Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

বঙ্গতনয়ার হাত ধরে ২৫ কোটির শৃঙ্গসরাস

দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৩ ফুট, উচ্চতা ৪-৫ ফুটের কাছাকাছি। পাতার মতো দাঁতের গড়ন দেখে শৃঙ্গসরাসকে নিরামিষাশী বলেই চিহ্নিত করা হয়েছে। সবচেয়ে নজরকাড়া বৈশিষ্ট্যটি হল, মাথার ওপরকার শিং দু’টো। যা থেকেই শৃঙ্গসরাস নাম, ভারতে পাওয়া গিয়েছে বলে ইন্ডিকাস পদবী!

১) শিল্পীর তুলিতে শৃঙ্গসরাসের এমনই রূপ। অঙ্কন গ্যাব্রিয়েল লিও। এবং ২) প্রাপ্ত হাড়গোড়ের ফসিল সাজানোর পরে। (উপরে) ৩) গবেষকদের চোখে শৃঙ্গসরাসের সম্ভাব্য চেহার।(নিচে) ছবি গবেষকদের সৌজন্যে পাওয়া।

১) শিল্পীর তুলিতে শৃঙ্গসরাসের এমনই রূপ। অঙ্কন গ্যাব্রিয়েল লিও। এবং ২) প্রাপ্ত হাড়গোড়ের ফসিল সাজানোর পরে। (উপরে) ৩) গবেষকদের চোখে শৃঙ্গসরাসের সম্ভাব্য চেহার।(নিচে) ছবি গবেষকদের সৌজন্যে পাওয়া।

জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৭ ০৫:০৪
Share: Save:

বয়স তার কম নয়। আন্দাজ ২৪ কোটি ৪৫ লক্ষ প্রায়। মাথায় দু’টি শিং। এই ভারতীয় শৃঙ্গধারীকে নিয়েই এখন হইচই পুরাজীববিদ্যার আঙিনায়। কেননা এর আগে তার সমসাময়িক কোনও শিংওয়ালা প্রাণীর খোঁজ মেলেনি। ভারতে তো নয়ই, সারা পৃথিবীতেও নয়।

শৃঙ্গসরাস ইন্ডিকাস নামে এই সম্পূর্ণ নতুন প্রাণীটির হদিস পেয়েছেন যে গবেষকরা, তাঁদের মধ্যে দু’জন বাঙালি মেয়ে। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউটের পুরাজীববিদ্যার অধ্যাপক শাশ্বতী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আইএসআই-প্রাক্তনী, বর্তমানে দুর্গাপুর কলেজের শিক্ষক শারদী সেনগুপ্ত। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আর্জেন্তিনার গবেষক মার্টিন ডি এজকুরা। তাঁদের গবেষণাপত্রটি নেচার গোষ্ঠীর সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি।

মধ্যপ্রদেশে দেনওয়া নদীর ধারে সাতপুরা-গন্ডোয়ানা বেসিন অঞ্চলে শাশ্বতীরা প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে খনন চালাচ্ছিলেন। বেশ কিছু হাড়ের ফসিল সেখানে খুঁজে পান তাঁরা। সেই ফসিলগুলি বিচার-বিশ্লেষণ করে, একসঙ্গে সাজিয়ে ক্রমে যে আদল পাওয়া গেল, সে এক আদ্যন্ত নতুন প্রাণী! এমনটা যে ঘটতে চলেছে, সেটা কিন্তু খননের সময়েও আন্দাজ করতে পারেননি ওঁরা।

দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৩ ফুট, উচ্চতা ৪-৫ ফুটের কাছাকাছি। পাতার মতো দাঁতের গড়ন দেখে শৃঙ্গসরাসকে নিরামিষাশী বলেই চিহ্নিত করা হয়েছে। সবচেয়ে নজরকাড়া বৈশিষ্ট্যটি হল, মাথার ওপরকার শিং দু’টো। যা থেকেই শৃঙ্গসরাস নাম, ভারতে পাওয়া গিয়েছে বলে ইন্ডিকাস পদবী! গবেষকদের মতে, সঙ্গিনী নির্বাচনের লড়াইয়ে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হতো এই শিং। হরিণ বা অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রেও যেমনটা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: গরিব ঘরের আইএএস খুঁজে ফিরছেন দুর্নীতি

শারদী-এজকুরা-শাশ্বতীর মতে, এই আবিষ্কারের প্রধান গুরুত্ব হল, শৃঙ্গসরাস যে কালপর্বের প্রাণী, তাদের মধ্যে এর আগে শিং দেখা যায়নি। ফলে এত দিন মনে করা হতো, ক্রেটাশিয়াস (১৪ কোটি-সাড়ে ৬ কোটি বছর আগেকার) যুগের ডায়নোসরদেরই বুঝি প্রথম শিং গজায়। সেখানে তিন শিংওয়ালা ডায়নোসরেরও দেখা মেলে। এ বার দুই শিংওয়ালা শৃঙ্গসরাস এসে সেই ইতিহাস আরও ১০ কোটি বছর পিছিয়ে দিল। যা বিবর্তনের ধারাকে নতুন ভাবে দেখতে শেখাবে বলেই দাবি গবেষকদের।

শাশ্বতীর কথায়, ট্রায়াসিক যুগেও (২৫ কোটি ১০ লক্ষ-১৯ কোটি ৯০ লক্ষ বছর আগে) যে প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মে শিং তৈরি হয়, সেটা শৃঙ্গসরাসই দেখাল!

এখনও অবধি গবেষণা যত দূর এগিয়েছে, তাতে মনে করা হচ্ছে শৃঙ্গসরাসের সময়টা হল আদি থেকে মধ্য ট্রায়াসিক যুগ। ট্রায়াসিক যুগ শেষ হয় আনুমানিক ২০ কোটি বছর আগে। তত দিনে শৃঙ্গসরাস পুরোপুরি অবলুপ্ত।

ট্রায়াসিক যুগের শেষে প্রাণিজগতের বিরাট অংশই গণহারে অবলুপ্ত হয়ে যায়। তার পরেই জুরাসিক যুগ থেকে বৃহদাকার ডায়নোসরদের রাজত্ব শুরু।

ট্রায়াসিকের প্রাণীদের মধ্যে শৃঙ্গসরাসও যে ছিল, সেটাই জানা যায়নি আগে। এত দিনে তার হদিস মিলল ভারতের মাটিতে! এ এক অভাবিত ঘটনা, বললেন শারদী আর এজকুরাও।

অন্য বিষয়গুলি:

Dinosaurs Fossil জীবাশ্ম
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE