Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

গুরুনাথ কেলেঙ্কারিমুক্ত করলেন কিন্তু বোলিংয়ে শীলার যৌবন কোথায়

ভারতীয় ক্রিকেটে গুরুনাথ কে অ্যাদ্দিনে সবার জানা হয়ে গিয়েছে! শ্রীনিবাসনের বিখ্যাত বা কুখ্যাত জামাই-রাজ। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটে তিনি একমেবাদ্বিতীয়ম নন। গুরুনাথ অন্য কারও নামের সঙ্গেও জুড়ে। আর মঙ্গলবারের অ্যাডিলেড ওভাল থেকে এটাই উপলব্ধি যে, অন্তত বিশ্বকাপের প্রথম দিককার ম্যাচগুলোয় গুরুনাথই ভারতের ভরসা! অস্ট্রেলিয়ায় পরের পর ম্যাচে পারফর্ম করতে না পেরে অসম্মান আর কেলেঙ্কারিবিধস্ত ব্যাটিংকে একমাত্র তিনিই নতুন আশার ফুলকি দেখাচ্ছেন। ব্যোমকেশের যেমন অজিত, তেমনই হাতের কাছে তাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট অজিঙ্ক রাহানে।

এ বারের অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রথম জয়। নায়ক সেই রোহিত।

এ বারের অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রথম জয়। নায়ক সেই রোহিত।

গৌতম ভট্টাচার্য
অ্যাডিলেড শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৬
Share: Save:

ভারতীয় ক্রিকেটে গুরুনাথ কে অ্যাদ্দিনে সবার জানা হয়ে গিয়েছে!

শ্রীনিবাসনের বিখ্যাত বা কুখ্যাত জামাই-রাজ। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটে তিনি একমেবাদ্বিতীয়ম নন। গুরুনাথ অন্য কারও নামের সঙ্গেও জুড়ে।

আর মঙ্গলবারের অ্যাডিলেড ওভাল থেকে এটাই উপলব্ধি যে, অন্তত বিশ্বকাপের প্রথম দিককার ম্যাচগুলোয় গুরুনাথই ভারতের ভরসা! অস্ট্রেলিয়ায় পরের পর ম্যাচে পারফর্ম করতে না পেরে অসম্মান আর কেলেঙ্কারিবিধস্ত ব্যাটিংকে একমাত্র তিনিই নতুন আশার ফুলকি দেখাচ্ছেন। ব্যোমকেশের যেমন অজিত, তেমনই হাতের কাছে তাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট অজিঙ্ক রাহানে। এ দিনও ৮৮ করে গেলেন রাহানে। কিন্তু ওয়ান ডে-তে একা পাকিস্তান বা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ছিঁড়ে ফেলার ক্ষমতা রাহানের আছে কি?

ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ব্যোমকেশ বা শবর হিসেবে তাই রাহানে নন। অন্য কাউকে খুঁজতে হবে। যা হওয়ার সেরা লোক ছিলেন বিরাট কোহলি। কিন্তু এ দিন আফগান বোলিংয়ের সামনেও তাঁর যা শরীরী ভাষা দেখলাম, একা কঠিন তদন্ত জিতিয়ে দেবেন বিমা করা যাচ্ছে না। শিখর ধবনও শ্বশুরবাড়ির দেশে ব্যর্থতা-ব্যর্থতায় কেমন দ্বিধাগ্রস্ত। অনেক কম্পিউটার যেমন আছে এককালে সিগন্যাল দারুণ ফাস্ট পেত এখন মাঝেমধ্যেই হ্যাং করে যায়, তেমন অবস্থা। আগের দিন রান করার পরেও আজ ফ্লো-টা কখনও এল না।

পাকিস্তান ম্যাচে তাই গুরুনাথই ভারতের প্রথম ব্যাটিং ভরসা। রোহিত গুরুনাথ শর্মা।

এই ভারতীয় দলে সচিন তেন্ডুলকরের ঘনিষ্ঠতম তিনি। জীবনের শেষ টেস্ট যে জাতীয় পতাকায় রাঙানো ব্যাটে খেলবেন, সেটা সচিন একমাত্র তাঁকেই জানিয়ে ব্যাটটা ভারতীয় ড্রেসিংরুমে লুকিয়ে রাখতে বলেছিলেন। এ দিন বিপক্ষ যতই নিরীহ আফগানরা হোক, ১২২ বলে ১৫০ যে কোনও ধরনের ক্রিকেটে নজর কাড়ার মতো! অ্যাডিলেডের মতো মাঠে রোহিতের আরও সুবিধে, সাইড বাউন্ডারি ছোট। আর স্কোয়ার অব দ্য উইকেট দারুণ সব স্ট্রোক খেলেন এই মুম্বইকর। টাইমিং এত ভাল, সোজা মাঠের বাইরে ফেলে দেন। বিশ্বকাপটা যদি রোহিত ভাল খেলেন, ভারতীয় ক্রিকেটে যব ছোড় চলে মুম্বই ক্রিকেটনগরী গানটা বাজা বন্ধ হবে!

কাল কপিতে লিখেছিলাম বিশ্বকাপ নিয়ে ঘুমন্ত অ্যাডিলেড। আজ তারই সেকেন্ড এপিসোড দেখলাম। ভাবা যায় না আর ক’দিন বাদে ভারত-পাক ম্যাচ নিয়ে এখানে অনিবার্য হাওয়া উঠবে আর তোলপাড় হবে। কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে সেই হাওয়াটা আমদানি করবে শহরের বাইরে থেকে আসা লোকেরা। যাদের বেশির ভাগ ট্যুরিস্ট। মেড ইন অ্যাডিলেড কাপধ্বনি বলতে কিছু নেই। দুপুরে আজ প্র্যাকটিস ম্যাচ শুরুর আগে তো মনে হচ্ছিল টিম ইন্ডিয়া স্রেফ নেট করতে আসছে।

অ্যাডিলেড ওভালে ঠিক ঢোকার মুখে একটা কোণে ফ্যান জোন করা হয়েছে। সেখানে রোদ্দুরের মধ্যে দু’চারটে বাচ্চা টেনিস বলে পিটছে। তার বাঁ দিকে কাঁচের ওপর যেখানে অ্যাডিলেড ওভাল লেখা সেই জায়গাটা মাস দু’য়েক আগে ট্যুরিস্ট স্পট হয়ে গিয়েছিল। এখানেই জমা হচ্ছিল স্থানীয় ক্রিকেটার ফিল হিউজের জন্য শ্রদ্ধার্ঘ্য। মানুষ চলে যায়। স্মৃতি চলে যায়। শ্রদ্ধানিবেদনের মঞ্চও চলে যায়। এখন ওই জায়গাটা খাঁ খাঁ করছে। বরং তার বাঁ দিকে একটা উঁচু মঞ্চ করা হয়েছে। যেখানে একটা ব্যান্ড পরের পর আইটেম নম্বর বাজিয়ে যাচ্ছে। এদের সবার গায়ে ভারতীয় জার্সি। শুনলাম নারী-পুরুষ মেশানো গ্রুপটার নাম ‘দ্রাবিডিয়ান’। আইসিসি এদের ভাড়া করে এনেছে ম্যাচ নিয়ে উত্তেজনা বাড়াতে। পাকিস্তান ম্যাচের দিনও এরা থাকবে। দ্রাবিডিয়ানদের সেই মঞ্চ থেকে আইপিএলের বহু পরিচিত টিউন বার হচ্ছে— প্যাঁ প্যাঁ প্যাঁ। যেটা শুনলেই আইপিএল জনতা হাততালিতে ভরিয়ে দেয়।

এক দিনের বিশ্বকাপকে জমজমাট করতে তা হলে কি আইসিসি আইপিএলের আশ্রয় নিচ্ছে? দেখা গেল শীলার যৌবনের দ্বারস্থ হতেও তাদের কোনও আপত্তি নেই। কারণ গোটাদশেক জনতার জন্য ব্যান্ড এ বার গাইতে শুরু করল— শীলা কী জওয়ানি!

সমস্যা হল, ভারতীয় পেস বোলিংয়ে শীলার যৌবনের খোঁজও নেই!

অ্যাডিলেড ড্রেসিংরুমের ঠিক পাশে নতুন একটা মূর্তি বসেছে দেখা গেল। ভারত যখন ডিসেম্বরে বিরাট কোহলির জোড়া সেঞ্চুরি খচিত অবিস্মরণীয় অ্যাডিলেড টেস্ট খেলছিল, তখনও এটা দেখিনি। কবে বসল? শুনলাম চার সপ্তাহ আগে। এটা জর্জ গ্রিফিনের ব্রাসের মূর্তি। গ্রিফিন টেস্ট ক্রিকেটের আদিযুগে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বোলিং ওপেন করতেন। মাত্র ২৭ টেস্টে ১০৩ উইকেট নেন। গড়ে উইকেটপিছু ২৭ রান। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার প্লেয়ার ছিলেন। অ্যাডিলেড ওভাল তাঁর স্মৃতিকে অবিনশ্বর করতে চাইবে আশ্চর্য কী!


অ্যাডিলেড ড্রেসিংরুমের ঠিক পাশে নতুন একটা মূর্তি বসেছে দেখা গেল। এটা জর্জ গ্রিফিনের ব্রাসের মূর্তি।
গ্রিফিন টেস্ট ক্রিকেটের আদিযুগে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বোলিং ওপেন করতেন। মাত্র ২৭ টেস্টে ১০৩ উইকেট নেন। ছবি: গৌতম ভট্টাচার্য

আশ্চর্যের হল, তাঁর হাতে লাল বল আর শরীরী ভাষায় যে তেজ এই মূর্তি থেকে বার হচ্ছে, সেটাও জীবিত ভারতীয় পেস বোলিংয়ে নেই। শেষ দিকে আফগান উইকেটগুলো ঝটাঝট পড়তে থাকায় গ্যালারিতে ঢাকের আওয়াজ, হাততালি আর জাতীয় পতাকা দোলানো দেখতে পাওয়া গেল। তার আগে আফগানরা যখন দু’উইকেটে দেড়শোর কাছাকাছি, ‘এই ধোনি এই ধোনি’ বলে বেড়ালের ডাক ডাকছিল সেই একই গ্যালারি। অ্যাডিলেড ওভাল অস্ট্রেলিয়ার যাবতীয় মাঠের মধ্যে ক্রিকেটারের সবচেয়ে কাছে। এমনকী ড্রেসিংরুম থেকে বার হতে বা ফিরতে হয় দর্শকদের মধ্যে জায়গা করে।

ইন্ডিয়ান টিম আওয়াজটা শোনেনি হতেই পারে না। শহর অ্যাডিলেড কাপ নিয়ে ঘুমিয়ে থাকলেও অন্তত তারা জানে, ভারত সমর্থকেরা মোটেও ঘুমন্ত নয়! অশ্বিন আর জাডেজা যদি স্পিন কম্বিনেশন হিসেবে আজকের পর লক্‌ডও হয়ে যান— আফ্রিদিদের সামনে নতুন বল নিয়ে কারা দাঁড়াবেন? কঠিনতম ক্রসওয়ার্ড পাজলের চেয়েও আপাতত এটা বেশি কঠিন।

ভারত সাংবাদিক সম্মেলন আজ এই জন্যই করল না যে, পাজলের উত্তর চাওয়া হবে?

পুনশ্চ: বেশি রাতে একটু আগে মেল পেলাম। ভারতীয় মিডিয়া ম্যানেজারের। জানিয়েছেন, আগামী তিন দিন ভারত মিডিয়ামুখো হবে না। তাদের সাংবাদিক সাক্ষাত্‌ ঘটছে সেই শনিবার পাক ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে। আসলে পাজলটা শক্ত বলেই হয়তো আরও বাহাত্তর ঘণ্টা যাবে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE