কলকাতায় ক্রিকেট ঘিরে এমন উন্মাদনার জোয়ার শেষ কবে দেখা গিয়েছে?
২০১৬? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যখন অমিতাভ বচ্চনকে এনে জাতীয় সঙ্গীত গাইয়েছিলেন। অমিতাভ যখন ‘জন গণ মন অধিনায়ক’ ধরলেন, গোটা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়েছে।
নাকি অত দূরে যাওয়ার দরকার নেই? ২০২৩ বিশ্বকাপে ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা? বিরাট কোহলি যখন সচিন তেন্ডুলকরের একদিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ শতরানের রেকর্ড স্পর্শ করলেন। মোবাইলের টর্চ জ্বেলে অসাধারণ আলোর উৎসব তৈরি করে ফেলল ইডেন।
দু’টোই আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তা-ও আবার বিশ্বকাপের ম্যাচ। ভারত-পাকিস্তান ঘিরে মানুষ বাঁধনহারা হবে না তো কোন ম্যাচে হবে? ‘চেজ্মাস্টার’ ধরে ফেলছেন ‘মাস্টার’-এর মহার্ঘ রেকর্ড, তা নিয়ে হুল্লোড় হবে না তো কী নিয়ে হবে?
আইপিএল সেই অর্থে বিশ্বকাপের মান, মর্যাদা, প্রাপ্তির ধারেকাছেই আসতে পারে না। সেই জাতীয় আবেগের রংই তো থাকে না। তেরঙ্গার ঢেউ আইপিএলের কুড়ি ওভারের ম্যাচে ওঠে কোথায়? গ্যালারি উঠে দাঁড়িয়ে বন্দে মাতরম গাইছে, রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেওয়া এমন সব মূহূর্ত সেখানে কোথায়? দুই শহরের লড়াই কখনও আন্তর্জাতিক ম্যাচের আবেগ তৈরি করতে পারে?
তবু ২০২৫ আইপিএল উদ্বোধনের দু’দিন আগে ইডেনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে, গত এক দশকের সেরা মহাযজ্ঞের তালিকা তৈরি হলে শনিবারের বোধন স্বচ্ছন্দে জায়গা করে নেবে। বৃহস্পতিবার যার ট্রেলার দেখা গেল। সন্ধের দিকে ইডেনের সামনে এমন জ্যামজট যে, মনে হবে বাবুঘাটের দিকে মিছিল যাচ্ছে। কী ব্যাপার, না আরসিবি বাস তখন ইডেনে ঢুকছে। বিরাট কোহলি নামবেন। পুলিশ কত আর ঠেলেঠুলে ভক্তদের সরাবে? কেউ কেউ রীতিমতো হাত জোড় করে অনুরোধ করলেন, ‘‘এক বারটি দেখতে দিন, কোনও ঝামেলা করব না। দেখে চলে যাব।’’ আচ্ছা, কোহলি ভিতরে চলে যাওয়ার পরেও সেই ছবি খুব একটা বদলায়নি। ইডেনের লোয়ার টিয়ারে ঠিক কী ভাবে যেন পৌঁছে গিয়েছিল ভক্তরা। সেখান থেকে সারাক্ষণ চেঁচিয়ে গেল ‘বিরাট বিরাট’ বলে। এমনকি, রাত আটটার সময়েও ক্লাব হাউজ়ের ভিতরে অনেকে দাঁড়িয়ে যে, কোহলি কখন বেরোবেন। তিনি আবার বাসে ওঠার মুখে অটোগ্রাফের খাতা এগিয়ে দেওয়ার জন্য তৈরি এঁরা। অন্য দিকটা দিয়ে কেকেআরের ক্রিকেটারেরা বেরোচ্ছেন, কিন্তু ভিড় পুরো এই দিকটায়। কোহলিরা যেখান দিয়ে বেরোবেন। কে বলবে এটা কেকেআরের ঘরের মাঠ!
দেখেশুনে মনে হচ্ছে, জনতার দরবারে যদি কিং কোহলির বিরুদ্ধে নাইটদের জিততে হয়, তা হলে তাঁদের রাজাকেও আসরে নামাতে হবে। অর্থাৎ কিং খানকে লাগবে। এবং, শোনা গেল কিং খান স্বমহিমায় হাজিরও হচ্ছেন শনিবার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মাতাতে যে শ্রেয়া ঘোষাল, দিশা পাটানি ও করণ আউজ়লা আসছেন, তা আনন্দবাজারে আগেই লেখা হয়েছে। এ বার কলকাতার পারদ চড়িয়ে বলে দেওয়া যাক, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন স্বয়ং শাহরুখ খান। ইডেন কেকেআরের ঘর। মালিক তাই গৃহকর্তার ভূমিকাতেই আবির্ভূত হচ্ছেন। ফিল্মি কায়দায় বলিউড বাদশার দুর্ধর্ষ কোনও ‘অ্যাপিয়ারেন্স সিন’-ও দেখা যেতে পারে বলে শোনা যবিরাচ

বিরাট কোহলি। —ফাইল চিত্র।
মনে করিয়ে দেওয়া যাক, শাহরুখ অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় অদ্বিতীয়। ফিল্মের নানা অনুষ্ঠানে তো তাঁকে এই ভূমিকায় দেখা যায়ই, অতীতে আইপিএলের উদ্বোধনও সঞ্চালনা করেছেন। দুবাইয়ে বিরাট কোহলির হাতে মোড়কের মধ্যে রাখা ছবি দিয়ে বলেছিলেন, অডিয়েন্সকে দেখাও তো কার ছবি এটা। কোহলি মোড়ক খুলে দেখলেন, অনুষ্কা শর্মা। তখনও তাঁদের বিয়ে হয়নি, শুধু গুঞ্জন ছড়াচ্ছে যে, তাঁরা ‘ডেট’ করছেন। আর এক বার লখনউতে সেই সময় ভারতীয় দলের স্পনসর সহারার একটি অনুষ্ঠানে সৌরভ আর দ্রাবিড়কে নাচিয়েছিলেন। একই অনুষ্ঠানে শ্রীসন্থের সঙ্গে ব্রেক ডান্স করেন তিনি। যুবরাজকে দিয়ে ‘দেবদাস’-এর সংলাপ বলিয়েছিলেন। ইডেনে কি কোহলিকে দিয়ে আবার কোনও চমক উপহার দেন কি না, দেখার অপেক্ষায় থাকবে গ্যালারি। তবে এখানে সমস্যা একটাই। সময় বেশি পাওয়া যাবে না। আধ ঘণ্টা থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে পুরো অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। সম্ভবত ছ’টা পনেরো বা কুড়িতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে। ওদিকে, সাতটায় আবার টস কারণ ম্যাচ শুরু সাড়ে সাতটায়।
শ্রেয়া, দিশাদের কলকাতায় চলে আসার কথা শুক্রবার সকাল বা দুপুরের মধ্যেই। সাধারণত, যে কোনও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগের রাতে শিল্পীরা মহড়া দিয়ে নেন। তাই দিশা পাটনীরাও ইডেনে শুক্রবার রাতে মহড়া দিতে পারেন বলে খবর। সহকারী শিল্পী, নৃত্যশিল্পী মিলিয়ে প্রায় দু’শো জনের টিম আসছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য। এ ছাড়াও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সব শীর্ষ কর্তা। বোর্ডের অধীনস্থ সমস্ত রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার প্রতিনিধি। অন্যান্য দেশের বোর্ডের শীর্ষ কর্তারাও আইপিএলের বোধনে আমন্ত্রিত থাকেন। শুক্র-শনিবার কলকাতার কোনও পাঁচ তারা বা সাত তারা হোটেলে বুকিং চান? অনেক দেরি হয়ে গেল বোধ হয়। পাওয়া যাবে তো

চমকে থাকছে দিশার নাচ। —ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি মুম্বই ও আমদাবাদে কোল্ড প্লে ইভেন্টে দর্শকেরা হাতে ‘জ়াইলো ব্যান্ড’ ব্যবহার করেছিলেন। এলইডি আলোর ছটায় পুরো স্টেডিয়ামে মায়াবী পরিবেশ তৈরি হয়ে যায়। ইডেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও এই ব্যান্ডের ব্যবস্থা করার কথা ভাবা হচ্ছে। কী দাঁড়াল? না, প্রথমে শাহরুখের নেতৃত্বে ঝলমলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। যেখানে থাকছে বাঙালি শ্রেয়ার কণ্ঠ। তার পর মাঠের দ্বৈরথে কেকেআর বনাম আরসিবি। বিরাট কোহলি বনাম হর্ষিত রানা বা সি ভি বরুণ বা সুনীল নারাইন।

শ্রেয়ার গানে মাতবেন দর্শকরা। —ফাইল চিত্র।
শনিবার সন্ধে হতে আর কত ক্ষণ?
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)