কালো ধোঁয়ায় ঢেকেছে আকাশ। মঙ্গলপুরে ছবিটি তুলেছেন ওমপ্রকাশ সিংহ।
কালো হয়ে যাওয়া গাছের পাতা, পুকুরের জল, রাস্তা। দিন বদলায়, কিন্তু ছবিটা বদলায় না।
জামুড়িয়ার ইকড়া ও রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর শিল্পতালুক এলাকায় গেলেই চোখে পড়বে এই ছবিগুলি। অভিযোগ, স্পঞ্জ আয়রন কারখানার দূষণেই বছরের পর বছর ধরে চলছে এই অবস্থা। প্রশাসনের সব স্তরে জানানোর পরে মাঝে মাঝে ধরপাকড় হয় বটে, কিন্তু তাতে অবস্থার খুব একটা বদল হয় না। অন্যান্য নির্বাচনের মত এ বার লোকসভা নির্বাচনের আগেও সব রাজনৈতিক দলের কাছেই অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠেছে এই দূষণ।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০০ সালের পর রানিগঞ্জে ৭টি ও জামুড়িয়ায় ১১টি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা চালু হয়। ক্রমেই বাড়তে শুরু করে দূষণের মাত্রা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ২০০৪ সালে কারখানাগুলি চালু হওয়ার কয়েক মাস পরে তত্কালীন মত্স্যমন্ত্রী কিরণময় নন্দ বক্তারনগরে একটি মত্স্য চাষ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। কিন্তু পরের বছর দূষণের কারণে ওই জলাশয়ে কোনও মাছকেই বড় হতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। প্রথম দিকে, দূষণের প্রতিবাদে সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা একজোট হয়েছিলেন। ২০০৪ সালে রানিগঞ্জের মঙ্গলপুরের স্পঞ্জ আয়রন কারখানার দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত বক্তারনগর, বাবুইসোল, হরিশপুর, রনাই-সহ দশটি গ্রামের বাসিন্দারা ওই কারখানার সামনে বিক্ষোভ হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবিপত্র নিতে অস্বীকার করায় কারখানায় ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। পুলিশ কয়েক জন গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করে। সেই আন্দোলনে ছিলেন বক্তারনগরের বাসিন্দা ও স্থানীয় তৃণমূল নেতা লুইচাঁদ সূত্রধর। তিনি বলেন, “আগে কারখানা কর্তৃপক্ষ দূষণ নিয়ন্ত্রনের যন্ত্র কোনও সময়েই ব্যবহার করত না। এখন ব্যবহার করা হলেও সমস্যা রয়েই গিয়েছে।” তাঁর আক্ষেপ, “অনেক আন্দোলন করেও কিছুই লাভ হয়নি। স্পঞ্জ আয়রন কারখানার দূষণ এখন গ্রামবাসীদের গা সওয়া হয়ে গিয়েছে।”
দূষণের মাত্র এমন জায়গায় গিয়েছে যে, গরম কাল হোক কিংবা শীতকাল, কারখানার আশপাশের বাড়ির জানালা দরজা বন্ধ রাখতে হয়। কারণ জানলা-দরজা খোলা রাখলেই কালো ছাই বাড়িতে ঢোকে। ছাইয়ের কারণে গাছের পাতার রং কালো হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ছাইয়ের কারণে শিশুদের পেটের রোগ বাড়ছে। ইকড়ার বাসিন্দা বুধন বাউড়ি, বাবন বাগ্দি, আনন্দ মুখোপাধ্যায়, বাসুদেব চট্টোপাধ্যায়রা জানান, গ্রামের শেষ প্রান্তে একটি বড় জলাশয়ের পাশে বছর দশেক আগে পর্যন্ত চড়ুইভাতির ভিড় লেগে থাকত। কিন্তু সে সব এখন ইতিহাস। কারণ ওই জলাশয়ের জলে মিশছে কারখানার কালো ছাই ও অন্যান্য বর্জ্য।
আসানসোল দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদের এক কর্তার দাবি, কোনও স্পঞ্জ আয়রন কারখানা থেকে দূষণের অভিযোগ পেলেই অভিযান চালানো হয়। জরিমানাও করা হয়। স্পঞ্জ আয়রন কারখানা অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা পবন মাউন্ডিয়া অবশ্য দূষণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এলাকার সব স্পঞ্জ আয়রন কারখানাই নিয়ম মেনে চলে।”
তবে দূষণের অভিযোগকে হাতিয়ার করে ইতিমধ্যেই প্রচারে নেমে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। সিপিএমের অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক মনোজ দত্ত বলেন, “আমাদের আমলে কয়েকটি কারখানা দূষণ ছড়িয়েছিল। তখন তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা আদায় করে কারখানা চালাবার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এলাকায় দূষণের পরিমাণ অনেক বেড়ে গিয়েছে।” তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, “নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। এর পরেও যদি অভিযোগ ওঠে আমরা তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জোটসঙ্গী
মিলে শুঁড় মেরা তুমহারা...। আলিপুর চিড়িয়াখানায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy