জুটি: ব্যাটে হার্দিক, বলে ক্রুনাল জেতালেন মুম্বইকে। ছবি: বিসিসিআই
মোটামুটি যে জায়গায় ক্রিস লিনের শরীরটা আছড়ে পড়ল জস বাটলারের ক্যাচ ধরার জন্য, তার আশেপাশেই ঘটেছিল ঘটনাটা। পাঁচ বছর আগে। মে মাসের এক রাতে।
সে দিন কোনও শরীর আছড়ে পড়েনি, কিন্তু রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিল মনটা। সে দিনের পর থেকে ‘বাদশা’ চলে গিয়েছেন নির্বাসনে। ওয়াংখেড়ের নিরাপত্তকর্মীর সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে। আইনি শাস্তি শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তিনি স্বেচ্ছা নির্বাসনে। তাঁর সাম্রাজ্যে তাঁরই নাইটরা খেলছে, অথচ সম্রাট অনেক দূরে।
কিন্তু তাও যে শাহরুখ খান রক্তাক্ত হচ্ছেন!
শোনা যায়, জনান্তিকে ‘বাদশা’ নাকি বলে থাকেন, আমাকে আর কিছু দাও বা না দাও, এই একটা ম্যাচে জয় দাও।’
জানা নেই, ঋষি ধবন শেষ ওভারে ডিপ স্কোয়্যার লেগে হার্দিক পাণ্ড্যের ক্যাচটা যখন ছাড়লেন, তখন শাহরুখ কোথায় ছিলেন? হয়তো বা ওয়াংখেড়ের ওপর দিয়েই উড়ে যাচ্ছিল তাঁর বিমান। কোনও এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে।
শাহরুখ মাঠে আসেননি, ভালই হয়েছে। এলে দেখতে হতো কী ভাবে তাঁর নাইটরা মুঠোয় চলে আসা ম্যাচ মুম্বইকে তুলে দিয়ে এলেন। ফাস্ট বোলারদের বদান্যতায়। একের পর এক ফুলটস বল করে শেষ দু’ওভারে ৩০ রানের কঠিন টার্গেট সহজ করে দিলেন অঙ্কিত-ট্রেন্ট বোল্ট। তার সঙ্গে অবশ্যই ফিল্ডারদের হাত। সূর্যকুমার যাদবের দু’টো হাত বোল্টের দ্বিতীয় বলটা বাউন্ডারি লাইনে আটকাতে পারল না। দু’বল পরেই ঋষি-র দু’টো হাত ছেড়ে দিল ওই মহার্ঘ ক্যাচ।
মুম্বই বনাম কলকাতার এই যুদ্ধের মর্ম বুঝতে অবশ্য ঋষি ধবনের মতো নতুনদের আরও অনেক দিন লাগবে। যে ম্যাচের তীব্রতা এতই বেশি যে, রোহিত শর্মা আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হওয়ার পরে নিজেকে সংযত রাখতে পারেন না। যে ম্যাচ দেখতে দেখতে শিশুর মতো লাফিয়ে ওঠেন সচিন তেন্ডুলকরও।
আসলে মুম্বই বনাম কলকাতা কখনওই স্রেফ ক্রিকেটে আটকে থাকেনি। সচিন বনাম সৌরভ দিয়ে শুরু হয়েছিল যে লড়াই তা তো কখনও শুধু ক্রিকেট হতে পারে না। সচিন বনাম সৌরভ শেষ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু আর একটা লড়াই যে চলছে।
শাহরুখ বনাম মু্ম্বই।
যে যুদ্ধে আবার হারতে হল বাজিগরকে। তার চেয়েও বড় আঘাত হতে পারে ক্রিস লিনের কাঁধের চোট। শেষ ৫-৭ ওভার মাঠে থাকতে পারেননি গম্ভীরও। কিন্তু তাঁর ক্র্যাম্প অত গুরুতর কিছু নয়। ওয়াংখেড়ে-তে এমনিতেই কেকেআরের সুখস্মৃতি বিশেষ কিছু নেই। এখানে মুম্বই ৫-১ স্কোরে এগিয়ে ছিল নাইটদের থেকে। যেটা আরও বাড়ল।
মুম্বই বোলার এবং গ্যালারির ‘ব্লু আর্মি’র জবাব হতে পারত লিন্মাদনা। লিন শুরুটা করেওছিলেন ভাল। মালিঙ্গার প্রথম ওভারে একটা স্ট্রেট ড্রাইভে চার। পরে হেলায় মিডউইকেটের ওপর দিয়ে ছয়। গুজরাত ম্যাচে রেকর্ড করে আসা কেকেআরের ওপেনিং জুটি রবিবার বেশি সময় টিকতে পারেনি। গম্ভীর যখন ১৯ রানে ফিরে যান, স্কোর বোর্ডে ৪.২ ওভারে ৪৪-১। কিন্তু তা-ও লিন তো ছিলেন। মুম্বই গর্জনকে চুপ করিয়ে দেওয়ার জন্য।
কিন্তু লিন্মাদনা দেখা যায়নি ওয়াংখেড়ে-তে। জসপ্রীত বুমরাহ-র একটা ফুল পিচ্ড বলে অ্যাক্রস খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে যান লিন। ২৪ বলে ৩২ করে।
লিন পারেননি, কিন্তু কেকেআর-কে লড়াই করার মতো জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন নাইট মালিকের আর এক প্রিয়পাত্র। মণীশ পাণ্ডের ৪৭ বলে ৮১ রান না হলে জয়ের এত কাছাকাছি যাওয়াই হতো না নাইটদের।
টস জিতে রোহিত শর্মার ফিল্ডিং নেওয়ার মধ্যে আশ্চর্যের কিছু ছিল না। দল পরিবর্তনও প্রত্যাশিত। লাসিথ মালিঙ্গা এবং হরভজন সিংহের অন্তর্ভুক্তি। তবে নাইট রাইডার্স কেন হঠাৎ পীযূষ চাওলাকে বসিয়ে অঙ্কিত রাজপুতকে খেলাতে গেল, তা নিয়ে একটা প্রশ্ন শুরু থেকেই উঠেছিল। বিশেষ করে যে পিচে গত আইপিএলে স্পিনারদের ইকনমি রেট ছিল মাত্র ৭.০০। অঙ্কিত প্রথম ৩ ওভারে ১৮ রান দিয়ে দু’টো উইকেট নিলেন ঠিকই, কিন্তু ১৯তম ওভারে বল করতে এসে ১৯ রান দিয়ে চলে গেলেন। দু’ওভারে ৩০ রানের টার্গেটটা এগারোয় এসে ঠেকল শেষ ওভারে।
মুম্বইয়ে এই নিয়ে ২৫ বছর কাটানো হয়ে গেল কিংগ খানের। কিন্তু এ রকম যন্ত্রণার রাত তিনি কি খুব বেশি দেখেছেন?
‘জিন্দেগি হার কিসি কো এক মওকা জরুর দেতি হ্যায় জিস মে ওহ উইনার বন সাকতা হ্যায়।’ বলেছিলেন তিনি নিজেই।
জীবন কবে আর শাহরুখ খান-কে ওয়াংখেড়েতে সেই সুযোগ দেবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy