নিউজিল্যান্ডের স্টাম্প উপড়ে অশ্বিনকে পাশে নিয়ে গদা তুললেন কোহালি। ইনদওরে মঙ্গলবার। ছবি: রয়টার্স।
মঙ্গলবারটা সর্বতো ভাবেই এ দেশে ছিল জয়োৎসবের দিন! সেটা রামচন্দ্রের রাবণ-বধের হোক, বা মা দুর্গার অসুর নিধনের হোক, কিংবা ইনদওরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে টেস্ট সিরিজে ভারতের হোয়াইটওয়াশ করাই হোক।
শেষেরটা অবশ্য আজ দশেরা তথা বিজয়া দশমীর দিনেই ঘটবে কি না তা নিয়ে সকালের দিকে সামান্য একটা খচখচানি ছিল হোলকার স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে। বিশেষ করে গতকালের খেলার শেষ লগ্নে বিরাট কোহালি বিপক্ষকে সুযোগ পেয়েও ফলো অন না করিয়ে নিজেরা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামায়। কিন্তু আজ তৃতীয় তথা শেষ টেস্টের চতুর্থ দিনের সকালে মুরলী বিজয়কে আউট হওয়ার সময় ক্লান্ত দেখালেও তার পর থেকে বাকি সময়টা মাঠে যেন একটা দলই খেলছে দেখাচ্ছিল। যার নাম টিম ইন্ডিয়া। আগের দিনের আহত ও অবসৃত ওপেনার গৌতম গম্ভীর ক্রিজে ফিরে এসে কয়েকটা শটে বোঝালেন, কেন কেকেআর ক্যাপ্টেনকে ভারতীয় ক্রিকেটের একজন নাছোড় ব্যাটসম্যান বলা হয়ে থাকে। মাত্র ষোলো-সতেরো ঘণ্টা আগের কাঁধের চোট সামলে গম্ভীর প্রত্যাবর্তন টেস্টেই করে ফেললেন তার টেস্ট জীবনের দ্বিতীয় দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি (৫৬ বলে ৫০)। ‘‘দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা পজিটিভ ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করেছি। যাতে বিপক্ষকে আরও এক বার অল আউট করার জন্য আমাদের বোলারদের হাতে অনেক বেশি ওভার তুলে দিতে পারি,’’ ৩২১ রানে ম্যাচ জিতে উঠে সাংবাদিক সম্মেলনে বলছিলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি।
গত তিন বছরে অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পরে ঘরের মাঠে ভারতের এটা বিপক্ষকে তৃতীয় বার হোয়াইটওয়াশ করা। কোহালির যে প্রসঙ্গে মন্তব্য, ‘‘নিউজিল্যান্ডকে এখানে হোয়াইটওয়াশ করার জন্য চেয়েছিলাম আমাদের বোলারদের হাতে এমন একটা রান তুলে দিতে যাতে ওরা চতুর্থ ইনিংসে যত পারে পরীক্ষানিরীক্ষা করুক। এক বারের জন্যও যাতে নেতিবাচক বোলিং করার দরকার না পড়ে। সারাক্ষণ শুধু আক্রমণ আর আক্রমণ।’’ রবিচন্দ্রন অশ্বিনের নেতৃত্বে সেই বোলিংয়ে এতটাই আক্রমণের ঝাঁঝ আর স্পিনের ছোবল ছিল যে, ৪৭৫ রানের টার্গেট পেয়ে ১৫৩-তে লুটিয়ে পড়েন কেন উইলিয়ামসনেরা। চতুর্থ দিনে পিচে বল যখন ঘোরা শুরু করেছে, তখন ব্যাটসম্যানদের যেটা একমাত্র বাঁচার রাস্তা, সেই পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছিলেন উইলিয়ামসন আর টেলর জুটি। কিন্তু সেটা সামান্য সময় কার্যকর হল। কারণ, এর ফলে এই সিরিজে নিজের বোলিং লাইন প্রায় নিখুঁত করে তোলা অশ্বিনের উইকেট তোলার কাজটা তাতে আরও যেন সহজ হয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর সাতটা উইকেটের চারটে বোল্ড-এর হিসেবই যার প্রমাণ।
তিন টেস্টে ২৭ উইকেট নেওয়া অশ্বিনের পারফরম্যান্স নিয়ে তাঁর অধিনায়কের মন্তব্য, ‘‘টার্নিং পিচেও স্পিনারকে বলটা ভাল করতে হয়। কেবল স্পিন সহায়ক পিচেই টার্ন পাওয়া যায় এমন কোনও কথা নেই। স্পিন বোলাররা কতটা কব্জি আর কাঁধকে ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারল ডেলিভারির সময়, সেটাও খুব বড় ফ্যাক্টর। তার পরে বাকিটা পিচের ব্যাপার।’’ অশ্বিনের কৃতিত্ব বোঝাতে গিয়ে কোহালি এর পরে যোগ করেন, ‘‘নাগপুরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমরা যখন নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছিলাম, ওদের স্পিনারদের হঠাৎ উঁচুমানের স্পিনার দেখিয়েছিল। সেই একই স্পিনাররা তো এই সিরিজেও খেলল, কেন তাদের কাউকে আমরা বেশি উইকেট নিতে দেখলাম না? আমাদের বোলাররা কিন্তু যে কোনও পিচে উইকেট তুলতে পারে। আমাদের নিজেদের ক্ষমতার উপরে বিশ্বাস আছে। পিচের উপর বিশ্বাস করার দরকার নেই আমাদের।’’
শুধু কি অশ্বিন? পূজারার পাল্টে যাওয়া ব্যাটিং স্টাইল নিয়েও মুখ খোলেন এ দিন কোহালি। পূজারার সেঞ্চুরি যে তাঁর অধিনায়ককে কতটা বেশি স্বস্তি দিয়েছে সেটা বোঝাতে গিয়ে কোহালি বলেন, ‘‘পূজারাও বোলারের মাথার উপর দিতে তুলে লফটেড স্ট্রেট ড্রাইভ নিচ্ছে, এটাই তো মাঠে আমাদের ছেলেদের নিজেদের পূর্ণ প্রকাশ করার সেরা উদাহরণ।’’
সোজা কথায়, ঘরের মাঠে ১৩ টেস্টের তিনটে গেল। ফল ভারতের অনুকূলে ৩-০। বাকি আরও দশটা। এর পরের অতিথি ইংল্যান্ড। এবং তাদের জন্য যথেষ্ট সতর্কবার্তা রেখে দিল বিরাট কোহালির ভারত!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy