Why Eastern Europe is economically backward from its Western parts dgtl
Europe Economy
পাশাপাশি প্রাচুর্য আর গরিবি, আয়ের তফাত আকাশ-পাতাল! ‘ধনীদের স্বর্গরাজ্য’ কি আদৌ ধনী?
আর্থিক দিক থেকে পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। যার নেপথ্যে একাধিক কারণের কথা বলেছেন বিশ্লেষকেরা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৪৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
এ যেন প্রদীপের নীচের নিকষ কালো অন্ধকার। প্রাচুর্যের মধ্যেই চরম দারিদ্র। যা অদৃশ্য সীমারেখায় দু’ভাগে ভাগ করছে আস্ত একটা মহাদেশকে। এমন এক মহাদেশ, যাকে ‘ধনীদের স্বর্গরাজ্য’ বলেই জেনে এসেছে তামাম দুনিয়া।
০২২০
বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম মহাদেশ হল ইউরোপ। যার পশ্চিম অংশে ঐশ্বর্যের ছড়াছড়ি। অথচ পূর্ব দিকের দেশগুলির অর্থনৈতিক অবস্থা মোটেই ভাল নয়। যা সেখানকার সার্বিক উন্নয়নের উপরেও প্রভাব ফেলেছে।
০৩২০
মহাদেশটির দুই দিকের দেশগুলির মাথাপিছু গড় আয়ের দিকে চোখ রাখলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্রসমূহের মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ ৬৮ হাজার ডলার। পূর্ব দিকের দেশগুলির ক্ষেত্রে এই অঙ্ক মাত্র ১৪ হাজার ডলারেই থেমে গিয়েছে।
০৪২০
পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন, নরওয়ে, ইটালি, স্পেন ও পর্তুগাল উল্লেখযোগ্য। অন্য দিকে রাশিয়া, ইউক্রেন, পোল্যান্ড, জর্জিয়া, সার্বিয়া, চেক রিপাবলিক-সহ বলকান এলাকার সমস্ত দেশ পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত।
০৫২০
মাথাপিছু জাতীয় আয়ের (গ্রস ন্যাশনাল ইনকাম বা জিএনআই) নিরিখেও পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে পশ্চিম ইউরোপ। সেখানকার লন্ডন, প্যারিস, বার্লিন, রোম বা বার্সেলোনার মতো শহরকে মূলত উচ্চ আয়ের বাসিন্দাদের আবাসস্থল হিসাবে গণ্য করা হয়।
০৬২০
মাথাপিছু আয়ের নিরিখে পূর্ব ইউরোপে আবার দু’ধরনের মানুষের দেখা মেলে। প্রথমটি হল মধ্যবিত্ত শ্রেণি। আর দ্বিতীয় শ্রেণিতে রয়েছেন গরিবেরা। এখানকার দেশগুলিতে কাজের সুযোগও পশ্চিমের তুলনায় অনেকটাই কম।
০৭২০
বিশেষজ্ঞদের কথায়, অর্থনীতির নিরিখে অদৃশ্য একটি সীমারেখায় ইউরোপ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে রয়েছে। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ৭৯ বছর পরেও যার এতটুকু বদল হয়নি।
০৮২০
এর নেপথ্যে মূল কারণ হিসাবে বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত রাশিয়ার উত্থানকে দায়ী করেছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। ১৯৪৫ সালের পর স্ট্যালিন জমানায় পূর্ব ইউরোপের অধিকাংশ দেশকে সরাসরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় মস্কো।
০৯২০
ওই সময়ে রুশ সোভিয়েত সঙ্ঘে যোগ দেয় প্রায় সমস্ত বলকান রাষ্ট্র। ওই এলাকার বাকি দেশগুলির মধ্যেও ছড়িয়ে ছিল কমিউনিস্ট ভাবাদর্শ। ফলে সমগ্র পূর্ব ইউরোপ জুড়ে সাম্যবাদী অর্থনীতি প্রসার লাভ করে।
১০২০
এই অর্থনীতির সবটাই ছিল রাষ্ট্র দ্বারা পরিচালিত। ফলে আলাদা করে মুনাফা ঘরে তুলতে পারতেন তা শিল্পপতিরা। যে কারণে নতুন কিছু করার ইচ্ছাটাই একরকম মরে যায় তাঁদের। যার জেরে এখানকার আর্থিক অবস্থায় কখনওই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসেনি।
১১২০
অন্য দিকে, পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলি বরাবরই উদারনৈতিক গণতন্ত্র এবং পুঁজিবাদের পীঠস্থান হিসাবে পরিচিতি পেয়ে এসেছে। করের বিনিময়ে মুনাফার অর্থ ঘরে তোলার সুযোগ থাকায় এখানকার শিল্পপতিদের ঐতিহ্যগত ভাবে পণ্য উৎপাদনে মেতে থাকতে দেখা গিয়েছে।
১২২০
দ্বিতীয়ত, পূর্ব ইউরোপের পোল্যান্ড, ইউক্রেন ও বেলারুশের ভূপ্রকৃতি সমতল হওয়ায় বার বার এই দেশের উপর আক্রমণ চালিয়েছে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলি। বৈদেশিক হামলার সর্বাধিক শিকার হয়েছে পোল্যান্ড। আর সাম্প্রতিক সময়ে ২০২২ সালের ২৪ মে থেকে ইউক্রেনে সেনা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া।
১৩২০
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি যুদ্ধবিধ্বস্ত হওয়ায় সেখানকার অর্থনীতির উপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি বলকান এলাকার দেশগুলি আবার খাড়াই পাহাড়ে ঘেরা। ফলে সেখানে শিল্প উপযোগী পরিকাঠামো গড়ে তোলা খুবই কঠিন।
১৪২০
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর থেকে পূর্ব ইউরোপে বার বার সংঘাত দেখা গিয়েছে। এখানকার রাষ্ট্রগুলিতে রাজনৈতিক অস্থিরতাও সাংঘাতিক। এই এলাকায় এক দেশ ভেঙে একাধিক নতুন রাষ্ট্র তৈরির নজির রয়েছে। উদাহরণ হিসাবে যুগোস্লাভিয়ার কথা বলা যেতে পারে।
১৫২০
পূর্ব ইউরোপ বার বার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় সেখানে শরণার্থী সমস্যাও মারাত্মক। যুগোস্লাভিয়া ভেঙে যাওয়ার সময়ে লাখ লাখ মানুষ ইউরোপের অন্যত্র চলে যান। এর ফলে সেখানে দক্ষ কর্মীর অভাব তৈরি হয়, যা শিল্পের বিকাশের অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি শর্ত।
১৬২০
পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল সামুদ্রিক রাস্তা। এই এলাকার উত্তরে বাল্টিক সাগর এবং পশ্চিমে রয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর। আর ভূমধ্যসাগর, কাস্পিয়ান সাগর ও কৃষ্ণসাগর রয়েছে এই রাষ্ট্রগুলির দক্ষিণে।
১৭২০
এই ভূপ্রাকৃতিক সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ষোড়শ শতক থেকেই সমুদ্র অভিযানে নেমেছিল পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্রসমূহ। কয়েক বছরের মধ্যেই ব্রিটেন, ফ্রান্স ও স্পেনের উপনিবেশ আফ্রিকা ও এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
১৮২০
পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির এই ঔপনিবেশিক শাসন চলেছে প্রায় ২০০ বছর। ফলে সেখান থেকে লুট করে নিয়ে যাওয়া যাবতীয় সম্পদ দিয়ে উনিশ এবং বিশ শতকে নিজেদের শহরগুলিকে সাজিয়ে ফেলে তারা। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প, কৃষি থেকে শুরু করে অন্য সমস্ত ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি করে এই সমস্ত দেশ।
১৯২০
একটা সময়ে বিশ্বের ৪০ শতাংশ সম্পদের মালিকানা ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং স্পেনের হাতে। সমুদ্রকে কাজে লাগিয়ে সুবিশাল অটোমান সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল তুরস্কও। স্থলভাগ দিয়ে ঘেরা হওয়ায় এই সুবিধা পূর্ব ইউরোপের অধিকাংশ দেশই পায়নি।
২০২০
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিকে আটলান্টিক বা ভূমধ্যসাগরে আসার জন্য বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রণালী ব্যবহার করতে হয়। যার জন্য মোটা টাকা নিয়ে থাকে পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্রসমূহ। এই বিষয়টির সুদূরপ্রসারী ছাপও এর অর্থনীতিতে দেখা গিয়েছে।