ঘরে-বাইরে। ছবি: শুভ্র মিত্র
মানুষের কষ্ট দেখে অনেকেই বিচলিত হন। পাশে দাঁড়ান ক’জন? সংসার সামলেও খবর পেলেই তিনি ছুটে যান আর্তের পাশে। প্রশাসনের সামনে সমস্যার কথা তুলে ধরে চেষ্টা করেন সাহায্য পৌঁছে দিতে। এ ভাবেই বাঁকুড়ার জয়পুরের বধূ ঈপ্সিতা ঘোষ সরকার অনেকের কাছের মানুষ হয়ে উঠেছেন।
বিষ্ণুপুরের শালবাগানের মেয়ে ইপ্সিতার এ কাজের হাতেখড়ি তাঁর বাবা শান্তনু ঘোষ ও মা রানু ঘোষের হাত ধরে। ইপ্সিতা জানান, সমাজকর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন শান্তনুবাবু। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলেমেয়েদের নিয়ে কাজ করতেন। তাদের জন্য স্কুলও গড়েছিলেন। ঈপ্সিতার কথায়, ‘‘সমস্যায় জর্জরিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা তৈরি হয়েছিল বাবা-মাকে দেখেই। সংসারে আর্থিক অনটনের মধ্যেও দেখেছি সমস্যা নিয়ে ছুটে আসা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাবা। তাঁকে সমর্থন জুগিয়েছেন মা।’’ শান্তনুবাবু-রানুদেবী প্রয়াত হয়েছেন বছর খানেক আগে। তবে মানুষের পাশে থাকার ধারা বজায় রেখেছেন বছর তেত্রিশের ঈপ্সিতা।
বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক সীমা হালদার বলেন, “অনেক প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের সমস্যা ঈপ্সিতাই আমাদের নজরে নিয়ে এসেছেন। তাঁর জন্যই বহু মানুষের সমস্যার সমাধানও করতে পেরেছি আমরা। এক জন মহিলার এই উদ্যোগ নিশ্চয় সমাজের কাছে দৃষ্টান্ত।”
স্বামী ও দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার ঈপ্সিতার। স্বামী জয়প্রকাশ সরকার প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। শ্বশুরবাড়িতেই অবসরে এলাকার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলেমেয়েদের স্বনির্ভর করতে হাতের কাজের প্রশিক্ষণ দেন ঈপ্সিতা। কিছুদিন আগে তিনি খবর পান, জয়পুরের বছর পাঁচেকের শিশু ঋষি লোহার মস্তিকের জটিল রোগে অসুস্থ। তার চিকিৎসার ভার বহন করতে পাচ্ছে না পরিবার। পাশে দাঁড়ান ইপ্সিতা। পরিবারটি নিয়ে তিনি সরাসরি জেলাশাসকের অফিসে চলে যান। জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস পুষ্টিকর খাবার, বিনামূল্যে ওষুধ ও মানবিক প্রকল্পে কিছু আর্থিক সাহায্যেরও ব্যবস্থা করেন।
ঋষির মা রবি লোহার বলেন, ‘‘প্রশাসনের তরফে যেটুকু পেয়েছি সব ইপ্সিতার জন্য। তিনি আমাদের না চিনেও যা করেছেন, সেটা ক’জন করেন?’’
জয়পুর ও বিষ্ণুপুরের বহু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের সরকারি পরিচয়পত্র নেই। ইতিমধ্যেই তাঁদের বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক পরীক্ষা করিয়ে পরিচয়পত্র তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ঈপ্সিতা। ওন্দার লাগারপুকুর এলাকার ডালিমোহরা গ্রামের এক বধূ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মেয়ে ও অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে অত্যন্ত কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ঘটনা জেনে প্রশাসনের নজরে ওই পরিবারটিকে তুলে ধরতে এগিয়ে যান ঈপ্সিতা। ডালিমোহরা গ্রামে গিয়ে তাঁদের কথা পৌঁছে দেন প্রশাসনের কাছে। বর্তমানে পরিবারটি প্রশাসনকে পাশে পেয়েছেন।
প্রশাসনের নজর কেড়ে সদ্য জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের ‘প্যারা-লিগাল ভলান্টিয়ার’-এর (পিএলভি) দায়িত্ব পেয়েছেন ঈপ্সিতা। জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সম্পাদক অনিরুদ্ধ সাহা বলেন, “মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ঈপ্সিতার সক্রিয়তা আমাদের নজরে এসেছে। তাই তাঁর কাজের পরিধি বাড়াতে তাঁকে জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যুক্ত করা হয়েছে।’’ ঈপ্সিতা বলেন, “মানুষ সমস্যায় রয়েছেন জানলে পাশে দাঁড়ানোর জন্য মন ছটফট করে। এটাই আমাকে কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগায়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy