ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদের উপদ্রুত এলাকা ঘুরে জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনধি দল প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ করেছিল। ধুলিয়ান, শমসেরগঞ্জ ঘুরে কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রহাটকর জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রের কাছে মহিলাদের ‘বাস্তব অবস্থা’ তুলে ধরবেন তাঁরা। শুক্রবার জাতীয় মহিলা কমিশন তাদের পর্যবেক্ষণ বিশদে জানিয়েছে। সেখানে পুলিশ তথা রাজ্য সরকারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের উপর আমজনতার আস্থা নেই। কর্তব্যে গাফিলতি করেছে পুলিশ।
রিপোর্টে মহিলা কমিশন বলেছে, আক্রান্তেরা জানিয়েছেন, অশান্তির সময়ে তাঁরা পুলিশকে পাশে পাননি। কেউ কেউ দেরিতে পুলিশের সাহায্য পেয়েছেন। বাকিরা পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা দেখেছেন। শুধু তাই নয়, মহিলা কমিশন তাদের পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে বলেছে, দাঙ্গাবাজদের উপর নরম অবস্থান দেখিয়েছে পুলিশ। এই সমস্ত কারণে পুলিশ-প্রশাসনের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা কমেছে।
দিন কয়েক আগে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় হিংসা ছড়িয়ে পড়ে মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ অংশে। বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট থেকে শুরু করে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের উপর হামলা, পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছোয় যে, অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে ঠাঁই নেন আশ্রয় শিবিরে। মুর্শিদাবাদ, মালদহের সেই বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, মহিলারা ভীত-সন্ত্রস্ত। অনেকে স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প চাইছেন। পর্যবেক্ষণে কমিশন আরও জানিয়েছে, পুলিশ-প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। তারা সাধারণ নাগরিককে সুরক্ষা দিতে পারেনি। শুধু তাই নয়, মুর্শিদাবাদে মহিলারা ‘টার্গেট’ হয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে। রিপোর্টে এ-ও বলা হয়, মুর্শিদাবাদে মহিলাদের উপর আক্রমণ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং ওই আক্রমণের মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতির ‘ধারা’ পরিস্ফুট হয়েছে। কোনও মহিলা স্বামীকে হারিয়েছেন। কেউ ছেলেকে। তাঁরা ভয় এবং আতঙ্কের আবহে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের বাড়িঘর ভাঙা হয়েছে। পুড়িয়ে খাক করে দেওয়া হয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সামাজিক পরিস্থিতি এবং ন্যায়বিচারের দিকে অবিলম্বে নজর দেওয়া জরুরি।
আরও পড়ুন:
বস্তুত, এর আগে জাতীয় মহিলা কমিশনের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাদের তুলোধনা করেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। কুণাল বলেছিলেন, ‘‘কে সেখানে যাবেন, সেটা আদালত দেখবে। রাজ্যপাল তো বটেই, দিল্লি থেকে আসা দুই কমিশনও বিজেপির রাজনৈতিক লক্ষ্যপূরণে সাহায্যের চেষ্টা করছে। সন্দেশখালিতে আমরা যা দেখেছি, এখানেও পরে তা সামনে আসবে।’’ এখন জাতীয় মহিলা কমিশন জানাচ্ছে, যে আশ্রয় শিবিরে মানুষ ঠাঁই নিয়েছিলেন, সেগুলোর অবস্থাও ছিল ভীষণ খারাপ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘মালদহের আশ্রয় শিবিরের পরিস্থিতি ছিল করুণ এবং ভয়ানক। খাবার, পানীয় জল, ওষুধপত্রের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো পাননি মানুষ। এটা শুধু মানবিক সঙ্কট নয়, এটা নৈতিক ব্যর্থতা। যে দিকে দ্রুত নজর দেওয়া প্রয়োজন।’’ জাতীয় মহিলা কমিশন রিপোর্টে এ-ও বলেছে, ‘‘রাজ্য সরকার ন্যূনতম ত্রাণ দিতেও ব্যর্থ হয়েছে। যা তাদের দায়িত্ব এবং সমবেদনার অভাবকেই স্পষ্ট করেছে।’’