Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
FIFA World Cup 2022

মেসি বনাম এমবাপে! ভাগ্যহীন বৃদ্ধ রাজার লড়াই তরুণ যুবরাজের সঙ্গে, শেষ হাসি হাসবে কে?

দু’দলের দুই সেরা ফুটবলার। দু’দলের দুই ১০ নম্বর জার্সির মালিক। এক জন নিজের শেষ বিশ্বকাপের ফাইনালে নামছেন। অন্য জন পর পর দু’টি বিশ্বকাপের ফাইনালে নামছেন। শেষ হাসি হাসবে কে?

এ বার কি নিজের ভাগ্য বদল করতে পারবেন মেসি? না কি সেরার শিরোপা আরও এক বার উঠবে এমবাপের মাথায়?

এ বার কি নিজের ভাগ্য বদল করতে পারবেন মেসি? না কি সেরার শিরোপা আরও এক বার উঠবে এমবাপের মাথায়? —ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৫৪
Share: Save:

বিশ্বকাপের মঞ্চে তিনি ভাগ্যহীন বৃদ্ধ রাজা। এর আগে চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। কিন্তু এক বারও সেরার শিরোপা ওঠেনি তাঁর মাথায়। ফাইনালে উঠেও হারতে হয়েছে। ক্লাব ফুটবলে সফল হলেও, এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে ব্যর্থ লিয়োনেল মেসি। অন্য জন বিশ্বকাপের তরুণ যুবরাজ। প্রথম বার বিশ্বকাপের মঞ্চে নেমে ট্রফি জিতেছেন। মাত্র দ্বিতীয় বিশ্বকাপেই তারকা হয়ে উঠেছেন কিলিয়ান এমবাপে। রবিবার ফাইনালে লড়াই হবে দু’দলের দুই সেরা ফুটবলারের।

এ বারের বিশ্বকাপের দুই সেরা ফুটবলার মেসি ও এমবাপে। দু’জনেই পাঁচটি করে গোল করেছেন। এখনও পর্যন্ত গোল লক্ষ্য করে দু’জনেই ১০টি করে শট মেরেছেন। মেসি যেমন গোল বেশি করিয়েছেন, তেমনই এমবাপে সব থেকে বেশি সুযোগ তৈরি করেছেন। তাই ফাইনালে লড়াই সমানে সমানে।

দু’জনেই নিজেদের বিশ্বকাপ কেরিয়ারের দ্বিতীয় ফাইনাল খেলতে নামছেন। তবে ৩৫ বছর বয়সের বৃদ্ধ মেসি নামছেন একটি ফাইনালে হেরে, আর ২৩ বছরের তরুণ এমবাপে নামছেন একটি ফাইনালে জিতে। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে প্রথম বার খেলতে নেমেছিলেন মেসি। পরের ১৬ বছরে তিনি ফুটবল দুনিয়া শাসন করেছেন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ছাড়া আর কেউ তাঁর তুলনায় আসতে পারেনি। নিজের শেষ বিশ্বকাপ জিততে চান তিনি। এ বারে কি ভাগ্য সহায় দেবে? না কি আরও এক বার ট্রফির পাশ দিয়ে খালি হাতেই চলে যেতে হবে তাঁকে?

২০০৬ সালে হোসে পেকারম্যানের আর্জেন্টিনার হয়ে সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রোর বিরুদ্ধে পরিবর্ত হয়ে খেলতে নেমেছিলেন মেসি। প্রথম ম্যাচেই গোল করেছিলেন তিনি। কিন্তু সে বারের বিশ্বকাপে পরিবর্ত হয়েই খেলতে হয়েছিল তাঁকে। ২০১০ সালের বিশ্বকাপের আগে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছিলেন মেসি। সে বার আর্জেন্টিনার দায়িত্বে ছিলেন দিয়েগো মারাদোনা। তাঁর দলের প্রধান ফুটবলার ছিলেন মেসি। গ্রুপ পর্যায়ে ভাল খেলেছিলেন তিনি। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল মেসিদের।

২০১৪ সালে মেসিকে কেন্দ্রে রেখে দল তৈরি করেছিলেন আলেহান্দ্রো সাবেয়া। সে বার গ্রুপ পর্যায়ে চারটি গোল করেছিলেন মেসি। নেদারল্যান্ডসকে সেমিফাইনালে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের গোলে জার্মানির কাছে হারতে হয়েছিল মেসিদের। ট্রফির কাছে গিয়ে ব্যর্থ হতে হয়েছিল তাঁকে। তত দিনে ক্লাবের হয়ে প্রায় সব ট্রফি জেতা হয়ে গিয়েছে তাঁর। বার্সেলোনার হয়ে লা লিগা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, কোপা দেল রে থেকে শুরু করে প্যারিস সঁ জরমঁ-এর হয়ে লিগ ওয়ান, সব জিতেছেন। সাত বার বালঁ দ্যর জিতেছেন। কিন্তু দেশের হয়ে সেই সাফল্য নেই। একটি অলিম্পিক্স সোনা ও একটি কোপা আমেরিকা ছাড়া কিছু নেই। কোপার ফাইনালে দু’বার ও বিশ্বকাপের ফাইনালে এক বার হেরেছেন।

২০১৮ সালেও ব্যর্থ হয়েছেন মেসি। কোনও রকমে গ্রুপ পর্ব টপকানোর পরে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে ফ্রান্সের সামনে পড়েছিলেন তাঁরা। এমবাপে ঝড়ে তছনছ হয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনার রক্ষণ। সে অর্থে গত বারের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে হারের বদলা নেওয়ার সুযোগ আছে এ বারের ফাইনালে।

এখনও পর্যন্ত পাঁচটি বিশ্বকাপ মিলিয়ে মেসি ২৫টি ম্যাচ খেলেছেন। গোল করেছেন ১১টি। অন্য দিকে মাত্র দু’টি বিশ্বকাপে ১৩টি ম্যাচে ৯টি গোল করে ফেলেছেন এমবাপে। যে গতিতে এমবাপে এগোচ্ছেন, তাতে বিশ্বকাপের মঞ্চে সর্বোচ্চ গোলদাতা জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোজ়েকে (১৬টি গোল) টপকাতে তাঁর হয়তো আর একটি বিশ্বকাপ লাগবে।

অন্য দিকে ১৯৯০ ও ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি ফ্রান্স। কিন্তু তার পরের সাতটি বিশ্বকাপে চমকে দিয়েছে তারা। সাত বারের মধ্যে চার বার ফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স। ১৯৯৮ ও ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ জিতেছে তারা। হেরেছে ২০০৬ সালে। এ বার জিতলে তিন নম্বর বিশ্বকাপ হবে ফরাসি দলের।

দিদিয়ের দেশঁ ১৯৯৮ সালে ফুটবলার হিসাবে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন। ২০১৮ সালে জিতেছিলেন কোচ হিসাবে। এ বার জিতলে ব্রাজিলের নজির ছুঁয়ে ফেলবে ফ্রান্স। ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে পর পর দু’বার বিশ্বকাপ জিতেছিল ব্রাজিল। সেই কীর্তি করার সুযোগ রয়েছে ফ্রান্সের সামনে। এই দলের ২৩ সদস্যের মধ্যে ১৭ জন চাইলে অন্য দেশের হয়ে খেলতে পারতেন। কারণ, তাঁরা কেউই ফরাসি নন। দেশের অভিবাসন নীতি দলকে এতটা শক্তিশালী করে তুলেছে। তাই তো প্রথম একাদশের ছ’জন ফুটবলার না থাকার পরেও তাদের দেখে মনে হচ্ছে না, দল কোনও ভাবে কমজোর হয়েছে। দলগত সংহতি তাদের প্রধান শক্তি।

২০১৮ সালে এমবাপে প্রথম বার বিশ্বকাপ খেলতে নেমে চারটি গোল করেছিলেন। তার মধ্যে গ্রুপ পর্বে পেরুর বিরুদ্ধে ১টি, প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ২টি ও ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ১টি গোল ছিল। এ বার ডেনমার্ক ও পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে জোড়া গোল এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১টি গোল করেছেন এমবাপে।

খেলার বিচারে এ বারের বিশ্বকাপেই সব থেকে ভাল খেলছেন মেসি। জিততে মরিয়া তিনি। কোনও প্রতিপক্ষই তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি। ফাইনালে নামার আগে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আর্জেন্টিনার ১০ নম্বর জার্সির মালিক। অন্য দিকে ফ্রান্সের ১০ নম্বর জার্সির মালিক দ্বিতীয় বারের জন্য বিশ্বকাপ জিততে নেমেছেন। ইতিহাসের খাতায় নাম লেখাতে নেমেছেন। মেসির মঞ্চে শ্রেষ্ঠ হতে নেমেছেন। লড়াই সমানে সমানে। দুই দলের দুই সেরা ফুটবলার রবিবার লুসাইল স্টেডিয়ামে ঝড় তুলতে নামবেন। এক দিকে মেসি নামবেন ভাগ্যবদল করতে। অন্য দিকে এমবাপে নামবেন নিজেকে রাজার আসনে বসাতে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy