আট বছর আগে ইংল্যান্ডের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ওভালে ভারতকে হারিয়ে জিতেছিল পাকিস্তান। ২০১৭ সালের সেই ম্যাচের বদলা নিল ভারত। এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকেই প্রায় ছিটকে যাওয়ার অবস্থা পাকিস্তানের। প্রথমে ব্যাট করে ২৪১ রান করেছিল পাকিস্তান। বিরাট কোহলির শতরানে ৪৫ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটে জিতল ভারত।
এক দিনের ক্রিকেটে ৫১ নম্বর শতরান করে ফেললেন কোহলি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর ১১১ বলে করা শতরান বুঝিয়ে দিল কেন তিনি বড় ম্যাচের খেলোয়াড়। ম্যাচ জেতানো বাউন্ডারিতেই শতরান পূর্ণ কোহলির। সেই শতরান করে হাত নেড়ে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি আছেন, স্বমহিমাতেই আছেন।
রবিবার ভারতের সামনে ২৪২ রানের লক্ষ্য ছিল। ১৫ বলে ২০ রান করে আউট হয়ে যান রোহিত শর্মা। কোহলি ব্যাট করতে নেমে সিঙ্গলস নিয়ে ইনিংস গড়তে শুরু করেন। তিনি এই ভাবেই খেলতে পছন্দ করেন। ধীরে ধীরে ইনিংস গড়েন। সময় বুঝে রানের গতি বৃদ্ধি করেন। পুরো ইনিংসটা তাঁকে ঘিরে গড়ে ওঠে। রবিবার সেটাই করলেন কোহলি। ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন। অপরাজিত রইলেন ১০০ রানে।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতকে জিতিয়েছিলেন পেসারেরা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দায়িত্ব নিলেন স্পিনারেরা। পাকিস্তানকে ২৪১ রানে আটকে রাখার নেপথ্যে ছিলেন কুলদীপ যাদবেরাই। ব্যাট হাতে বাকি কাজটা করলেন কোহলি। ৬ উইকেটে জিতল ভারত।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই উত্তেজনা তুঙ্গে। শুরুতে দুবাইয়ের গ্যালারির কিছু অংশ ফাঁকা থাকলেও পরে তা ভরে যায়। টিভি, মোবাইলেও খেলার দিকে নজর রেখেছিলেন দুই দেশের বহু মানুষ। কিন্তু ব্যাটে, বলে যে সমানে-সমানে লড়াই দেখার আশা ছিল, সেটা পূরণ হল না। আইসিসি প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দাপট দেখাল সেই ভারতই।
নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে হেরে মহম্মদ রিজ়ওয়ানেরা দুবাই এসেছিলেন। ভারতের বিরুদ্ধে হারলে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায়ের আশঙ্কা ছিল। কিন্তু কোনও মরিয়া লড়াই দেখা গেল না পাকিস্তান ক্রিকেটারদের থেকে। টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রিজ়ওয়ান। দুবাইয়ের পিচে রান তাড়া করা কঠিন। সেটা মাথায় রেখেই পাকিস্তান আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু রান তাড়া করার ক্ষেত্রে ভারত যতটা সাবলীল, তাতে দুবাইয়ের পিচও খুব বড় বাধা হয়ে উঠল না। ঠান্ডা মাথায় রান তাড়া করলেন কোহলিরা।
গত ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেওয়া শামি এই ম্যাচে ছন্দে ছিলেন না। প্রথম ওভারে পাঁচটি ওয়াইড বল করেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এটি কোনও ভারতীয় বোলারের করা সবচেয়ে লম্বা ওভার। এর আগে কোনও বোলার ওভারে ১১টি বল করেননি। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই একটি ওভারে ন’বল করেছিলেন জসপ্রীত বুমরাহ। সেটি এত দিন সবচেয়ে লম্বা ওভার ছিল। শামি তাঁর থেকে আরও দু’টি বল বেশি করলেন।
আরও পড়ুন:
তৃতীয় ওভারে বল করার সময় পায়ে টান লাগে শামির। ওভারটি শেষ করেই মাঠ ছাড়েন তিনি। কিছু ক্ষণ পরে আবার ফিরে এসে বল করেন। কিন্তু সে ভাবে দাগ কাটতে পারেননি। রোহিত শর্মা দলের সেরা পেসারকে দিয়ে পুরো ১০ ওভার বলই করাননি। ৮ ওভারে শামি ৪৩ রান দিলেও কোনও উইকেট পাননি। তাঁর অভাব ঢেকে দেন হার্দিক পাণ্ড্য। ৮ ওভারে ৩১ রান দিয়ে দু’টি উইকেট তুলে নেন তিনি। হর্ষিত রানা নেন একটি উইকেট। তবে পাকিস্তানকে চাপে ফেলে দিলেন কুলদীপেরা। ভারতীয় স্পিনারেরা মিলে পাঁচটি উইকেট নেন। এর মধ্যে কুলদীপ একাই নেন তিনটি। অক্ষর পটেল এবং রবীন্দ্র জাডেজা নেন একটি করে উইকেট। দু’টি রান আউটে অবদান ছিল অক্ষরের।
পাকিস্তান ৪৭ রানের মধ্যে দু’টি উইকেট হারিয়েছিল। সেখান থেকে মহম্মদ রিজ়ওয়ান (৪৬) এবং সাউদ শাকিল (৬২) মিলে ১০৪ রানের জুটি গড়েন। ভারত ১১ থেকে ৩৩ ওভারের মধ্যে কোনও উইকেট নিতে পারেনি। কিন্তু এই ২৩ ওভারে ভারত খুব বেশি রানও দেয়নি। সেটাই সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। দুবাইয়ের মাঠে রান তাড়া করা কঠিন। যদিও রবিবারের পিচটি ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের থেকে কিছুটা সহজ ছিল বলেই মনে করা হচ্ছে। তবুও প্রথমে ব্যাট করে কোনও দল যদি ৩০০ রান তুলে দেয়, তা হলে রান তাড়া করতে নামা দলের পক্ষে সেটা টপকে যাওয়া খুব কঠিন। ভারত সেটাই আটকে দেয়। শেষবেলায় শামি এক ওভারে দু’টি ছক্কা না খেলে আরও কম রানেই শেষ হয়ে যেত পাকিস্তান। রিজ়ওয়ানদের ১০৪ রানের জুটিটি ভেঙেছিলেন অক্ষর।
দুবাইয়ে রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই রোহিতের উইকেট হারায় ভারত। কিন্তু ১৫ বলে ২০ রান করে পাকিস্তানের চাপটা তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনিই। রোহিতকে আউট করেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। পাক পেসারের ইয়র্কারে ছিটকে যায় ভারত অধিনায়কের স্টাম্প। কোহলি নেমে শুভমন গিলের সঙ্গে ধীরেসুস্থে জুটি গড়তে শুরু করেন। তাঁরা ৬৯ রানের জুটি গড়েন। গত ম্যাচে শতরান করা শুভমন এ বারে ৪৬ রানে আউট হয়ে যান।
কোহলি বাকি দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। কোনও তাড়াহুড়ো করেননি তিনি। শ্রেয়স আয়ারকে (৫৬) সঙ্গী করে ভারতকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। খুশদিল শাহের বলে ইমাম উল হকের নেওয়া ক্যাচ ফিরিয়ে দেয় শ্রেয়সকে। যদিও সেই ক্যাচ নিয়ে প্রশ্ন থেকে গিয়েছে। অনেকের মতে ক্যাচ নেওয়ার পর বল মাটি ছুঁয়েছে। শ্রেয়স আউট হলেও ম্যাচের ফল বদলায়নি। কোহলি শেষ পর্যন্ত ছিলেন। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।
২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে মাত্র ৫ রান করেছিলেন কোহলি। অধিনায়ক হিসাবে ম্যাচ জেতাতে পারেননি। রবিবার ব্যাটার হিসাবে শতরান করে অধিনায়ক রোহিতের পাশে থাকলেন কোহলি। সেই ম্যাচে পাকিস্তানের ফখর জ়মান শতরান করেছিলেন। রবিবার চোটের কারণে তিনি ছিলেন না। ছিলেন বাবর আজ়মেরা (২৩)। তাঁরা দলকে কাঙ্ক্ষিত জয়টি এনে দিতে পারলেন না।