দিল্লি ক্যাপিটালসের ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
কথায় বলে ‘দিল্লি অভি দূর হ্যায়’। এ বারের আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের অবস্থাও অনেকটা তেমনই। প্লে-অফে ওঠার রাস্তা ক্রমশ কঠিন হচ্ছে। পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই হেরে গিয়েছে তারা। বাকি রয়েছে ন’টি ম্যাচ। কোচ রিকি পন্টিং বলে দিয়েছেন, ন’টি ম্যাচের মধ্যে আটটিতে জিততেই হবে। কিন্তু এমন কঠিন পরিস্থিতি কেন হল দিল্লির? ঋষভ পন্থ দলে ফিরে এসেছেন। তার পরেও কেন ভুগতে হচ্ছে দলকে?
গত বারের আইপিএলে ১০ দলের মধ্যে ন’নম্বরে শেষ করেছিল দিল্লি। সে বার পন্থ ছিলেন না। অধিনায়ক পন্থের না থাকা সমস্যা তৈরি করেছিল। কিন্তু এ বারে তিনি ফিরেছেন। কিন্তু হারের সরণি থেকে বার হতে পারেনি দিল্লি। এখনও পর্যন্ত দিল্লি যে পাঁচটি ম্যাচ খেলেছে তাতে বার বার দলের ভারসাম্য না থাকা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। পন্থের নেতৃত্বে খেলা দিল্লি দলে ব্যাটারের সংখ্যা কম। আবার বোলারও সেই মানের নয়। এক জন কেউ চোট পেলেই সমস্যা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। ঘরোয়া ক্রিকেটারেরাও নজর কাড়তে ব্যর্থ হচ্ছেন।
ব্যাটিংয়ে দিল্লির প্রধান ভরসা ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল মার্শ এবং ঋষভ পন্থ। কোনও ম্যাচে তাঁরা তিন জন একসঙ্গে রান না পেলে দিল্লিকে বাঁচানোর মতো কেউ থাকছেন না। দিল্লি হ্যারি ব্রুককে দলে নিয়েছিল। কিন্তু তিনি আইপিএল খেলতে আসেননি। সমস্যা হয়ে যায় দিল্লির। দলে শাই হোপ আছেন। কিন্তু তাঁকে খেলাতে গেলে অলরাউন্ডার মার্শ অথবা ওয়ার্নারের মতো ক্রিকেটারের মধ্যে এক জনকে বসাতে হবে। সেটা সম্ভব নয়। বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি এক সময় দিল্লির হয়ে খেলতেন। তখন যদিও দলের নাম ছিল দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। মনোজ বললেন, “দিল্লির মূল সমস্যা ওদের বিদেশি ক্রিকেটারেরা। স্টাবস ছাড়া আর কেউ ধারাবাহিক ভাবে রান পাচ্ছেন না। সেই কারণে ভুগতে হচ্ছে গোটা দলকে।”
চারটি ম্যাচ খেলে ফেললেও কোনও ব্যাটার বড় রান পাচ্ছেন না। পন্থ, ওয়ার্নার, ট্রিস্টিয়ান স্টাবস, পৃথ্বী শ-দের মধ্যে কেউই এখনও ২০০ রানের গণ্ডি পার করতে পারেননি। লোয়ার অর্ডারে ব্যর্থ অক্ষর পটেলও। বরং সুযোগ পেয়ে অভিষেক পোড়েল কিছু ম্যাচে রান করেন। কিন্তু তিনি এখনও দলে নিয়মিত নন। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে সুযোগ পাচ্ছেন।
দিল্লি দলে ছ’জন উইকেটরক্ষক। পন্থ নিয়মিত উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু এ ছাড়াও অভিষেক, রিকি ভুঁই, কুমার কুশাগ্র, হোপ এবং স্টাবস রয়েছেন। নিলামের সময় দিল্লি জানত না পন্থ খেলতে পারবেন কি না। সেই কারণেই একাধিক উইকেটরক্ষককে দলে নিয়েছিল তারা। এ বার পন্থ দলে আসায় এত জন উইকেটরক্ষকের সুযোগ পাওয়া কঠিন হয়েছে। তাঁদের ব্যাটার হিসাবে খেলানো হচ্ছে। এমন যুক্তি যদিও মানছেন না মনোজ। তিনি বললেন, “পন্থ খেলতে না পারলেও দলে এক জন উইকেটরক্ষকের জায়গা হত। খুব বেশি হলে দলে দু’জন উইকেটরক্ষক রাখলেই হয়। সেই জায়গায় এত জনকে রাখার কোনও মানে হয় না।”
কঠিন পরিস্থিতি বোলারদেরও। দিল্লি দলে স্পিন বিভাগ সামলানোর জন্য রয়েছেন কুলদীপ যাদব এবং অক্ষর পটেল। কিন্তু কুলদীপের চোট রয়েছে। তিনি কবে খেলতে পারবেন এখনও জানে না দিল্লি। কুলদীপ বা অক্ষরের মানের কোনও স্পিনার দলে নেই। ফলে স্পিন বিভাগ দুর্বল হয়ে গিয়েছে পন্থের দলের।
পেসারদের মধ্যে রয়েছেন অনরিখ নোখিয়ে, ইশান্ত শর্মা, খলিল আহমেদ, মুকেশ কুমারের মতো বোলার। কিন্তু নোখিয়ে ফর্মে নেই। তিনি রান দিয়ে ফেলছেন। ঝাই রিচার্ডসনকে একটি ম্যাচে খেলানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনও উইকেট নিতে পারেননি। ভরসা খলিল এবং মুকেশ। তাঁরা এখনও পর্যন্ত নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তাঁদের উপর দলের ভরসা দেখা যাচ্ছে না। বরং ইশান্তের উপর বেশি ভরসা দেখাচ্ছে দল। তিনি রান দিয়ে ফেলছেন। পেসারদের মধ্যে কাউকেই তেমন ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে না। সেই সুযোগে দিল্লির বিরুদ্ধে কলকাতা নাইট রাইডার্স তোলে ২৭২ রান, আবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স তোলে ২৩৪ রান। ফলে ব্যাট হাতে আর কিছু করার থাকছে না। এত রানের বোঝা মাথায় নিয়ে ম্যাচ বার করতে পারছেন না পন্থেরা।
ক্রিকেটের বাইরেও কি কোনও সমস্যা দিল্লি দলে প্রভাব ফেলছে? এমন ইঙ্গিত রয়েছে রবিন উথাপ্পার কথায়। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার বলেন, “দিল্লি ভারতীয় ক্রিকেটারদের উপর ভরসা দেখায় না। দলে অনেক ভাল ভারতীয় ক্রিকেটার থাকলেও বিদেশিদের উপর বেশি নির্ভর করে ওরা।” অর্থাৎ ম্যানেজমেন্টকে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তিনি। ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যদিও আইপিএল শুরুর অনেক আগে থেকেই ক্যাম্প শুরু করে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে বেশি কিছু ক্রিকেটারকে এ বারে দিল্লি তৈরিও করেছে। কিন্তু অভিষেক ছাড়া এখনও কেউ তেমন ভাবে নজর কাড়তে পারেননি।
গাড়ি দুর্ঘটনার ১৫ মাস পর মাঠে ফিরেছেন পন্থ। তাঁকে নেতৃত্বও দিতে হচ্ছে। ব্যাট হাতে রানও করতে হচ্ছে। সেটা সমস্যা তৈরি করছে। দ্রুত রান করার চাপ মাথায় নিয়ে কখনও উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসছেন পন্থ। সেটার সমালোচনা করেছেন বীরেন্দ্র সহবাগ। তিনি বলেন, “পন্থ ভাল খেলছে। কিন্তু ও উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসছে। ওকে ক্রিজ়ে থাকতে হবে। পন্থ থাকলে শতরান পাবে। ও ভাল ব্যাট করছে। স্ট্রাইক রেটও ভাল। কিন্তু ক্রিজ়ে থাকতে হবে। আরও দায়িত্ব নিতে হবে।” মনোজ যদিও উচ্ছ্বসিত পন্থের প্রত্যাবর্তনে। তিনি বললেন, “এমন একটা দুর্ঘটনার পর আবার মাঠে ফিরে আসাটাই বিরাট ব্যাপার। ও রানও করছে। ভয় পাচ্ছে না। নিজের জন্য খেলছে না, দলের জন্য ব্যাট করছে। পন্থকে আমরা যে ভাবে খেলতে দেখতে অভ্যস্ত ছিলাম, ও সে ভাবেই খেলছে।”
পাঁচটি ম্যাচে হারের পর পন্টিং বলেছিলেন, “আমাদের কাছে এখন এটা ন’ম্যাচে প্রতিযোগিতা। ওই ন’ম্যাচের মধ্যে আটটি জিততেই হবে। সোজা হিসাব।” দিল্লির পরের ম্যাচ ১২ এপ্রিল। লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে খেলতে নামবে দিল্লি। সেই ম্যাচ থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে চাইবেন পন্থেরা। দিল্লি ক্যাপিটালসের লক্ষ্য এখন ‘দিল্লি’র কাছাকাছি পৌঁছনোর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy