শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচে বল করছেন মার্নাশ লাবুশেন (ডান দিকে)। সেই সময় আম্পায়ারের ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে এক ফিল্ডার। ছবি: সমাজমাধ্যম।
কিছুতেই উইকেট পড়ছিল না। সেই কারণে ব্যাটারের মনঃসংযোগ ভাঙতে পরিকল্পনা করেন প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক মার্নাশ লাবুশেন। উইকেটের ঠিক পিছনে এক জন ফিল্ডার দাঁড় করিয়ে দেন তিনি। সেই ফিল্ডিং দেখে অবাক হয়ে যান মাঠে থাকা আম্পায়ারেরাও। ক্রিকেটের নিয়ম মেনে কি ফিল্ডার দাঁড় করিয়েছিলেন লাবুশেন?
শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচে অদ্ভুত ফিল্ডিং সাজান লাবুশেন
শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচে কুইন্সল্যান্ড বনাম ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার খেলা চলছিল। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার প্রথম চার ব্যাটার রান না পেলেও অধিনায়ক স্যাম হোয়াইটম্যানের সঙ্গে ২০৩ রানের জুটি বাঁধেন জশ ইংলিশ। সেই জুটি ভাঙতে নিজেই বল হাতে তুলে নেন কুইন্সল্যান্ডের অধিনায়ক লাবুশেন। বল করার ঠিক আগে এক ফিল্ডারকে হাতের ইশারায় ডাকেন তিনি। দাঁড় করান উইকেটের ঠিক পিছনে। সেই ঘটনা দেখে আম্পায়ারেরাও অবাক হয়ে যান। পরে বল করার আগে আবার কিছুটা বদল করেন তিনি। ফিল্ডারের ট্রাউজ়ার ধরে টেনে তাঁকে আরও কিছুটা বাঁ দিকে দাঁড় করান তিনি। এমন জায়গায় ফিল্ডারকে দাঁড় করিয়েছিলেন যাতে ব্যাটারের চোখের সামনে তিনি থাকেন। তাতে যাতে ব্যাটারের মনঃসংযোগ নষ্ট হয় সেই চেষ্টা করেন তিনি।
কতটা সফল পরিকল্পনা
অদ্ভুত ফিল্ডিং সাজিয়ে অবশ্য বিশেষ লাভ হয়নি লাবুশেনের। তিনি প্রথম বলটিই বাউন্সার করেন। ব্যাটার ইংলিশ তখন ৮৩ রানে ব্যাট করছিলেন। তিনি বল মারার চেষ্টা করেননি। শতরান করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১২২ রান করে আউট হন ইংলিশ। অপর ব্যাটার হোয়াইটম্যানও শতরান করেন। তিনি ১০২ রান করে সাজঘরে ফেরেন। অর্থাৎ, অদ্ভুত ফিল্ডিং সাজিয়ে ব্যাটারকে ঘাবড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা সফল হয়নি লাবুশেনের।
কাউন্টি ক্রিকেটেও ঘটেছে এই ঘটনা
একই ধরনের ঘটনা সেপ্টেম্বর মাসে কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেট বনাম সারে ম্যাচে হয়েছে। ম্যাচের শেষ ওভারে জয়ের জন্য ২ উইকেট প্রয়োজন ছিল সমারসেটের। সারের শেষ ব্যাটার জো ওরালকে শেষ ওভারে আউট করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন সমারসেটের অধিনায়ক জ্যাক লিচ। শেষ ওভারের দু’বল বাকি থাকতে দলের সব ক্রিকেটারকে ডেকে নেন ২২ গজের কাছে। ব্যাটারের চারদিকে দাঁড় করিয়ে দেন সব সতীর্থকে। শেষ ওভারে নিজেই বল করছিলেন সমারসেট অধিনায়ক। চতুর্থ বলে লিচ আউট করেন জর্ডান ক্লার্ককে। এই উইকেট পেতেই জয়ের গন্ধ পেয়ে যান লিচ। পরের ব্যাটার ওরালকে আউট করতে তাঁকে ফিল্ডার দিয়ে ঘিরে ফেলার পরিকল্পনা করেন। পঞ্চম বলটি ওরাল কোনও রকমে সামলে দিয়েও শেষরক্ষা করতে পারেননি চাপের মুখে। শেষ বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান তিনি। অর্থাৎ, লিচ অদ্ভুত ফিল্ডিং সাজিয়ে সফল হলেও সফল হতে পারলেন না লাবুশেন।
সাধারণত কী ধরনের ফিল্ডিং সাজান অধিনায়কেরা
প্রত্যেক অধিনায়কের পরিকল্পনা আলাদা। ফরম্যাট বিশেষে বদলে যায় ফিল্ডিংয়ের ধরন। সাদা বলের ক্রিকেটে শুরুতে অবশ্য পাওয়ার প্লে থাকে। সেই সময় ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে দু’জনের বেশি ফিল্ডার রাখা যায় না। তবে বৃত্তের ভিতরে কোথায় কত জন থাকবে তার কোনও নির্দিষ্ট ধরন নেই। কখনও স্লিপে বেশি ফিল্ডার রাখেন অধিনায়ক। কখনও কম রাখেন। এক দিনের ক্রিকেটে শেষ ১০ ওভারেও পাওয়ার প্লে থাকে। সেই সময়ও ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে চার জনের বেশি ফিল্ডার রাখা যায় না। তবে টেস্ট ক্রিকেটে পাওয়ার প্লে নেই। অধিনায়ক চাইলে শুরু থেকেই বাউন্ডারিতে বেশি ফিল্ডার রাখতে পারেন। আবার চাইলে সারা দিন ধরে স্লিপে ফিল্ডারের সংখ্যা বাড়িয়ে রাখতে পারেন। সবটাই নির্ভর করে পিচ, আবহাওয়া এবং সর্বোপরি ফিল্ডিং করা দলের পরিকল্পনার উপর।
কী বলছে ক্রিকেটের নিয়ম
অধিনায়ক কি চাইলেই যে কোনও জায়গায় ফিল্ডার রাখতে পারেন? ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা আইসিসির নিয়ম কী বলছে? কয়েকটি ক্ষেত্রে ফিল্ডার রাখার বিধিনিষেধ রয়েছে। যেমন, বল করার সময় কোনও ফিল্ডারের শরীরের কোনও অংশ যেন পিচের মধ্যে না থাকে। টেস্টে সাধারণত সিলি পয়েন্ট, সিলি মিড অফ, সিলি মিড অনের মতো জায়গায় ফিল্ডার থাকেন। তাঁরা ব্যাটারের একেবারে কাছে দাঁড়ান। কিন্তু কোনও ভাবেই তাঁদের শরীরের কোনও অংশ পিচের মধ্যে থাকতে পারে না। আবার উইকেটে পিছনে লেগ সাইডে কোনও সময়ই উইকেটরক্ষক বাদে দু’জনের বেশি ফিল্ডার রাখা যায় না।
এই দু’টি নিয়ম ছাড়া ফিল্ডিং সাজানোর বিশেষ কোনো নিয়ম নেই আইসিসির। অধিনায়ক চাইলে মাঠের যে কোনও জায়গায় ফিল্ডার রাখতে পারেন। অনেক সময় উইকেটের পিছনে সাইট স্ক্রিনের সামনে ফিল্ডারকে দাঁড় করানো হয়। কিন্তু ব্যাটার যদি অভিযোগ করেন যে, ফিল্ডারের জন্য তাঁর বল দেখতে সমস্যা হচ্ছে, তা হলে আম্পায়ারের নির্দেশে সাইট স্ক্রিনের সামনে থেকে ফিল্ডার সরিয়ে নিতে হয়। তাই লাবুশেন যা করেছেন তা ক্রিকেটের নিয়মের মধ্যে থেকেই। যদিও তাতে বিশেষ লাভ হয়নি তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy