Advertisement
E-Paper

ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়া সিরাজ আইপিএলে বেগনি টুপির দৌড়ে! সাফল্যের কারণ খুঁজল আনন্দবাজার ডট কম

এ বারের আইপিএলে নতুন মহম্মদ সিরাজকে দেখা যাচ্ছে। বলের লাইন ও লেংথ নিখুঁত। পর পর দু’ম্যাচে দলকে জিতিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার দৌড়ে তিনি। সিরাজের সাফল্যের রহস্য কী?

cricket

হুঙ্কার মহম্মদ সিরাজের। ফর্মে দেখাচ্ছে গুজরাত টাইটান্সের পেসারকে। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:৪০
Share
Save

মহম্মদ সিরাজ। যিনি প্রতিটি বলের আগে সমান আগ্রাসন নিয়ে ছুটে যান। যিনি মার খেলেও আক্রমণাত্মক বল করা ছাড়েন না। যিনি হেরে গেলে কেঁদে ফেলেন। যিনি প্রতিপক্ষ ক্রিকেটারের চোখে চোখ রেখে লড়াই করেন। এত দিন ভারতীয় ক্রিকেট এই সিরাজকে দেখতেই অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু এ বারের আইপিএলে এক নতুন সিরাজকে দেখা যাচ্ছে। যিনি আগ্রাসনের পাশাপাশি ধার বাড়িয়েছেন নিজের অস্ত্রের। ঠান্ডা মাথায় নিখুঁত লাইন ও লেংথে বল করছেন। পর পর দু’ম্যাচে দলকে জিতিয়েছেন। বেগনি টুপির তালিকায় রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে। নতুন বলের পাশাপাশি পুরনো বলেও সমান ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে তাঁকে। সিরাজের এই বোলিংয়ের রহস্য খুঁজে দেখল আনন্দবাজার ডট কম।

পরিচিত উইকেট কাজে লাগানো

গত দু’টি ম্যাচ নিজের ‘ঘরের’ মাঠেই খেলেছেন সিরাজ। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরুর মাঠে। এই দলে গত সাত বছর খেলেছেন সিরাজ। সুতরাং চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের পিচের সঙ্গে পরিচিত তিনি। আর গত ম্যাচ তিনি খেলেছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে। সিরাজ গুজরাত টাইটান্সের ক্রিকেটার হলেও তিনি হায়দরাবাদের ছেলে। সুতরাং এই মাঠের উইকেটকেও হাতের তালুর মতো চেনেন তিনি। সেই সুবিধা কাজে লাগিয়েছেন সিরাজ।

পাওয়ার প্লে-তে দাপট সিরাজের

হায়দরাবাদের প্রধান শক্তি তাদের দুই ওপেনার ট্রেভিস হেড ও অভিষেক শর্মা। আইপিএলে গত বছর থেকে যে সব ম্যাচ হায়দরাবাদ জিতেছে, সেখানে ওপেনিং জুটির গড় ৭০.২৫। ওভারপ্রতি ১৪.৫৩ রান করেছেন তাঁরা। কিন্তু যে সব ম্যাচ হায়দরাবাদ হেরেছে সেখানে হেড ও অভিষেকের গড় ১৪। ওভারপ্রতি ৮.৫ রান করেছেন তাঁরা। রবিবার দু’জনকেই আউট করেছেন সিরাজ। পাওয়ার প্লে-র মধ্যে। নতুন বলে তিন ওভার করেছেন সিরাজ। তার মধ্যে ১৩টি ডট বল দিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ, তাঁর ১৮টি বলের মধ্যে মাত্র পাঁচটি বলে রান নিতে পেরেছেন ব্যাটারেরা।

ডট বলের পরিমাণ বেশি

এ বারের আইপিএলে চার ম্যাচে ৯টি উইকেট নিয়েছেন সিরাজ। মোট ১৬ ওভার বল করেছেন। দিয়েছেন ১২৪ রান। অর্থাৎ, ওভারপ্রতি ৭.৭৫ রান দিয়েছেন এই পেসার। ১৩.৭৭ গড়ে উইকেট নিয়েছেন তিনি। এই পরিসংখ্যান ঈর্ষা করার মতো। তবে আরও ঈর্ষনীয় তাঁর পাওয়ার প্লে-র পরিসংখ্যান। এই মরসুমে পাওয়ার প্লে-তে ১১ ওভার বল করেছেন সিরাজ। ৬৯ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছেন। অর্থাৎ, ওভারপ্রতি ৬.২৭ রান দিয়েছেন তিনি। এ বার প্রথম ১৯টি ম্যাচের পর পাওয়ার প্লে-তে কোনও বোলার এত উইকেট নিতে পারেননি। প্রথম ছয় ওভারে সিরাজের ডট বল ৬৩.৬ শতাংশ। তাঁর থেকে ভাল ডট বলের শতাংশ একমাত্র জস হেজ়লউডের (৭২.২)।

লেংথে বল করা

পাওয়ার প্লে-তে সিরাজ যে ৬টি উইকেট নিয়েছেন তার প্রতিটি গুড লেংথে বল করে পাওয়া। বিশেষজ্ঞেরা বলেন, টি-টোয়েন্টিতে বোলারদের বৈচিত্র লাগে। অর্থাৎ, ইয়র্কার, বাউন্সারের পাশাপাশি স্লোয়ার, কাটারের ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু সিরাজ তা করছেন না। তিনি লেংথে বল করছেন। পিচের ৪ থেকে ৮ মিটার এলাকাকে বলা হয় লেংথ। তার মধ্যে ৪ থেকে ৬ মিটারকে বলা হয় গুড লেংথ। ৬ থেকে ৮ মিটারকে বলা হয় ব্যাক অফ লেংথ। সাধারণত এক দিনের ক্রিকেট ও টেস্টে বোলারেরা লেংথে বল করেন। তা-ও এক দিনের ক্রিকেটেও এখন বৈচিত্রের আধিক্য বেশি। লেংখে বল টেস্টেই সীমাবদ্ধ থেকে গিয়েছে। সেই বল করেই সফল হচ্ছেন সিরাজ।

এ বারের আইপিএলে পাওয়ার প্লে-তে ৬৬টি বলের মধ্যে ৪৩টি বল লেংথে করেছেন সিরাজ। অর্থাৎ, ৬৫.১৫ শতাংশ। সেই ৪৩টি বলে তিনি রান দিয়েছেন ৪৫। উইকেট নিয়েছেন ৬টি। শর্ট বল করেছেন ১৯টি। অর্থাৎ, ২৮.৭৮ শতাংশ। সেখানে রান দিয়েছেন ২০। আর মাত্র চারটি বল তিনি করেছেন ফুল লেংথে। অর্থাৎ, ব্যাটারের ব্যাটের কাছে মাত্র ৬.০৬ শতাংশ বল করেছেন তিনি। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, সিরাজ ব্যাটারকে সামনের পায়ে খেলানোর চেষ্টা করেছেন। পিচ থেকে নতুন বলে যে সুবিধা পাওয়া যায় তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন। আর তাতে সফল হয়েছেন তিনি।

সুইংয়ের পাশাপাশি রিভার্স সুইং

হেড, অভিষেক হোন, বা ফিল সল্ট, দেবদত্ত পড়িক্কল, সকলকে শট খেলতে বাধ্য করেছেন সিরাজ। কেউ লং অনে আউট হয়েছেন তো কেউ মিড উইকেটে। বাকিরা বোল্ড বা এলবিডব্লিউ হয়েছেন। নতুন বলে দু’দিকেই সুইং করাচ্ছেন সিরাজ। আবার পুরনো বলে রিভার্স সুইং করাচ্ছেন। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে স্পেলের শেষ ওভারে তিনি যে জোড়া উইকেট নিয়েছেন তা সেই রিভার্স সুইংয়ের ফলেই।

সাফল্যের জন্য অবশ্য আইপিএলের একটি নিয়মের বদলকে কৃতিত্ব দিয়েছেন সিরাজ। তা হলে বলে থুতু লাগানো। কোভিড অতিমারির সময় থেকে বলে থুতু লাগানো নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। তা আবার শুরু হয়েছে। ফলে বলের এক দিকের পালিশ বজায় রাখা যাচ্ছে। ফলে নতুন বলে সুইংয়ের পাশাপাশি পুরনো বলে রিভার্স সুইং হচ্ছে। আর এই সুইং বা রিভার্স সুইং পেসারেরা তখনই কাজে লাগাতে পারেন যখন তাঁরা লেংখে বল করেন। কারণ, সে ক্ষেত্রে ব্যাটারকে সামনের পায়েই সেই বল খেলতে হয়। বল একটু নড়লেই সমস্যায় পড়েন ব্যাটারেরা। এ বার সিরাজ সেটাই করছেন।

জবাবের মঞ্চ

সিরাজের এই সাফল্যের নেপথ্যে একটি মানসিক কারণও রয়েছে। কয়েক মাস আগেও ভারতের হয়ে তিন ফরম্যাটে নিয়মিত ছিলেন তিনি। অনেক সময় সাদা বলের ক্রিকেটে মহম্মদ শামির আগে তাঁকে প্রথম একাদশে নেওয়া হত। সেই মহম্মদ সিরাজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে জায়গা পাননি। তাঁকে ধরে রাখেনি তাঁর আইপিএল দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুও। ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়ায় ধাক্কা খেয়েছিলেন সিরাজ। সেই ধাক্কা সামলে আইপিএলে ফিরেছেন তিনি। পর পর দু’ম্যাচে সেরার পুরস্কার পেয়েছেন সিরাজ। তিনি বলেছেন, “চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল থেকে বাদ পড়া হজম হয়নি। ধাক্কা খেলেও আমি হতাশ হইনি। নিজের ফিটনেস নিয়ে খেটেছি। যে ভুল করছিলাম, তা শোধরানোর চেষ্টা করেছি। এখন বোলিং আমি উপভোগ করছি।”

দল থেকে বাদ পড়ে প্রাথমিক ভাবে নিজের উপরেই সন্দেহ তৈরি হয়েছিল সিরাজের। ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে উঠেছেন তিনি। আইপিএলকেই জবাব দেওয়ার মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করছেন এই ডানহাতি পেসার। তিনি বলেন, “পেশাদার ক্রিকেটার হিসাবে আপনি যখন অনেক দিন ধরে জাতীয় দলে খেলার পর বাদ পড়েন তখন আপনার মনে একটা সন্দেহ তৈরি হয়। নিজের দক্ষতা নিয়ে সন্দেহ হয়। আমারও হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে উঠেছি। নিজেকে বুঝিয়েছি, ভাল খেললে আবার ফেরা সম্ভব। এখন সেটাই হচ্ছে। দু’দিকেই বল সুইং করানোর থেকে ভাল অনুভূতি আর হয় না।”

cricket

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

দু’বছর আগে এশিয়া কাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ইনিংসের ১০ ওভারের মধ্যেই পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন সিরাজ। তার মধ্যে একটিই ওভারে ছিল চার উইকেট। বল সুইং করলে তিনি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারেন তা দেখিয়েছেন ভারতীয় পেসার। সেই ছবিই আরও এক বার দেখা যাচ্ছে আইপিএলে। টেস্টের বোল করে সফল হচ্ছেন তিনি।

সংক্ষেপে
  • চলতি বছর আইপিএলের ১৮তম বর্ষ। ২০০৮ সাল থেকে শুরু হয়েছিল এই প্রতিযোগিতা। এখন এই প্রতিযোগিতায় খেলে মোট ১০টি দল। তাদের মধ্যেই চলে ভারতসেরা হওয়ার লড়াই।
  • গত বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। তিন বার এই ট্রফি জিতেছে তারা। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও চেন্নাই সুপার কিংস পাঁচ বার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, দিল্লি ক্যাপিটালস, পঞ্জাব কিংস ও লখনউ সুপার জায়ান্টস এখনও পর্যন্ত এক বারও আইপিএল জিততে পারেনি।
Mohammed Siraj IPL Gujarat Titans

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}