Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

দশ উইকেটে জিতে শুরু করলাম রে

গুজরাত লায়ন্সের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগের দিন টিম হোটেলে বসে দু’টো কথা বলেছিলেন কুলদীপ যাদব। এক, ফ্লাইট করানো তিনি বন্ধ করবেন না। তা সে উল্টো দিকে যতই ম্যাকালামের মতো ব্যাটসম্যান থাকুক। দুই, শাহরুখ খান তাঁর কাছে প্রেরণার অন্য নাম। তাঁর প্রিয় কিংগ খানের সামনে ভাল কিছু করে দেখাতে চান তিনি।

মধুর সমাপ্তি: রব নে বনা দি জোড়ি। যুগলবন্দি: দুই ওপেনার মিলেই তুলে দিলেন জয়ের রান। গৌতম গম্ভীর ৭৬, ক্রিস লিন ৯৩। ছবি: বিসিসিআই।

মধুর সমাপ্তি: রব নে বনা দি জোড়ি। যুগলবন্দি: দুই ওপেনার মিলেই তুলে দিলেন জয়ের রান। গৌতম গম্ভীর ৭৬, ক্রিস লিন ৯৩। ছবি: বিসিসিআই।

কৌশিক দাশ
রাজকোট শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৫০
Share: Save:

বৃহস্পতিবার দুপুরে টিম হোটেলে বসে যে টাক মাথার ছেলেটার সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তিনি যে এতটা নৃশংস হতে পারেন, ভাবার কোনও জায়গা ছিল না।

অস্ফুটে একবার বলছিলেন নিজের আক্ষেপের কথা। ‘‘জানেন, আইপিএল আর বিগ ব্যাশের মধ্যে কোনটা আমার বেশি ভাল লাগে? বিগ ব্যাশ।’’ অবাক হয়ে পরের প্রশ্নটাই ছিল, কেন? ক্রিস লিন ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, ‘‘বিগ ব্যাশে যে আমি ওপরের দিকে ব্যাটিং করার সুযোগ পাই। আইপিএলে পাই না।’’

সেই আক্ষেপ যে মিটবে আর এমন ভাবে মিটবে, তা কে জানত! প্রয়াত পঙ্কজ রায় একটা কথা খুব বলতেন। টি-টোয়েন্টি যুগে যে কথাটা ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে। ‘‘কোনও কোনও ব্যাটসম্যান আছে, যারা বোলারকে কুচি কুচি করে কিমা করতে খুব ভালবাসে। তাদের হাতে পড়লে আর রক্ষা থাকে না বোলারদের।’’

শাহরুখ ‘বাদশা’ খান যখন রাজকোটে পা রাখলেন, তার মিনিট ৫-১০ এ দিক ও দিকে ‘বাইশ গজের বাজিগর’ হওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন তাঁর এক তরুণ নাইট। কুলদীপ যাদব তখন তিন ওভারের মধ্যে ফিরিয়ে দিয়েছেন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা গুজরাত লায়ন্সের দুই ব্যাটসম্যানকে— ব্রেন্ডন ম্যাকালাম এবং অ্যারন ফিঞ্চ। আর শাহরুখ যখন ছোটছেলে আবরামকে নিয়ে স্টেডিয়ামে এলেন, গুজরাত ভাল জায়গায়। ১৮৩-৪।

রাজকোটের রুক্ষ্ম ভূমিতে পা দেওয়ার আগে সর্ষের ক্ষেতে প্রেম করে এসেছেন শাহরুখ। টুইট করেছেন, ‘‘লেহরাতে ক্ষেত, লেড়কিয়া, লস্‌সি তে লাভ ইন পঞ্জাব।’’ অনুষ্কা শর্মার সঙ্গে তাঁর নতুন সিনেমার শ্যুটিং সেরে। প্রেমের মঞ্চ থেকে ক্রিকেট তাঁকে এক ধাক্কায় নামিয়ে আনল এক খুনে পটভূমিতে। যেখানে রক্ত ঝরল অভাগা বোলারদের, কুচি কুচি হয়ে কিমা হয়ে গেলেন গুজরাতের ধবল কুলকার্নি, মনপ্রীত গোনি, ডোয়েন স্মিথরা। ‘কসাই’ সেখানে অস্ট্রেলিয়ার লিন (৪১ বলে অপরাজিত ৯৩) তো বটেই। মারলেন ছ’টা বাউন্ডারি ও আট ছক্কা। কলকাতা অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরও পিছিয়ে ছিলেন না (৪৮ বলে অপরাজিত ৭৬ রান)।

এ বারের আইপিএল শুরুর আগে শাহরুখ বলেছিলেন, ‘‘দশ বছরে অনেক কিছু বদলেছে। অধিনায়ক বদলেছে। টিম বদলেছে। শুধু একটা জিনিস বদলায়নি। কেকেআর ভক্তদের আবেগ, কেকেআর ভক্তদের পাগলামি।’’

আবির্ভাবেই বাজিমাত বাদশার: ম্যায় হুঁ না: নাইটদের প্রথম ম্যাচেই ছেলেকে
নিয়ে হাজির শাহরুখ খান। দল উপহার দিল দুরন্ত জয়। ছবি: বিসিসিআই।

ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে যখন কিংগ খান মাঠে নেমে মিনি ভিকট্রি ল্যাপ দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর একটা দিনের কথা মনে পড়লে খুব অবাক হওয়ার থাকবে না। সে দিনটা ছিল প্রথম আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচ। কেকেআরের প্রথম ম্যাচ। ব্রেন্ডন ম্যাকালাম নামের এক নাইটের ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার ম্যাচ। করব...লড়ব...জিতব রে... স্লোগান যে দিনটা ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল আইপিএলের দুনিয়াকে।

ক্রিস লিন কিছুটা হলেও সেই দিনটাতে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন নাইটদের। সে দিন ম্যাকালামের সঙ্গী ছিল এক বাঁ-হাতি ওপেনার কাম অধিনায়ক। এ দিনও লিনের সঙ্গী আর এক বাঁ-হাতি ওপেনার কাম অধিনায়ক! কে জানে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও শুক্রবার রাতে ফিরে গেলেন কি না তাঁর ফেলে আসা নাইটদের সেই সংসারে! কে বলতে পারে, কেকেআর প্রথমে ব্যাট করলে ম্যাকালামের সেই ইনিংস হয়তো ছাপিয়েই যেতেন লিন।

৬ ওভারে ৭৩ আর ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ১১৬ উঠে যাওয়ার পরে ম্যাচের ভাগ্য বলে দেওয়ার জন্য কোনও গনৎকারের প্রয়োজন ছিল না। শুধু দেখার ছিল কতগুলো রেকর্ড শুক্রবার রাজকোটের মাঠে ভেঙে চুড়ে যায়। তা গেলও খারাপ না। কোনও উইকেট না হারিয়ে ১৮৪ রান তুলে টি-টোয়েন্টির বিশ্বরেকর্ড করার পাশাপাশি পাওয়ার প্লে-তে যে কোনও আইপিএলের নিরিখে সবচেয়ে বেশি রান তুলল নাইটরা। ৬ ওভারে ৭৩। লিনের ১৯ বলের হাফসেঞ্চুরিটা রেকর্ডের খাতায় ঢুকে গেল। কেকেআরের ইনিংসের দ্বিতীয় ৫০ রান এল ২.৫ ওভারে। যেটা আর একটা রেকর্ড। গম্ভীর-লিনের জুটিতে উঠে গেল ১৮৪ রান। অবশ্যই নাইটদের হয়ে যে কোনও উইকেটে সর্বোচ্চ রান।

আর দশ উইকেটে জেতার অভিজ্ঞতা? সেটা কোনও কোনও টিমের আছে বটে, কিন্তু এত নৃশংস ভাবে, এত খুনে মেজাজে? মনে হয় না। এটা রেকর্ড বইয়ে হয়তো থাকবে না। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীদের মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ভিডিও রেকর্ডিংটাই তো যথেষ্ট।

দশ বছরের আইপিএলে শাহরুখের হুঙ্কার ছিল— দশ কি দহর, আমি কেকেআর!

দশ মাথার হুঙ্কারটা শুরুতে দু’টো মাথা থেকে এল। কিন্তু তার তীব্রতায় তৃতীয় দিন থেকেই আইপিএল কেঁপে গেল।

অতীতে ফিরে যাওয়ার দিনে সেই পুরনো স্লোগানটা ভীষণ ভাবে মনে পড়ে যাচ্ছে— করব, লড়ব জিতব রে...

স্কোরকার্ড

গুজরাত লায়ন্স ১৮৩-৪

কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৮৪-০

গুজরাত লায়ন্স

জেসন ক পাঠান বো চাওলা ১৪

ম্যাকালাম এলবিডব্লিউ কুলদীপ ৩৫

রায়না ন. আ. ৬৮

ফিঞ্চ ক সূর্য বো কুলদীপ ১৫

কার্তিক ক সূর্য বো বোল্ট ৪৭

স্মিথ ন. আ. ০

অতিরিক্ত ৪

মোট ১৮৩-৪

পতন: ২২-১ (জেসন, ৩.১), ৭২-২ (ম্যাকালাম, ৮.১), ৯২-৩ (ফিঞ্চ, ১০.২) ১৭৯-৪ (কার্তিক, ১৯.৫)।

বোলিং: বোল্ট ৪-০-৪০-১, চাওলা ৪-০-৩৩-১, নারাইন ৪-০-৩৩-০,
ওক‌্স ৩-০-৩৫-০, কুলদীপ ৪-০-২৫-২, পাঠান ১-০-১৫-০।

কলকাতা নাইট রাইডার্স

গম্ভীর ন. আ. ৭৬

লিন ন. আ. ৯৩

অতিরিক্ত ১৫

মোট ১৮৪-০

বোলিং: প্রবীণ ২-০-১৩-০, ধবল ২.৫-০-৪২-০, গোনি ২-০-৩২-০,
কৌশিক ৪-০-৪০-০, স্মিথ ১-০-২৩-০, জাকাতি ৩-০-৩০-০।

ম্যাচের সেরা লিন: ৪১ বলে ৯৩ নাইট রাইডার্স জিতল ১০ উইকেটে

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy