পেনাল্টিতে গোলের পর রোনাল্ডোর সেই ভঙ্গি। ছবি এএফপি।
থুতনিতে হাত। চুলকানোর ভঙ্গি। দু’হাত দু’দিকে ছড়িয়ে প্রথামাফিক সেলিব্রেশনের পাশাপাশি শুক্র-রাতে পেনাল্টি থেকে গোলের পর এ ভাবেই উত্সবে মেতে উঠতে দেখা গিয়েছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে।
আর তার পরই ফুটবল বিশ্বে শুরু জল্পনা। সেই মুহূর্তে কি লিওনেল মেসির কথাই মনে পড়ছিল সি আর সেভেনের? এই প্রসঙ্গেই এসে পড়ছে ছাগলের কথা। ইংরাজিতে যা কিনা গোট (GOAT)। এই GOAT সঙ্গে নিয়েই সম্প্রতি একটি বিজ্ঞাপন করেছেন মেসি। GOAT-কে আবার গ্রেটেস্ট অফ অল টাইম (Greatest Of All Time) এর সংক্ষিপ্ত চেহারা হিসেবে দেখছেন অনেকেই। ফুটবল বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ছাগলের দাড়ি চুলকানোর ভঙ্গিতে রোনাল্ডো নিজেকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবেই চেনাতে চাইছেন। অর্থাত্, মেসি মাঠে নামার আগেই তাঁকে অদৃশ্য চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন পর্তুগালের অধিনায়ক।
ফ্রিকিক নিচ্ছেন রোনাল্ডো। ছবি এএফপি
এমন নয় যে রোনাল্ডো এর আগে নিজেকে সর্বকালের সেরা হিসেবে দাবি করেননি। আগেও করেছেন। এবং তা ফুটবল মহলে খুব সমাদৃত হয়েছে, এমন মোটেই নয়। দিয়েগো মারাদোনা তো প্রকাশ্যেই বলেছেন— রোনাল্ডো আগে মেসিকে টপকে দেখাক, তার পর দেখা যাবে। গত কয়েক বছরে ফুটবল বিশ্ব রোমাঞ্চ ও উন্মাদনার সঙ্গে লক্ষ্য করেছে, ভালোবেসেছে, উত্তেজিত হয়েছে দুই তারকার দ্বৈরথে। দু’জনেই পাঁচ বার করে জিতেছেন ফিফা ব্যালন ডি’ওর পুরস্কার। বিশ্ব ফুটবলে এত বেশিবার এই সম্মান কেউ পাননি। মেসি-রোনাল্ডোর এটাই শেষ বিশ্বকাপ বলে ধরা হচ্ছে। সে জন্যই নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার চরম তাগিদ সঙ্গী হওয়ার কথা দু’জনেরই। আর স্পেনের বিরুদ্ধে যা প্রতিফলিত রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিকে।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা ১০ হ্যাটট্রিক
প্রথম গোলের পর রোনাল্ডোর হাব-ভাব মনে করাচ্ছে অ্যাডিডাসের একটা বিজ্ঞাপনকে। দিন কয়েক আগে সেই বিজ্ঞাপনে ছাগলের সঙ্গে ফটোসেশন করেছিলেন মেসি। উসকে গিয়েছিল জল্পনা। তবে কি এলএমটেন-কেই সর্বকালের সেরা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে? স্বয়ং মেসির কাছেও রাখা হয়েছিল এই প্রশ্ন। আর্জেন্তিনার অধিনায়ক অবশ্য গরমাগরম বিবৃতি দেননি। সহজাত মেজাজে শুনিয়েছিলেন, নিজেকে মোটেই সেরা বলে মনে করেন না। বরং আর পাঁচজনের থেকে নিজেকে আলাদা ভাবেন না তিনি।
আর এখানেই তফাত। মেসি নিজের প্রচার নিজে করেন না। নিজেকে সেরা বলতেও চান না। থাকতে চান আড়ালে। আর রোনাল্ডো নিজেই নিজেকে বিশ্বসেরা বলে ঘোষণা করেন নির্দ্বিধায়। গোল করে থুতনিতে হাত দেওয়াতেও থাকে সেই ইঙ্গিত। আসলে দু’জনে স্বভাবেও আলাদা। মেসি অন্তর্মুখী, ভালবাসেন আটপৌরে জীবন। বান্ধবীকেই বিবাহ করেছেন। সময় কাটান তাঁর সঙ্গেই। রোনাল্ডো বহির্মুখী। ঘনঘন বদলান চুলের স্টাইল। তার চেয়েও জলদি বদলে যায় বান্ধবীর সংখ্যা। যে ছেলেকে সঙ্গে রাখেন সবসময়, তাঁর মায়ের নাম আবার কেউ জানে না!
আরও পড়ুনঃ রো... রো... রো... রোনাল্ডো ৩, স্পেন ৩
সবুজ গালিচাতেও দু’জনের খেলার ধরন আলাদা। মেসির মধ্যে সূক্ষ্ম ড্রিবল, স্কিলের ছোট ছোট ঝলক। খেলা তৈরি করেন, গোল করেন, করানও। মেসি মানেই স্বপ্নের স্নিগ্ধ আমেজ। ফুটবল রোম্যান্সে ভরপুর।
রোনাল্ডো মানেই শক্তি। ভরপুর পুরুষকার। বলের ওপর দিয়ে পা ঘোরানো অবশ্য একেবারেই তাঁর নিজস্ব। অনেকটা ক্রুয়েফ’স টার্নের মতোই। ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় পৌঁছে যান নিঃশব্দে। কাজের কাজটাও করে ফেলেন।
রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিকের তাত্পর্য তাই স্পেন ম্যাচেই শেষ হচ্ছে না। আর কিছু ক্ষণের মধ্যেই মাঠে নামছেন মেসি। স্রেফ আইসল্যান্ডই তাঁর প্রতিপক্ষ থাকছে না, নিশ্চিত থাকুন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy