দেশের সর্বোচ্চ আদালতের শুনানিতে বোর্ডে তাঁর ভবিষ্যত্ নিয়ে প্রশ্ন উঠুক, যতই বোর্ডে বিরোধীরা তাঁর বরাবরের অপসারণ নিয়ে নতুন তর্জন-গর্জন তুলে দিক, যতই ভারতীয় মিডিয়া তাঁর দিকে দাঁতনখ বার করে নতুন করে ঝাঁপিয়ে পড়ুক, নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন এতটুকু বিচলিত নন!
শ্রীনি বরং নিজের ভাগ্যাকাশের কালো মেঘ ওড়াচ্ছেন, গুরুনাথ মইয়াপ্পন নিয়ে সম্পূর্ণ হাত ধুয়ে ফেলছেন, প্রচারমাধ্যমকে প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ করে শোনাচ্ছেন, পারলে আমার বিরুদ্ধে একটা প্রমাণ বার করুন। রিপোর্ট পড়ে নিন!
শুক্রবার মুদগল রিপোর্টের ভিত্তিতে যে চার জনের নাম প্রকাশ্যে এসেছিল, তার মধ্যে শ্রীনিবাসনের নামও ছিল। যার পরপরই বিস্ফোরণ ঘটে ভারতীয় ক্রিকেটে। শশাঙ্ক মনোহর, ললিত মোদীদের মতো ঘোষিত শ্রীনি-বিরোধীরা তুলোধোনা করতে শুরু করেন তাঁকে, বাদ যায়নি দেশজ মিডিয়াও। মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বিরোধী ও সমালোচকদের পাল্টা দিয়ে রাখলেন মহাবিতর্কিত বোর্ড প্রেসিডেন্ট।
“মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট আমার বিরুদ্ধে কিছুই বলেননি। আমার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ আছে বলেও মনে হয় না। যদি থাকত, তা হলে অর্ডার অন্য রকম হত,” একটি সংবাদপত্রে পরিষ্কার বলে দেন শ্রীনি। আর এখানেই পাল্টা লাভাস্রোতের শেষ নয়। রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে বোর্ড সুপ্রিমো বলে দেন, “রিপোর্টটা আপনারা দেখে নিন না। কোর্টের কোনও পর্যবেক্ষণ কিন্তু আমার বিরুদ্ধে নেই। আমি নিশ্চিন্ত। আরে, কোর্ট যদি আমার বিরুদ্ধে দশ শতাংশও প্রমাণ পেত, তা হলে সরাসরি বলে দিত। আমি নিশ্চিত যে, তদন্ত চালিয়ে আমার বিরুদ্ধে কিছু পাওয়া যায়নি।”
শ্রীনির পক্ষ সমর্থনে রাতের দিকে কোনও কোনও বোর্ড কর্তা এটাও বলতে শুরু করলেন যে, শ্রীনিকে জেরা না করেই কী ভাবে তাঁর নাম প্রকাশ্য করে দিল সুপ্রিম কোর্ট? তাঁর বক্তব্যই শোনা হয়নি। অথচ অভিযুক্তের তালিকায় ফেলে দেওয়া হল। বলা হচ্ছে, রিপোর্টে বড়জোর শ্রীনির বিরুদ্ধে থাকতে পারে যে, চোখের সামনে কেলেঙ্কারি ঘটতে দেখেও তিনি নিশ্চেষ্ট ছিলেন। কিন্তু তিনি কেলেঙ্কারির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, গড়াপেটায় অভিযুক্ত এমন কোনও তথ্যপ্রমাণ রিপোর্টে নেই। কেউ কেউ এটাও বুঝে পাচ্ছেন না যেখানে ক্রিকেটারদের নাম বলা হল না। স্পর্শকাতর ব্যাপার বলে নাম কেটে রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে দু’পক্ষের আইনজীবীকে। সেখানে আইসিসি চেয়ারম্যানের নাম কী ভাবে বলে দেওয়া হল? শ্রীনিবাসন নামটা কি কম স্পর্শকাতর?
শনিবার রাতের মঞ্চটা যদি শ্রীনি নিয়ে নেন, তা হলে দুপুরের মঞ্চটা আবার নিল ভারতীয় বোর্ডের একটা সিদ্ধান্ত। আগামী ২০ নভেম্বর বোর্ড নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে তুমুল জলঘোলা চলছিল গতকালের শুনানির পর থেকে। এ দিন দুপুরে বিভিন্ন রাজ্য সংস্থাকে ফোনে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, আগামী মঙ্গলবার জরুরি ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। আপনারা চেন্নাই চলে আসুন। লিখিত ভাবে সংস্থাদের কিছু পাঠানো হয়নি, বলাও হয়নি বৈঠকের অ্যাজেন্ডা কী? জল্পনাও শুরু হয়ে যায় যে, তড়িঘড়ি বোর্ড বৈঠক কেন? শুধু কি নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে? না কি নির্বাচন ও বার্ষিক সভা দু’টোই পিছোচ্ছে?
বোর্ডের একাংশ বার্ষিক সভা পিছিয়ে দেওয়া নিয়ে গররাজি। তাদের বক্তব্য হল, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া যেতেই পারে। পরে বিশেষ সাধারণ সভা ডেকে সেটা করে নিলে চলবে। কিন্তু বার্ষিক সভা পিছনোর কোনও যুক্তি নেই। কিন্তু শ্রীনি শিবির শোনা গেল আবার চাইছে, নির্বাচন ও বার্ষিক সভা একসঙ্গে দু’টোই মাসখানেক পিছিয়ে দিতে। গত রাত পর্যন্ত যারা নিশ্চিত ছিল না, আদৌ নির্বাচন পিছনোর দরকার আছে কি না, যখন আদালত শ্রীনির নির্বাচন লড়া নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। কিন্তু শনিবার আইনজীবীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার পর শ্রীনি শিবিরের নাকি মনে হচ্ছে, ২০ নভেম্বরই নির্বাচনে শ্রীনি নেমে পড়লে তাঁর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট সেটাকে ভাল ভাবে না-ও দেখতে পারে। যতই কোর্ট স্পষ্ট করে কিছু না বলুক। তার চেয়ে ২৪ নভেম্বরের পরবর্তী শুনানির জন্য অপেক্ষা করা হোক। শোনা যাচ্ছে, মঙ্গলবারের জরুরি ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকও নাকি ডাকা আইনি জটিলতা এড়াতে। বোর্ড নির্বাচনের দিনক্ষণ যদি পাল্টাতে হয়, তা হলে ওয়ার্কিং কমিটি ডেকে করতে হবে। নইলে আইনি জটিলতায় পড়তে হতে পারে।
শ্রীনিবাসন তিনি কি করছেন? মঙ্গলবারের বৈঠকে যাচ্ছেন? এখনও পর্যন্ত যা খবর, যাচ্ছেন। তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে বৈঠকে থাকবেন শ্রীনি। যিনি নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ তো বটেই, জামাই গুরুনাথ মইয়াপ্পন নিয়েও হাত ধুয়ে ফেললেন।
বলে দিলেন, কারও দায়িত্ব তিনি নেবেন না। যে যা করেছে, তার কর্মফল তাকেই ভুগতে হবে। গুরুনাথ মইয়াপ্পন কিছু করে থাকলে, তাঁকে গিয়ে ধরতে হবে। গুরুনাথের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাতে হবে। শাস্তি দিতে হলে গুরুনাথ মইয়াপ্পনকে দিতে হবে। কিন্তু অন্য কারওর অপরাধে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনকে কাঠগড়ায় তোলা যাবে না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy