‘সরকারি আনাজ’ (১৪-৩) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে লিখি, বিগত কয়েক বছরে এই রাজ্যের আলুচাষিদের বিস্তর লোকসান হয়েছে। যদিও সাধারণ মানুষ বাজার থেকে চড়া দামে আলু কিনেছেন। আসলে চাষি ও সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে থাকা ব্যবসায়ীরা মুনাফা আত্মসাৎ করেছেন, আর চাষি আলুর সহায়ক মূল্য পাননি। এ বারে অন্য সমস্যা। আলুর সহায়ক মূল্য সরকার ধার্য করেছে কেজি প্রতি ন’টাকা। এই মূল্য পেতে চাষিকে বিস্তর ঝামেলা পোহাতে হবে। যে-হেতু আলুর বাজারদর মোটামুটি ভাবে সরকারি মূল্যের সমান, তাই চাষি সেই ঝামেলা পোহাতে যাবেন কেন? খেত থেকেই ব্যবসায়ীদের সরাসরি বিক্রি করে দেবেন চাষ-করা আলু। তাতে চাষির হয়তো আর্থিক ক্ষতি হবে না, বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে না, তবে ক্ষতি হবে সাধারণ গৃহস্থের। এবং তখন সেই আলু সরকারের নির্ধারিত ন্যায্য মূল্যে বাজারে মিলবে না। কারণ, চাষির থেকে সরাসরি কেনা আলুর বাজারদর ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করবেন ব্যবসায়ীরা। আজ যে আলু খুচরো বাজারে ১৫ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে, নিশ্চিত যে পুজোর সময় সেই আলু কিনতে হবে কমপক্ষে ৪০ টাকা কেজি দরে। এমতাবস্থায়, সাধারণ মানুষকে রেহাই দিতে চাষি যাতে সহজেই সহায়ক মূল্যে সরকারকে তাঁর ফসল বিক্রি করতে পারেন, সেই ব্যবস্থার প্রচলন জরুরি।
প্রসঙ্গত, শুধুমাত্র আলু নয়, এ বছর অধিক ফলনের জন্য টমেটো চাষিদেরও বিরাট লোকসান হয়েছে। যেখানে প্রতি কেজি টমেটো চাষে খরচ পড়েছে দশ টাকা, সেখানে পাইকারি বাজারে চাষি ওই টমেটোর দাম পেয়েছেন কেজি প্রতি ২-৩ টাকা। তাই অনেক চাষি মাঠ থেকে টমেটো তোলেননি, সেগুলো মাঠেই নষ্ট হয়েছে। এতে সার্বিক ভাবে গ্রামীণ অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে। বলা বাহুল্য, এই ক্ষতি আটকাতে আলুর মতো অন্যান্য আনাজও সরকারের তরফে চাষির থেকে সহায়ক মূল্যে কিনে বাজারে ন্যায্য দামে বিক্রি করা দরকার। এর জন্য প্রয়োজন আনাজ সংরক্ষণ কেন্দ্র, যা ছোট চাষিদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়া সম্ভব নয়। ফলে এক দিকে উৎপাদিত ফসলের দাম চাষি পাচ্ছেন না, তা মাঠে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। অন্য দিকে, ক্রেতা চড়া দামে আনাজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, এক সময় হরিণঘাটা মিট স্টল থেকে মাংস মিলত। তার পর তা বাংলা ডেয়ারি হয়ে যায়। সেখানেও দুধ থেকে শুরু করে প্যাকেটজাত মাছ, মাংস মেলে। আবার আনাজের ক্ষেত্রে ‘সুফল বাংলা’ মানুষের হাতে সস্তায় বাজার তুলে দিয়ে জনপ্রিয় হয়েছে। এ বার আসছে ন্যায্য মূল্যে মাছের দোকান। জানা গিয়েছে, দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে রাজ্যের নানা প্রান্তে ৩৪টি আউটলেট দিয়ে পথ চলা শুরু করবে সুফল বাংলা মৎস্য প্রকল্প। ২০টি আউটলেট নতুন করে তৈরি করা হবে। কয়েকটি জায়গায় সুফল বাংলার স্থায়ী আনাজ বিক্রয় কেন্দ্রে গড়ে উঠবে এই ‘সুফল বাংলা মৎস্য বিপণি’।
অনস্বীকার্য যে, নাগরিক সুবিধার্থে বাজারে সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকাটা বিশেষ জরুরি। অন্যথায় অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং চড়া দামে পণ্য বিক্রি করবেন। যার জেরে সাধারণ মানুষের উপর আর্থিক চাপ বাড়বে।
কুমার শেখর সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি
চাষির সঙ্কট
‘সরকারি আনাজ’ শীর্ষক সম্পাদকীয়টি পড়লাম। এই সহায়ক মূল্য পেতে চাষিকে নথিপত্র দেখাতে হবে। হিমঘরে আলু সংরক্ষণের স্লিপ সংগ্রহ করতে হবে সরকারি দফতর থেকে। নিজের খরচে হিমঘরে আলু পৌঁছেও দিতে হবে। বর্তমানে বাজার দর যে-হেতু সরকারি দরের প্রায় সমান, তাই চাষি বাড়তি ঝামেলা নিতে নারাজ। খেত থেকেই আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীকে। একেবারে বাস্তব সত্য।
প্রথমত সরকার ন’টাকা কিলো দর বেঁধে দিয়ে চাষিদের উপকার করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁর ক্ষতিই করল। কারণ, সরকার যদি আলু মাঠ থেকে সরাসরি চাষির কাছ থেকে তুলে নিত, তা হলে ঠিক ছিল। এখন ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেয়ে যাবেন। সরকার যদি ন’টাকা কিলো ঘোষণা করে নানা ফিরিস্তির কথা বলে, অর্থাৎ নথিপত্র দেখানো, হিমঘরে স্লিপ সংগ্রহ করা, নিজের খরচে আলু হিমঘরে পৌঁছনো ইত্যাদি, তা হলে সমস্যা বাড়বে। এর উপর হিমঘরে আগের তুলনায় ভাড়ার পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে।
এত সব জটিলতার কারণে স্বাভাবিক ভাবেই ন’টাকার চেয়ে দু’-এক টাকা কম দামে হলেও চাষি ব্যবসায়ীকে বিক্রি করে দিচ্ছেন মাঠেই। এর ফলে চাষির লাভ পাওয়া তো দূরের কথা, মূলটুকুও উঠছে না। যেমন, সরকার যখন ধানের দাম বেঁধে দেয়, তখন সরকারের দামের থেকে বিভিন্ন স্থানীয় বাজার ও রাইস মিল দাম দেয় তার থেকে অন্তত দু’-তিনশো টাকা কুইন্টালে কম। বেশির ভাগ চাষি স্থানীয় বাজার, মিল ও আড়তে বিক্রি করতে বাধ্য হন। কারণ, কিসান মান্ডিতে নিয়ে যাওয়ার ভাড়া, কাগজপত্র করানো— এত সব ঝামেলা এড়িয়ে গিয়ে কম দামেই তিনি সাধারণত বিক্রি করে দেন। সেই ধানই স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মান্ডিতে সরকারি দামে বিক্রি করেন আবার রাইস মিলেও পাঠান। ফলে চাষিরা লাভবান খুব কমই হন।
আলুর ক্ষেত্রেও তাই হবে। শুধু দাম বাঁধলে হবে না, তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ও পরিকল্পনা চাই। বিভিন্ন সময়ে সুফল বাংলার মাধ্যমে আনাজ বিক্রি করার ব্যবস্থা হয়, সেটা কতটুকু? সরকার যদি চাষিদের থেকে যে কোনও ফসল তার উৎপাদন খরচের দেড়গুণ দামে কেনে এবং তা মজুত করে সুলভে জনগণকে বিক্রির ব্যবস্থা করে, তবেই চাষি উপকৃত হবেন, জনগণও সস্তায় পাবেন। যাকে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য বলা হয়। সে দিকে কোনও সরকার যাচ্ছে না, এটাই ভাবার বিষয়। সার, বীজ, কীটনাশক, সেচের খরচ ও অন্যান্য খরচ বছর বছর বাড়ছে। এগুলো যদি চাষি সস্তায় পেতেন, তা হলে হয়তো কিছুটা সুরাহা হত। অনেক সময়ই বেশি দামে চাষি এ সব কিনতে বাধ্য হন। অথচ, তিনি যখন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ফসল ফলান, তার লাভজনক দাম পান না। ঋণ নিয়ে চাষ করতে হয়, ফসল হলে সেই ঋণ শোধ করতে পারেন না। এই হল বাস্তবচিত্র।
বিদ্যুৎ সীট, জগদল্লা, বাঁকুড়া
ঝরা পাতা
বসন্তের শেষ গ্রীষ্মের শুরুতে চলছে পাতা ঝরার মরসুম। পর্ণমোচী গাছ ইতিমধ্যেই তার পুরনো পাতা ঝেড়ে ফেলে নবপল্লবে সেজে উঠছে। জঙ্গল থেকে গ্রামবাংলার বিভিন্ন প্রান্তে এই ঝরা পাতার স্তূপ জমে থাকছে গাছের তলায়, যা কালের নিয়মে পচে গিয়ে সার হিসাবে গাছেরই খাবার হয়ে উঠবে। কিন্তু কিছু অসাধু বা অ-জ্ঞানী মানুষ অবৈজ্ঞানিক ভাবে সেই ঝরা পাতার স্তূপে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে মাঝে মাঝেই। তার ফলে এক দিকে যেমন বড়সড় আগুন লাগার ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকছে, ঠিক তেমনই এর ফলে বাস্তুতন্ত্রে মানুষের সহ-বাসিন্দা প্রাণীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভীষণ ভাবে। নানা পশু ও পাখি বাসস্থানহারা হচ্ছে জঙ্গলে। গ্রামগঞ্জের ক্ষেত্রে সাপ, বেড়ালরা সমস্যায় পড়ছে, হচ্ছে ব্যাপক বায়ুদূষণও। তাই এই অবৈজ্ঞানিক কাজকর্ম বন্ধ করতে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান বাড়ানো হোক অবিলম্বে। দরকারে কঠোর ব্যবস্থা করুক বন দফতর। পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের আরও দায়িত্ববান হয়ে উঠতে হবে।
সন্দীপন সরকার, পাল্লা রোড, পূর্ব বর্ধমান
পার্থেনিয়াম
নদীর ধারে, পুকুর পাড়ে, রাস্তার ধারে, জমির পাশে ইদানীং পার্থেনিয়াম গাছ খুব বেড়ে গিয়েছে, যা জমির উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। এর রেণু মানুষের শরীরে নানা রোগও সৃষ্টি করতে পারে। পরিবেশের ক্ষতি না করে নিরাপদে যাতে গাছগুলো বিনষ্ট করে দেওয়া হয়, তার জন্য প্রশাসনিক উদ্যোগ প্রার্থনা করছি।
মঞ্জুশ্রী মণ্ডল, তারকেশ্বর, হুগলি
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)