Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ ক্রিকেট-আকাশে ‘ধ্রুব’ তারার আবির্ভাব

নাম আফিফ হোসেন হলেও সতীর্থেরা তাঁকে ধ্রুব নামেই ডাকেন। কোচ এবং কাছের মানুষেরাও চেনেন ওই নামেই। সেই ধ্রুবই শনিবার তারা হয়ে দেখা দিয়েছেন রাজশাহীর আকাশে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ২৩:১৮
Share: Save:

নাম আফিফ হোসেন হলেও সতীর্থেরা তাঁকে ধ্রুব নামেই ডাকেন। কোচ এবং কাছের মানুষেরাও চেনেন ওই নামেই। সেই ধ্রুবই শনিবার তারা হয়ে দেখা দিয়েছেন রাজশাহীর আকাশে। শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের দর্শক বিমোহিত চোখে ‘ধ্রব’ তারা দেখেছেন! ডু অর ডাই ম্যাচে তামিম, গেইল, শোয়েব মালিকের চিটাগাং ভাইকিংসকে ৬ উইকেটে হারিয়ে প্লে অফের স্বপ্নটা যে তাঁরই বিস্ময়কর পারফরমেন্সে বাঁচিয়ে রাখল রাজশাহী কিংস। অথচ তিনি নাকি এই রেকর্ডের কথা জানতেনই না!

খেলা শেষে রেকর্ডের কথা জেনে তিনি বেশ অবাক। বললেন, ‘‘রেকর্ড করে ফেলেছি, তাই নাকি? মাঠে তো কেউ বলেননি এমন কিছু।’’

অথচ রাজশাহী কিংসে তাঁর সুযোগ পাওয়াটা ঠিক যেন স্বপ্নের মতো। জানতেন, এশিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে খেলতে হবে। সেটাই প্রথম বড় কোনও আসর। আগামী ১০ তারিখ কলম্বোর বিমান ধরতে হবে। প্রস্তুতিটা বেশ জোরদারই চলছিল। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)-এ এক-দু’দিন অন্তর নিজেদের মধ্যে অনুশীলন ম্যাচ হচ্ছিল। প্রথম ২টি ম্যাচেই সেঞ্চুরি। দেখে, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ আবদুল করিম জুয়েল এক দিন সহ-অধিনায়ক আফিফকে ডেকে বললেন, ‘‘তুমি বরং ক’দিন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে রাজশাহী কিংসের সঙ্গে অনুশীলন করো। তোমার জন্য ভাল হবে।’’ অফারটা পেয়ে যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না আফিফ।

ড্যারেন স্যামি, মহম্মদ সামি, সমিত পটেল, মুমিনুল, মিরাজ, সাব্বিরদের সঙ্গে নেটে বল করবেন, ব্যাটিং অনুশীলন করবেন? এ যে মহা সুযোগ! রনি তালুকদার চোট পাওয়ায় তাঁর জায়গায় বিকেএসপি-র ক্যাম্প থেকে রাজশাহী কিংসে যোগ দেন আফিফ। নেটে তাঁকে দেখে রাজশাহীর কিংসের কোচ সারোয়ার ইমরান ইয়েস কার্ড দেন। তাঁকে নিয়ে গেলেন চট্টগ্রাম। সেখান থেকে ঢাকায় ফিরেও ওই সব খেলোয়াড়দের সঙ্গ পেয়েছেন। থেকেছেন টিম হোটেলে। ১৭ বছর বয়সী এই ছেলেটিকে শুক্রবার রাতেই সবুজ সঙ্কেত দেন কোচ। বলেন, ‘‘চিটাগাং ভাইকিংসের বিপক্ষে খেলবে তুমি!’’ টোয়েন্টি-২০ ক্রিকেটের অভিষেকেই ২১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে আফিফ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)-এ প্রথম বাংলাদেশি, যিনি অভিষেক ম্যাচেই এমন কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।

অতীতে ঘরোয়া ক্রিকেটে শীর্ষ স্থানীয় কোনও ক্রিকেটে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না আফিফের। প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে কোনও ক্লাবের টেন্টেও ডাক পাননি। সর্ব শেষ ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে বিকেএসপি-র হয়ে খেলেছেন সর্বসাকুল্যে ৬টি ম্যাচ। তাও আবার ব্যাটসম্যান পরিচয়ে। সেই আফিফকে টোয়েন্টি-২০ ক্রিকেটে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেনসেশন গেইলের বিপক্ষে বল করতে নামিয়ে দেয়া হল! তিনি নিজেও বেশ অবাক হয়েছেন। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে স্যামি তাঁর হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন। অভিষেক ডেলিভারিতে বাউন্ডারি। পরের বলটিও তাই। প্রথম দু’টি বলে মার খেয়ে তৃতীয় বলে জহুরুল অমিকে এলবিডব্লিউ করেছেন! টোয়েন্টি-২০ ক্রিকেট কেরিয়ারে অভিষেক ওভারেই উইকেট। তাতেই খুলনার ছেলেটি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। পরের ওভারে গেইল কোনও মতে প্রথম দু’টি বল ডিফেন্স করলেন। মিডল অ্যান্ড লেগ স্ট্যাম্পে পিচিং পরের বলটি বুঝে ওঠার আগেই গেইল বোল্ড। তৃতীয় ওভারে লং অনে জাকিরকে ফিরিয়ে দেওয়া আফিফের প্রথম স্পেলটা (৩-০-২১-৩) মনে রাখার মতো। এক ওভারের শেষ স্পেলে তাঁর শিকার সাকলায়েন সজীব এবং ইমরান খান জুনিয়র। তাও আবার রানহীন স্পেল! অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে (৪-০-২১-৫) ২৪টি ডেলিভারির ১৫টিই ডট।

টোয়েন্টি-২০ ক্রিকেটে অন্য যে ১৬ বোলারের অভিষেক ম্যাচে ৫ উইকেটের কৃতিত্ব আছে, তাঁদের কেউ অভিষেক ইনিংসে মেডেন ওভারের মুখ দেখেননি। এখানেই অন্যদের সঙ্গে ব্যবধান আফিফের। মহম্মদ সামি (৫/৬), কেভন কুপারের (৫/১৫) পর বিপিএল-এ আফিফের বোলিং স্বীকৃতি পেল তৃতীয় সেরার। টোয়েন্টি-২০ অভিষেকেই ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’-এর স্বীকৃতি পেলেন তিনি। গেইলকে বল করার সময় নাকি নার্ভাস ছিলেন। ম্যাচ শেষে ১৭ বছরের তরুণ বললেন, ‘‘গেইলের সামনে বল করতে নার্ভাস লাগছিল। তাঁর মতো ব্যাটসম্যানের উইকেট পেয়ে ভাল লাগছে।’’ অধিনায়ক স্যামি এবং টিমমেট মেহেদি হাসান মিরাজ দিয়েছেন সাহস। তাতেই উদ্বুদ্ধ হয়েছেন আফিফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম দু’টি বলে বাউন্ডারি খাওয়ার পর স্যামি বলেছেন, ভয় নেই, নিজের জায়গায় পরিকল্পনা মতো বল করো। মিরাজ ভাই কাছে এসে বলেছেন, সামনে কে আছে, তা দেখবি না। জায়গায় বল করবি। নির্দেশ মেনে চলেছি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE