Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪
Women News

অ্যাসিডে পোড়া মুখ নিয়েই নতুন ছন্দে কবিতা

সঙ্গে ছিল শুধু এক জনের ভালবাসা। সত্যিকারের সেই ভালবাসাই কবিতার জীবনের ছন্দকে বয়ে নিয়ে গিয়েছে অন্য খাতে।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৭ ১৭:১৯
Share: Save:

কী! এত বড় সাহস! আমাকে প্রত্যাখ্যান!? আমি না পুরুষ! মেয়ে হয়ে প্রত্যাখ্যান করার ধক দেখাচ্ছো কোন সাহসে? অ্যাসিডে ঢেলে এমন পুড়িয়ে দেব মুখ যে সারা জীবন লুকিয়েই রাখতে হবে।... ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় রোজই ঘটে থাকে এমন ঘটনা।

লখনউ-এর ২৬ বছরের কবিতা বারুনির গল্পটাও এর থেকে আলাদা কিছু ছিল না। প্রতিবেশী যুবক সইফকে প্রত্যাখ্যান করায় অ্যাসিড হামলার শিকার হয়েছিলেন কবিতা। সেই অ্যাসিড হামলা শরীরে যে ক্ষত তৈরি করেছিল, তার চেয়েও কয়েক গুণ গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছিল তার মনে, যখন তাঁকে কাছে রাখতে অস্বীকার করেছিল নিজের বাবা, মা। সঙ্গে ছিল শুধু এক জনের ভালবাসা। সত্যিকারের সেই ভালবাসাই কবিতার জীবনের ছন্দকে বয়ে নিয়ে গিয়েছে অন্য খাতে।

‘‘জীবনটা হঠাত্ করে অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল আমার কাছে। মনে হচ্ছিল, এক ঝটকায় সব হারিয়ে ফেলেছি। সেই যন্ত্রণার দিন ভোলার নয়। সেই সঙ্গেই বুঝতে পারছিলাম আমি বদলে গিয়েছি। আর আগের মতো দেখতে নেই আমি’’- ডেইলিমেলকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে এ ভাবেই স্মৃতিচারণ করেছিলেন কবিতা।

জ্বলন্ত অ্যাসিডে পুড়ে গিয়েছিল দুই ভুরু। উঠে গিয়েছিল মাথার সামনের দিকের চুল। বাবা, মা পাশে না থাকলেও ছিলেন প্লাস্টিক সার্জন বিবেক কুমার সাক্সেনা। কবিতার সামর্থ না থাকায় নিখরচায় তাঁর অস্ত্রোপচার করেছিলেন বিবেক। এই অস্ত্রোপচার, আর সঙ্গী নিতেশ বর্মার শক্ত করে ধরে রাখা হাতই তাঁকে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছিল।

২০১১ সালে একই অফিসে কাজ করতে করতেই পরিচয় নিতেশের সঙ্গে। ২০১২ সালের জুন মাসে ভয়াবহ সেই ঘটনার পর থেকে নিতেশের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করেন কবিতা। তাঁর পোড়ামুখ দেখাতে চাননি নিতেশকে। হামলাকারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করছিলেন নিজেকে। ‘মুখপুড়ি’ মেয়ের লড়াই করার মনোভাব দেখে বিরক্ত হয়েছিলেন বাবা, মা। নিজেদের সম্মান বাঁচাতে মেয়েকে বলে দিয়েছিলেন, হয় মরো, নয় বাড়ি ছেড়ে চলে যাও।

আরও পড়ুন: বাড়ির হেঁশেল থেকেই ব্যবসা দেখাল লক্ষ্মীলাভের পথ

লড়াইটা তাঁর একার বুঝেই যখন বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কবিতা, তাঁকে অবাক করেই কঠিন সময়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন নিতেশ। সেখান থেকেই অন্ধকার থেকে আলোর পথে চলা শুরু। ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল নিতেশকে বিয়ে করেছেন কবিতা। বিয়ের দিন পাশে ছিলেন বন্ধু-বান্ধব ও তাঁর মেডিক্যাল টিম। বাবা, মা না থাকলেও ছিলেন রক্তের সম্পর্কের ভাই।

নিতেশই আইনজীবী ঠিক করেছেন কবিতার। একে অপরের হাত ধরে পথ চলতে চলতেই তাঁরা নিশ্চিত, শাস্তি হবেই সইফের।

অন্য বিষয়গুলি:

Acid Attack Survivor Acid Attack Kavita Baruni
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE