Advertisement
E-Paper

ঢোকা গেলেও বেরিয়ে আসা যায় না সেই জগৎ থেকে, কারণ ভয় মানুষের মনের কোণেই ওত পেতে আছে

এ তিন কাহিনি দর্শকের অজানা নয়। তবু এমন কিছু বিষয় এ সিরিজ়ে উঠে এসেছে, যা চেনা পরিমণ্ডলকেও লহমায় অচেনা করে দিতে পারে।

A review of Mosharraf Karim starrer web series Adhunik Bangla Hotel

তিনটি ভিন্ন অবতারে মোসারফ করিম। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন

অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৪৬
Share
Save

হেমন্তের অপরাহ্ন কি সেটা? দিগ্বিদিক শূন্য মাঠ আর রুপোলি নির্জন পিচরাস্তায় একখানি বাস কিছু যাত্রীকে নিয়ে চলেছে। আবহে নজরুল অনুষঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের সুর…! মরুপ্রান্তর নয়, তবু যেন মরুবিচ্ছিন্নতার আভাস। এক দল অভিযাত্রীকে নিয়ে বাস চলেছে যেন কোনও অজানা মহাপ্রস্থানের দিকে। বাংলাদেশের ওয়েব সিরিজ় ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’-এর প্রথম পর্ব ‘বোয়াল মাছের ঝোল’-এর প্রারম্ভিক দৃশ্যই যেন দর্শকের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে যায়— “ফিরব বললেই ফেরা যায় নাকি…!”

তিন পর্বে বিন্যস্ত এই সিরিজ় আদতে তিনটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ‘না-ফেরা’র কাহিনি। এবং একই সঙ্গে তারা পরস্পরের সঙ্গে যোগসূত্রও বজায় রাখে। মৃত্যু নামে এক প্রহেলিকার যোগসূত্র, যা ক্রমে গড়ায় মৃত্যু-পরবর্তী ‘অ-সম্ভব’-এর দিকে। হ্যালোউইন আর ভূতচতুর্দশী, অল সোলস ডে ইত্যাদির মরসুমে শরিফুল হাসানের কাহিনি অবলম্বনে কাজ়ি আসাদের পরিচালনায় এই ‘হরর সিরিজ়’ তথাকথিত ‘হরর’কে ছাপিয়ে দু’কদম এগিয়ে যায়। এই যাত্রাপথ উপমহাদেশের যে কোনও প্রান্তের মানুষেরই পরিচিত। গ্রামশহর, মাঠপাথার তাদের চেনে। মানুষের কাম, ক্রোধ, লালসা, আগ্রাসন আর মনোগহিনে অন্তর্লীন আতঙ্কের তো আর দেশ-বিদেশ, কাঁটাতার হয় না। তাই, এ তিন কাহিনি দর্শকের অজানা নয়। তবু এমন কিছু বিষয় এ সিরিজ়ে উঠে এসেছে, যা চেনা পরিমণ্ডলকেও লহমায় অচেনা করে দিতে পারে।

A review of Mosharraf Karim starrer web series Adhunik Bangla Hotel

'বোয়াল মাছের ঝোল'-এ ভয় এসেছে বলে কয়েই। ছবি: সংগৃহীত

তিনটি স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবির কেন্দ্রে রয়েছে ‘ভয়’। আর তিনটি ছবির নামকরণে তিনটি খাবারের উল্লেখ। ‘বোয়াল মাছের ঝোল’, ‘খাসির পায়া’ আর ‘হাঁসের সালুন’। তিনটিই আমিষ পদ। তামসিক। ‘তামসিক’ শব্দের শিকড়ে রয়েছে ‘তমস’ তথা ‘তমসা’ শব্দটি। সাদা বাংলায় যার অর্থ, ‘অন্ধকার’। ‘মনান্ধকার’। সেই আঁধারেই বাস অবিশ্বাস, ভয়, ক্রোধ ও কামের মতো সব অমঙ্গলের। এ সত্য যে কোনও মানবগোষ্ঠীতেই চিরায়ত। তাই, এই তিন ছবি দেখতে বসে তাদের পরিণতি সম্পর্কে অনুমান মাথায় রেখেও থম হয়ে বসে দেখে যেতে হয়।

তাই এই সিরিজ় হয়তো নিছক ‘ভয়ের ছবি’ বা বলা ভাল ‘ভূতের ছবি’র থেকে কয়েক কদম এগিয়ে থাকে। অন্য যে বিষয়টি তিনটি ছবিকে এক সূত্রে গেঁথেছে, তা অভিনেতা মোশারফ করিমের উপস্থিতি। তিনটি ছবিরই কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন মোশারফ। এবং ভিন্ন তিন অবতারে।

প্রথম ছবি ‘বোয়াল মাছের ঝোল’-এ মুখ্য কুশীলব দু’জন— এক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং তাঁর এক প্রাক্তন ছাত্র। অধ্যাপকের নেশা মাছ ধরা এবং গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত ভৌতিক কাহিনি সংগ্রহ ও তা নিয়ে টুকটাক লেখালিখি। ছাত্রের আমন্ত্রণে অধ্যাপক পৌঁছচ্ছেন বোয়ালিয়া নামে এক প্রত্যন্ত গ্রামে। যে গ্রাম কার্যত আধুনিক জীবনপ্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন। ছবির গোড়াতেই রয়েছে সেই বাসযাত্রার ঝলক। যেখানে ডায়েরিতে কোনও কবিতা সংশোধন করতে দেখে অধ্যাপকের পাশে বসা যাত্রী নামার আগে কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে যায়— “শিখর ছেড়ে শিকড় ভজো।” এইখানেই যেন গোটা সিরিজ়ের ধ্রুবপদটি বাঁধা হয়ে যায়। ওয়াইড অ্যাঙ্গেলে যে ল্যান্ডস্কেপ এই ছবিতে বার বার উঠে এসেছে, তার সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে প্রকৃতি। ধু-ধু মাঠ, ঝাঁকড়ামাথা একানে গাছ, নিঃসঙ্গ নদী আর তার প্রেক্ষাপটে পাহাড়, দর্শকের বুকের খাঁচায় বুনে দেয় হা হা করা শূন্যতার বোধ। নৌকায় মাঝির রাতবিরেতের ভয়, বোয়ালিয়া নিয়ে গ্রামীণ মানুষের গুজব, তার পর নৌকা থেকে নেমে সেই প্রাক্তন ছাত্রের সঙ্গে দেখা, এক ঘোড়ায় টানা গাড়িতে চড়ে নিশুত বোয়ালিয়ায় পৌঁছনো…। এই যাত্রাপথেই দর্শক জেনে যান, অধ্যাপকের বাতিকের কথা, সেই প্রাক্তন ছাত্রের মুখ থেকে অধ্যাপকের ফিরে যাওয়ার অনিশ্চয়তার আলটপকা ইঙ্গিত, ছাত্রের মায়ের হাতের বোয়াল মাছের ঝোল খাওয়ার ইচ্ছা ও তা পুরণ করতে না পারায় ছাত্রের ঐকান্তিক লজ্জাবোধ— সব কিছুই যেন ইঙ্গিত করে এক অমঙ্গলের দিকে।

অবশেষে আসে সেই রাত্রিকালীন মাছধরার পর্ব। জমিয়ে বসে অধ্যাপক ছাত্রের কাছে শুনতে চান গ্রামীণ মানুষের ভয়ের গল্প। আর সেই সুবাদেই উঠে আসে বোয়ালিয়া গ্রামের নিজস্ব কাহিনি। মৃতদের কবর থেকে উঠে আসার গল্প। অধ্যাপক তাঁর চেনা যুক্তিতে বিচার করতে চান সেই কাহিনিকে। কিন্তু ছাত্র বাদ সাধে।

পূর্ণিমার চাঁদ, মেঘ, জলাশয়, দূরের পাহাড় তখন অ-পার্থিব। এখানে শহুরে ‘শিক্ষিত’ মানুষের যুক্তির ছুরি আর চামচে করে তুলে আনা ‘লেজেন্ড’ নিয়ে নাগরিক কলমে গল্প লেখার যাবতীয় জারিজুরি তুচ্ছ হয়ে যায়। ক্রমে ফুটে ওঠে এক নির্যস সত্যি— গ্রামের কাহিনিকে গ্রামের মানুষ জান দিয়ে রক্ষা করে। তাকে কিছুতেই ‘বাইরে’ যেতে দেওয়া যায় না। যেতে পারে না। চন্দ্রালোকিত অনৈসর্গিক রাতে একে একে এগিয়ে আসে সফেদ কাফন পরা ‘অ-মৃত’ মানুষের দল।

A review of Mosharraf Karim starrer web series Adhunik Bangla Hotel

'খাসির পায়া' সেই সব ভয়ের কথা বলে, মানুষের মনের গহিনে থম মেরে থাকে। ছবি: সংগৃহীত

সিরিজ়ের দ্বিতীয় ছবি ‘খাসির পায়া’র পরিমণ্ডল কিন্তু গ্রাম নয়। শহর। অ্যাপার্টমেন্ট। এক গরিষ্ঠ কেরানি অথবা লঘিষ্ঠ আধিকারিকের জীবনের বিভিন্ন রকম ভয় নিয়ে কাহিনি এগোয়। বজ্রপাতের আওয়াজকে মানুষটি যেমন ভয় পায়, তেমনই তার ভয় অ-পার্থিবের প্রতি। জাগতিক এবং অতিজাগতিক— এই দুই ভয়ের দোলাচলে তার দিন গুজরান হয়। তার সন্তান আর স্ত্রীর প্রতি যে মমত্ববোধ, তারও কেন্দ্রে কাজ করে ভয়। দফতরে চাকরি হারানোর ভয় নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে এক ভিখারি বালক তার কাছে দুশো টাকা চায়, খাসির পায়া খাবে বলে বায়না ধরে। নেই-আঁকড়া ভাবে বালকটি তার পিছনে লেগে থাকে। ক্রমাগত খাসির পায়া খাওয়ার জন্য বায়না করে, টাকা চায়। প্রথমে বারণ, পরে ধমকেও যখন কাজ হয় না, সে বালকটিকে এক থাপ্পড় কষিয়ে দেয়। শূন্য অথচ নিষ্ফল আক্রোশের দৃষ্টিতে বালক তাকিয়ে থাকে তার গমনপথের দিকে। ফ্ল্যাটে সে একা। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, দফতরের জটিলতায় সে যেতে পারেনি। নির্জন ফ্ল্যাটে সে আর তার স্ত্রীর রেঁধে যাওয়া খাসির পায়া। সেই খাবারে আবার মুখ দিয়ে যায় এক কালো বিড়াল। আতঙ্ক রূপান্তরিত হয় ফোবিয়ায়। খাওয়া মাথায় ওঠে। দমচাপা একাকিত্ব থেকে মুক্তি পেতে টিভি চলাতেই সেখানে ফুটে ওঠে ‘বোয়াল মাছের ঝোল’ ছবির ‘অ-মৃত’দের মিছিল। এক সময় ঘুমিয়েও পরে সে। ঘুমের মধ্যে হানা দেয় সেই বালক। খাসির পায়ার বদলে সে মানুষটির পা কেটে নিয়ে চিবোতে আরম্ভ করে। দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে ওঠে সে। পরদিন দফতরে গিয়ে এক কারচুপির হিসাব মেলাতে গিয়ে রাত হয়ে যায়। আবার সেএকা। একাকিত্বের নিবিড়তায় ঘুরেফিরে আসে খাসির পায়ার প্রসঙ্গ। এমন এক অবস্থাতেই বিভ্রম আর বাস্তবের মাঝে অন্ধকার দফতরে উদ্ভূত হয় খাসির পায়া খেতে চাওয়া সেই বালক-মূর্তি। নিজের মনের মধ্যে ঘনিয়ে আসা ভয়ের দাপটে মানুষটির পিঠ তখন দেওয়ালে গিয়ে ঠেকেছে। এমন সময়েই ঘটে ক্লাইম্যাক্স। কোন অভিধায় বাঁধা যায় এই কাহিনি আর তার দমবন্ধ করা চিত্রায়ণকে? সন্তানের বয়সি এক বালককে চড় মারার জন্য পাপবোধ, না কি তার মনে দীর্ঘ কাল ধরে বাসা বাঁধা ভয়ের দঙ্গল এসে গ্রাস করে চরিত্রটিকে? উত্তর খুঁজে পাওয়া কঠিন।

A review of Mosharraf Karim starrer web series Adhunik Bangla Hotel

'হাঁসের সালুন'-এর অন্তিম দৃশ্যে মৃতেরা উঠে আসে চেনা অবয়বেই। ছবি: সংগৃহীত

সিরিজ়ের তৃতীয় ও অন্তিম কাহিনি ‘হাঁসের সালুন’। এখানে মূল চরিত্রটি এক ভাড়াটে খুনির। কোনও রকম নীতিবোধে সে বাঁধা পড়ে নেই। খুন করতে তার হাত কাঁপে না। ঠোঁট কাঁপে না মিথ্যাভাষণ বা প্রবঞ্চনায়। একই সঙ্গে সে ক্ষুধার্ত এবং কামার্ত। একটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার পরেই সে খেতে চায় চালের রুটি দিয়ে হাঁসের মাংসের সালুন। সেই খাদ্যটির জোগাড় সে করে ফেলে এক নিঃসঙ্গ বিধবা আর তার যুবতী ও আকর্ষণীয়া মেয়েকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে। সেই প্রৌঢ়া আর তার মেয়েকে দিয়ে তার ঈপ্সিত পদগুলি রান্না করিয়ে খাওয়ার পর সে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে এবং মা-মেয়েকে হত্যাও করে নির্বিকার ভাবে। তার পর এগিয়ে যায় পরবর্তী বরাতের দিকে। এক রাজনীতিককে হত্যা করতে। হত্যার পর যখন তাকে ধাওয়া করেছে সেই রাজনীতিকের দলের লোকজন, প্রাণপণে মোটর বাইক চালিয়ে সে পৌঁছয় ‘আধুনিক বাংলা বোর্ডিং’ নামের এক অতিথিশালায়। আশ্রয় পেয়ে যখন সে ঘুমের তোড়জোড় করছে, তখন সেই বোর্ডিংয়ের মালিক তাকে আমন্ত্রণ জানায় এক ‘জলসায়’। নিতান্ত গ্রামীণ প্রেক্ষাপ্ট নিমেষে বদলে যায় এক ‘আধুনিক’ মাস্কারেড পার্টিতে। সেখানে পৌঁছে সে দেখতে পায়, মুখোশের অন্তরালে সেই সব মানুষেরা সেখানে হাজির, যাদের সে এক সময় হত্যা করেছিল। পালানোর রাস্তা খুঁজতে গিয়েও ব্যর্থ হয় সে। বোর্ডিংয়ের মালিক তাকে এক সাইনবোর্ড দেখায়, যেখানে লেখা— “এখানে ঢোকা যায়, বেরোনো যায় না”।

এই তিন কাহিনি দেখতে বসে দর্শকের মাথায় ওই বাক্যটিই গেঁথে যায়— এখানে ঢোকা যায়, বেরোনো যায় না। তিনটি ছবিই সেই ‘পাপ’টির দিকে ইঙ্গিত রাখে, যাকে খ্রিস্টীয় পরম্পরায় বলা হয় ‘গ্লুটনি’। তিনটি আমিষ পদ, তার প্রতি ধাবমান লোভ এবং বিবমিষা, যুগপৎ এক গ্রহণ-উদ্গীরণের পরিমণ্ডলকে তৈরি করে বটে, কিন্তু সেই লালসা-বীতস্পৃহার জগৎটি যেন এক অলাতচক্র। সেখানে ঘুরপাক খেতে হয় এক বার প্রবেশ করলেই। এখান থেকেই কি জন্ম নেয় ভয়? আর ফিরতে না-পারার আতঙ্ক? পরিচালক কাজ়ি আসাদ দক্ষতার সঙ্গেই বুনেছেন সেই ক্রমাগত পাক খেতে থাকা ভয়ের গল্পকে। এর আগে বাংলাদেশ থেকে এ পারে উড়ে এসেছে ‘পেটকাটা ষ’, ‘ঊনলৌকিক’-এর মতো সিরিজ়। একটিতে যদি নাগরিক শিখর ছেড়ে পরম্পরার শিকড়ের মধ্যে আদিমতম অনুভূতিটির অনুসন্ধান শুরু হয়, তবে অন্যটি যুক্তি আর যুক্তি-অতীত জগৎটির ঠাসবুনোটকে তুলে ধরেছিল। ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’-এ সেই দুই অভিপ্রায়ের মিশেল লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ক্যামেরা (বিশেষত, ওয়াইড অ্যাঙ্গেলের ব্যবহার), সম্পাদনা, আলো-নির্মাণ থেকে চিত্রনাট্য— কোথাও যেন এতটুকু বাহুল্য নেই। নেই উচ্চকিত বাজনা আর বীভৎস মুখ দেখিয়ে ভয়ের অবতারণার চেষ্টা। সংযত হাতে তোলা তিনটি ছবির সম্পদই হল পরিচালক, চিত্রনাট্যকারের সংযম। এ জিনিস বাংলা ভাষার ছবিতে বড় একটা দেখা যায় না। কাজ়ি আসাদ এবং শরিফুল তা সম্ভব করে তুলেছেন।

A review of Mosharraf Karim starrer web series Adhunik Bangla Hotel

এর পরে যে বিষয়টি বাকি থাকে, তা অভিনয়। মোশারফ করিম নামক মানুষটি আবারও দর্শককে দাঁড় করিয়ে দিলেন পাথরের মূর্তিতে পরিণত করে। প্রথম ছবিতে ছাত্রের ভূমিকায় তাঁর সংলাপ কথন থেকে অঙ্গ সঞ্চালন, সর্বত্র রহস্য তৈরির যে প্রয়াস, তাতে তিনি যাবতীয় মাপকাঠিকে ভেঙে দিয়েছেন। সঙ্গে অবশ্যই যোগ্য সঙ্গত করেছেন গাজ়ি রাকায়েত। দ্বিতীয় ছবিতে মোশারফ একা। তাঁর মুখের প্রতিটি পেশির সঞ্চালনে খেলা করে যায় ‘ভয়’ নামক অনুভূতিটির যাবতীয় রং ও বেরং। আর তৃতীয় ছবিতে ভাড়াটে খুনির চরিত্রে তাঁর নিস্পৃহ নিষ্ঠুরতা থেকে ক্রমে ভয়ের রাজত্বে প্রবেশের অভিঘাত প্রায় নজির হয়েই থাকল, বলা যায়। বাকি অভিনেতাদের মধ্যে তৃতীয় ছবিতে নিদ্রা দে নেহা নজর কাড়েন। তবে আবার বলতে হয়, এ ছবি মোশারফ করিমময়। সিরিজ় শেষ হলে দর্শক টের পান, অজস্র তাস রয়েছে এই মানুষটির আস্তিনে, যা দিয়ে অসম্ভব সব জাদু দেখানো বাকি এখনও। এ পার বাংলায় যখন অতিপ্রাকৃত সিরিজ়ে ভূতগ্রস্ত নায়িকার চোখের মণি সাদা করে, ‘ঝ্যাং’ আর ‘ঘং’ শব্দ বাজনা বাজিয়ে ‘তান্ত্রিক হরর’ নামে এক উদ্ভটের উপাসনা চলছে, তখন ও পারের এই কাজ যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, পর্দায় ‘ভয়’-এর উপস্থাপনায় কোনও বাহুল্যের প্রয়োজন পড়ে না। ভয় তো দর্শকের মনের মধ্যেই রয়েছে। তাকে বিনা আড়ম্বরেই বার করে আনা যায়। এই বাহুল্যহীনতাই এই সিরিজ়ের সম্পদ। সিরিজ় দেখা শেষ হওয়ার পরেও সেই চেনা এবং একই সঙ্গে অচেনা নিরাভরণ জগৎ পিছু নেয় দর্শকের। একলা ঘরে নিঝুম রাতে দর্শক হাড়ে হাড়ে টের পান, এই বিশেষ জগৎটিতে ঢোকা যায়, কিন্তু সহজে বেরোনো যায় না। সিরিজ়টি দেখা যাবে চরকি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে।

Mosharraf Karim OTT Bengali web series

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।