গিয়েছিলেন প্রিয় দল মোহনবাগান সুপারজায়ান্টকে উৎসাহ দিতে। কারও বয়স ৫৫, কেউ ৬০, কেউ আবার ১৫ বছরের কিশোর। কিন্তু আইএসএলে প্রথম পর্বের সেমিফাইনাল ম্যাচ দেখে জামশেদপুর থেকে তাঁরা সকলে ফিরছেন আতঙ্ক নিয়ে। কেউ কেউ ভাবছেন আর কোনও দিন খেলা দেখতে সেখানে যাবেন কি না।
কলকাতা, হাওড়া, হুগলির বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য মোহনবাগান সমর্থক জামশেদপুর গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সেখানে ছিল আইএসএলের সেমিফাইনাল। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে প্রিয় দলকে সমর্থন করতেই ছুটে গিয়েছিলেন কালীনাথ দত্ত, অনিরুদ্ধ মিত্র, সম্রাট মাঝিরা। কিন্তু তাঁদের অভিজ্ঞতাটা খুব সুখের ছিল না। শুক্রবার ট্রেনে করে বাড়ি ফেরার সময় সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথাই তাঁরা জানালেন আনন্দবাজার ডট কম-কে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে সাড়ে ৭টা থেকে শুরু হয় আইএসএল সেমিফাইনাল। মাঠে ঢুকেই ৬০ বছরের কালীনাথ আঁচ পেয়েছিলেন গন্ডগোল হতে পারে। কারণ মোহনবাগান সমর্থকদের সঙ্গেই গ্যালারিতে বসেছিলেন জামশেদপুরের কয়েক জন সমর্থক। তিনি বললেন, “আমার মনে হয়েছিল গন্ডগোল হবে। মোহনবাগান সমর্থকেরা বসেছিল তাদের নির্দিষ্ট জায়গায়। কিন্তু সেখানেই বেশ কয়েক জন জামশেদপুর-সমর্থক ঢুকে পড়ে। তারা শুরু থেকেই আমাদের খেলোয়াড়দের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। আমরা পুলিশকে বলেছিলাম, ওদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু পুলিশ উল্টে আমাদের বেরিয়ে যেতে বলে।”

শারীরিক নিগ্রহের শিকার মোহনবাগান সমর্থকেরা। ছবি: সংগৃহীত।
মোহনবাগান সমর্থকদের অভিযোগ, পুলিশ আগাগোড়া জামশেদপুর সমর্থকদের পক্ষ নিয়েছিল। সবুজ-মেরুন সমর্থকদের সুরক্ষা দেওয়ার কোনও চেষ্টাই করেনি। ৪৭ বছরের অনিরুদ্ধ বললেন, “গন্ডগোলটা বাড়ে জেসন কামিংস গোল দেওয়ার পর। আমাদের দলের পতাকা ঝুলছিল গ্যালারি থেকে। নীচ থেকে জামশেদপুর সমর্থকেরা সেটা ছিঁড়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। আমাদের মধ্যে এক জন পতাকাটা বাঁচানোর জন্য খুলে নিতে যায়। তখন পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এমন ভাবে মারে যে, এক জনের মাথা ফেটে যায়।”
শুধু গ্যালারিতে নয়, মাঠের বাইরেও জামশেদপুর সমর্থকেরা চড়াও হন মোহন-সমর্থকদের উপর। ১৫ বছরের সম্রাট বলল, “আমার চুলের মুঠি ধরে টানছিল জামশেদপুরের সমর্থকেরা। সেখানে কোনও পুলিশ ছিল না।” এমনই অভিযোগ বার বার ফিরে ফিরে এল পীযূষ সাহা, সুমন চন্দ্র, বিনয় সাহাদের কথায়। প্রত্যেকের অভিযোগ, পুলিশ কোনও সাহায্য করেনি। তারা ছিল দর্শকের ভূমিকায়। মাঠের ভিতরে কিছু পুলিশ থাকলেও, বাইরে কেউ ছিল না বলে অভিযোগ।
মোহনবাগান সমর্থকেরা ম্যাচের পর মাঠ থেকে বেরিয়েও সমস্যায় পড়েন। হোটেল ফেরার পথে তাঁদের গালিগালাজ শুনতে হয়। শারীরিক ভাবে নিগ্রহও করা হয় অনেককে, যা আতঙ্ক তৈরি করে দিয়েছে সমর্থকদের মনে।
আরও পড়ুন:
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই এই ঘটনার নিন্দা করা হয়। তারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। আমাদের মনে রাখা উচিত, সমর্থকদের ছাড়া ফুটবল হয় না।”
আইএসএলের লিগ পর্বেও জামশেদপুরে খেলতে গিয়েছিল মোহনবাগান। তখনও গন্ডগোল হয়েছিল। সমর্থকদের সে বারও হেনস্থা করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার আরও এক বার একই ঘটনা ঘটায় আতঙ্কিত মোহন-সমর্থকেরা। সুমন বললেন, “মোহনবাগান যেখানে খেলতে যায়, সমর্থন করতে সেখানেই ছুটে যাই আমরা। হয়তো আগামী দিনেও জামশেদপুর আসব। কিন্তু এমন ব্যবহার পেলে সত্যিই ভাবতে হবে। বেঙ্গালুরু, কেরল, মুম্বইয়ে গিয়েছি খেলা দেখতে। কোথাও সমস্যা হয়নি। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় জামশেদপুর এবং ওড়িশার খেলা দেখতে গেলে। এই দুই দলের সমর্থকদের ব্যবহার মেনে নেওয়া যায় না।” সম্রাট অবশ্য বললেন, “আর হয়তো কখনও জামশেদপুরে খেলা দেখতে যাব না।” অনিরুদ্ধ বললেন, “জামশেদপুরের সমর্থকেরা চায় না বিপক্ষ দলের সমর্থকেরা খেলা দেখতে যাক। সেই কারণেই হয়তো এমন ব্যবহার করে তারা।”
আগামী সোমবার যুবভারতীতে আইএসএলের সেমিফাইনালের ফিরতি ম্যাচে মুখোমুখি হবে মোহনবাগান এবং জামশেদপুর। সেখানে কি আবার দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে গন্ডগোল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে? অনিরুদ্ধ, সৌগত, সৃজিতেরা সেটা মানছেন না। তাঁরা বললেন, “যুবভারতীতে মোহনবাগান এবং জামশেদপুরের সমর্থকেরা একসঙ্গে বসবে না। তাই মাঠের মধ্যে কোনও গন্ডগোল হবে না। আর বাইরে যথেষ্ট পুলিশ থাকে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। মাঠে নেমে আমাদের ফুটবলারেরা খেলার মাধ্যমে প্রতিশোধ নেবে। জামশেদপুরকে হারিয়ে ফাইনালে উঠবে তারা।”
সমাজমাধ্যমে মোহন-সমর্থকদের উপর হামলার ছবি এবং ভিডিয়ো দেখা গিয়েছে। সেই সঙ্গে দেখা গিয়েছে কিছু মোহন-সমর্থকও কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করছেন। যে কারণে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছিল।
বৃহস্পতিবার আইএসএলের প্রথম পর্বের সেমিফাইনালে মোহনবাগান মুখোমুখি হয়েছিল জামশেদপুরের। শেষ মুহূর্তের গোলে জামশেদপুর ২-১ গোলে জেতে। লিগ জিতেও সেমিফাইনালের প্রথম পর্বে হেরে গিয়েছে মোহনবাগান। ফাইনালে উঠতে হলে দ্বিতীয় পর্বে সবুজ-মেরুনকে জিততেই হবে। যদি এক গোলের ব্যবধানে জেতে, তা হলে খেলা গড়াবে টাইব্রেকারে।