সময়ের আগেই বড় হয়ে উঠা, সমস্যা তৈরি করতে পারে পরর্বতী জীবনে। আমাদের দেশের প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী ঋতুস্রাব হওয়ার পর মেয়েরা বড় হয়ে যায়। শুরু হয় তাদের নতুন মেয়েবেলা। কিন্তু তেরো বছরের আগে এই ‘বড়’ হয়ে উঠা সমস্যায় ফেলতে পারে তাদের পরবর্তী জীবনকে।
এমনটাই জানাচ্ছে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ক্যানসার রিসার্চ ইনন্সটিটউশনের (এনসিআরআই) একটি গবেষনা। এই গবেষনা অনুযায়ী, যাদের ঋতুস্রাব তেরো বছরের আগে হয় তাঁদের পর্বরতীকালে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কারণ হিসেবে গবেষকেরা জানাচ্ছেন, যেহেতু তেরো বছর বয়সকে উপযুক্ত মাপকাঠি হিসেবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ধরা হয়। সেই বয়সের আগে ঋতুস্রাব হওয়ার অর্থ হরমোনের অসমতা। স্তন ক্যানসারের অন্যতম কারণই হল হরমোনের অসমতা। এছারাও এই গবেষনায় উঠে এসেছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এই গবেষনা দেখাচ্ছে পূর্ব ভারতের মহিলাদের স্তন ক্যানসার হওয়ার পিছনে অন্যতম একটি কারণ হল, সন্তান হওয়ার পরে টানা ছয়মাস বুকের দুধ না দেওয়া। গবেষনা দলের প্রধান আশিষ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যারা সন্তান জন্মের পরে টানা ছয়মাস বুকের দুধ খাওয়ান না তাঁদের স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা দেড় গুন বেশি থাকে অন্যদের তুলনায়।’’ তবে, ক্যানসার সম্পর্কে পশ্চিমের একটি ধরণাকে ভ্রান্ত বলেই মনে করছেন এনসিআরআইর গবেষনা পত্রটি। স্তন ক্যানসার আটকানোর উপায় হিসেবে পশ্চিমের বেশিরভাগ গবেষনা উঠে এসেছে তিরিশ বছরের আগে মহিলাদের বিয়ে করার এবং মা হওয়ার পরামর্শ। তবে, এই রিপোর্ট বলছে ভারতীয় মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়।
এই রিপোর্ট বলছে, ভারতে সমস্ত ধরণের ক্যানসারের মধ্যে সবথেকে বেশি মানুষ স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। পূর্ব ভারতের ৪২৬ জন রোগীর উপর গবেষনা চালিয়েছে বেশ কয়েকজন ক্যানসার-বিশেষজ্ঞ। তাঁদের গবেষনার রিপোর্ট ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ’ ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়। এই রিপোর্ট বলছে, ক্যানসারকে ‘‘দূর্ভাগ্যের তত্ব’’ বলা উচিত নয়। কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁরাই স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন যাদের হরমোনের এই অসমতাগুলি দেখা যায়। সুতরাং, যাদের জীবনের প্রথম ভাগে ঋতুস্রাব তাড়াতাড়ি হয়েছে কিংবা যে টানা ছয় মাস সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াননি, তাঁরা যদি তিরিশ বছরের পর থেকে বাড়তি সচেতনতা অবলম্বন করেন তাহলে সহজেই ক্যানসারের নিরাময় সম্ভব।
আরও পড়ুন: পোড়া সিগারেট, গুটকার থুতু থেকে ছড়াতে পারে ক্যানসার
কী এই সচেতনতা?
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, বেশিরভাগ স্তন ক্যানসার দেখা যায় পঁয়তাল্লিশ বছরের পরে। তবে, মহিলারা যদি তিরিশ বছরের পর থেকে বছরে অন্তত একবার তাঁদের চেক-আপ করান তাহলে অনেকক্ষেত্রেই রোগের সহজ নিরাময় সম্ভব হয়। আর কখনও যদি মনে হয় কোন ধরণের গোটা হাতে বাঁধছে, তাহলে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। গবেষক অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পৃথিবীতে এমন কোনও রোগ নেই যার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। সচেতনতা আর সময় মতো চিকিৎসা করালে সমস্ত রোগেরই নিরাময় সম্ভব। আর স্তন ক্যানসার কোন লজ্জার বিষয় নয়। বিনা দ্বিধায় আর পাঁচটা রোগের মতোই এর চিকিৎসা করানো উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy