য়ুকিকে তাতানোর যুদ্ধে আনন্দ অমৃতরাজ। রবিবার নয়াদিল্লিতে।
রবিবারের সকাল ন’টা। ডিএলটিএ-র গ্লাস হাউসের ভিআইপি ব্রেকফাস্ট লাউঞ্জে লিয়েন্ডার পেজের সঙ্গে দেখা হতে হেসে বললেন, ‘‘একটা স্কুপ দিচ্ছি। আজ প্রথম রিভার্স সিঙ্গলসে ওরা অ্যাডাম পাভলাসেককে খেলাবে কি না সকালেও অনেকক্ষণ ভেবে শেষমেশ ভেসেলিকেই নামাচ্ছে। যার মানে ভেতরে ভেতরে চাপে আছে চেকরা। গতকাল ডাবলসেও রসোলকে প্রায় খেলিয়েই দিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে অ্যাডামকে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।’’
এবং পরপর দু’দিন চেক প্রজাতন্ত্রের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যে কতটা ঠিক সেটা ডেভিস কাপের এই ওয়ার্ল্ড গ্রুপ প্লে-অফ টাইয়ে প্রমাণিত। শুক্রবার দিল্লির প্রচণ্ড গরমে বেহাল জিরি ভেসেলি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই গোটা আবহের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে স্ট্রেট সেটে য়ুকি ভামব্রিকে হারিয়ে শেষ তিন বছরে দু’বারের ডেভিস চ্যাম্পিয়নদের ওয়ার্ল্ড গ্রুপে রেখে দিলেন। আর অনতিক্রম্য ১-৩ স্কোরলাইনে পিছিয়ে ভারতের অবস্থা ‘আসছে বছর আবার হবে’ গোছের। টানা চার বছর চলছে সোমদেবদের তীরে এসে তরি ডোবার কাহিনি। এ বার তো সম্মানজনক ২-৩ করারও সুযোগ হল না। ভরদুপুরের দাবদাহে নিয়মরক্ষার শেষ ‘রাবার’ (সোমদেব বনাম রসোল) দু’দেশের নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেনরা না খেলার ব্যাপারে সহমত হওয়ায় শেষ ম্যাচ বাতিল হয়ে যায়।
পরের ডেভিসে ভারত এশিয়ান জোনালের এক নম্বর গ্রুপেই টিকে গেল। তবে জাপান যদি কাল (ভারতীয় সময়ে রবিবার শেষ রাতে) ওয়ার্ল্ড গ্রুপের প্রথম রাউন্ডে হেরে এশিয়ান জোনালে নেমে আসে তা হলে য়ুকিদের সমস্যা আরও বাড়বে। সে ক্ষেত্রে বিশ্বের পাঁচ নম্বর তারকা নিশিকোরির দেশ স্বভাবতই বাছাই হিসেবে জোনাল সেমিফাইনাল থেকে খেলবে। পরের জুলাইয়ে। এবং একটা টাই জিতলেই প্লে-অফে খেলার সুযোগ। ভারতকে সেখানে প্লে-অফে উঠতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রথম রাউন্ড থেকে লড়তে হবে।
কিন্তু সে সব পরের কথা। তার আগে আজ মহাগুরুত্বপূর্ণ প্রথম রিভার্স সিঙ্গলসে য়ুকির অবলীলায় ৩-৬, ৫-৭, ২-৬ পরাজয় ভারতের এক নম্বর সিঙ্গলস প্লেয়ারের টেনিস-মানসিকতা নিয়েই যেন প্রশ্ন তুলছে!
দিল্লিরই তরুণ। সম্পূর্ণ পরিচিত আবহাওয়া, পরিবেশ, গ্যালারির উদ্দাম সমর্থন পাওয়া সত্ত্বেও দু’টো সিঙ্গলসে স্ট্রেট সেটে উড়ে গেলেন। এক বছর আগে এ রকমই প্লে-অফে সার্বিয়ার বিরুদ্ধেও দু’টো সিঙ্গলসে হেরেছিলেন বেঙ্গালুরুতে। অথচ এই দুই টাইয়ের মাঝে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সে দেশের কোর্টে তিনি অসাধারণ! দু’টো সিঙ্গলস শুধু স্ট্রেট সেটে জেতেনইনি, ২-২ স্কোরলাইনে প্রবল চাপের শেষ ‘রাবারে’ বিপক্ষকে চুরমার করে দেন। তা হলে কি য়ুকির টেনিসের অন্যতম সমস্যা ধারাবাহিকতার তীব্র অভাব? দু’মাস আগেই য়ুকির ডেভিস কাপ পারফরম্যান্সকে নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন আনন্দ অমৃতরাজ থেকে শুরু করে কোচ জিশান আলি সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন, ‘‘ও বিশ্বের প্রথম পঞ্চাশে থাকা প্লেয়ারের মতো খেলেছে!’’
কিন্তু ভেসেলি যে সত্যি সত্যিই বিশ্বের চল্লিশ নম্বর প্লেয়ার। তার মানে কি ডেভিস কাপ টাই কোনও মাঝারিমানের চ্যালেঞ্জার টুর্নামেন্ট গোছের, সেখানে য়ুকি বাঘ! আর ওয়ার্ল্ড গ্রুপ প্লে-অফের মতো বিশ্বমানের লড়াইয়ে নামলেই তিনি বেড়াল! তেইশ চলছে। ছয় বছর আগে জুনিয়র অস্ট্রেলীয় ওপেন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। আর কবে টেনিসে প্রাপ্তবয়স্ক হবেন?
যদিও আনন্দ অমৃতরাজ বলছেন, ‘‘টাইটা আমরা আসলে গতকালই হেরে গিয়েছিলাম, ডাবলসটা খুইয়ে। অনেক বছরের মধ্যে এত খারাপ ডাবলস খেলতে দেখিনি ভারতকে।’’ সঙ্গে একটা তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যও করলেন— ‘‘এখনই বলাটা হয়তো খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে। তবে আমাদের হাতে সাকেত, সনম, রামকুমার আছে। ডাবলসে তাই সিনিয়র টিম বাদেও আমাদের ভবিষ্যৎ খারাপ নয়।’’
নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেনের কথায় কীসের ইঙ্গিত? অচিরেই ডেভিস কাপে লিয়েন্ডারোত্তর-যুগের সূচনার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy