ছয় হাজার পায়েই মিলবে দশে দশ!--প্রতীকী ছবি।
দশ নয়। ছয়। তাতেই দশে দশ পাওয়া যাবে!
সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকতে রোজ মাত্র ছয় হাজার পা ফেললেই হবে। তবে ‘একটু পা চালিয়ে ভাই’— হেলেদুলে পা ফেললে হবে না। হাঁটার জন্য ঘাম ঝরতে হবে অল্পবিস্তর।
বিজ্ঞানীরা আগে হিসাব কষে দেখিয়েছিলেন, সুস্থ থাকতে হলে, বেশি দিন বাঁচতে হলে রোজ দিনভর যে কোনও সময় মিলিয়ে দশ হাজার পা ফেলতেই হবে।
সাম্প্রতিক গবেষণা কিছুটা স্বস্তির খবর দিল। জানাল— দশ নয় ছয়। ছয় হাজার পা-ই যথেষ্ট বেশি দিন বাঁচতে চাইলে।
গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘দ্য ল্যান্সেট: পাবলিক হেল্থ’-এ। শুক্রবার।
এ ব্যাপারে আগে প্রকাশিত ১৫টি গবেষণার ফলাফল খতিয়ে দেখে এবং এশিয়া, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর আমেরিকার মতো চারটি মহাদেশের কয়েক লক্ষ মানুষের উপর পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা দেখেছেন বেশি দিন বেঁচে থাকতে চাইলে দিনে নিয়ম করে যে কোনও সময় মিলিয়ে কম করে মোট ছয় হাজার পা ফেললেই হবে। তবে একটু জোরে জোরে পা ফেলতে হবে। এই হিসাবে কিছুটা কম-বেশি হতেই পারে, কোন বয়সের মানুষ এই অভ্যাসে রপ্ত হচ্ছেন, শৈশব থেকে তাঁরা কী কী ধরনের রোগে বেশি দিন ভুগেছেন তার উপরেও অবশ্য।
তবে বেশি দিন বাঁচতে চাইলে যে রোজ নিয়ম করে ছয় হাজারের বেশি পা ফেলতেই হবে তা একেবারেই নয়, জানিয়েছেন আমেরিকার আমহার্স্টে ম্যাসাচুসেট্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
গবেষকরা জানিয়েছেন, মানুষ অনেক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারে। যাকে বলা যায় ম্যারাথন দূরত্ব (ক্রীড়ায় যা ২৬ কিলোমিটার)। সেই ভাবেই মানুষের ক্রমবিবর্তন হয়েছে। খাদ্য ও জলের খোঁজে। সে সব জোগাড় করে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে।
গবেষকদের অন্যতম ম্যাসাচুসেট্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমান্দা পালুচ বলেছেন, ‘‘এর জন্যই বিবর্তন আমাদের শরীরকে বদলে দিয়েছে। যেমন প্রয়োজন সেই মতো গড়ে তুলেছে। যাতে রোজ দীর্ঘ পথ হাঁটলে গা যতটা গরম হয়ে ওঠে, যতটা ঘাম ঝরে তাতে যেন মানবশরীরের বিপাকক্রিয়াগুলি স্বাভাবিকই থাকে। স্বাভাবিক থাকে হৃদযন্ত্র ও তার আশপাশের এলাকার কাজকর্ম। যেন স্বাভাবিকের মধ্যেই থাকে দেহে রক্তসংবহনের মাত্রা। রক্তকণিকাদের সংখ্যার অনুপাতও। সেই মতো তৈরি থাকে মানুষের হাড় ও পেশিগুলিও। এমনকি, মানসিক স্বাস্থ্যও।’’
তবে সবকিছুরই একটা সীমা থাকে। যা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই কমে। সেই সীমাটা রোজ দশ হাজার পা ফেললে হিতে বিপরীতও ডেকে আনতে পারে। বরং মেরেকেটে হাজার ছয়েক পা ফেললেই যথেষ্ট, জানিয়েছে গবেষণাপত্রটি। তা হলে আগের দশ হাজারি ধারণাটা কেন বদ্ধমূল হয়ে বসেছিল আমাদের মস্তিষ্কে? তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন আমান্দা। বলেছেন, ‘‘বেশি দিন বেঁচে থাকতে হলে কয়েক হাজার পা দিনে জোরে জোরে ফেলতেই হবে। এর অর্থ, একটু বেশি পরিশ্রম করতে হবে, এটাই বোঝানো। দশ হাজার বললে সেই পরিশ্রম কতটা তা বোঝানো যায়। যেমন কারও বিশালত্ব বোঝাতে দুম করে আমরা দশ গুণ বলে বসি!’’
গবেষকরা দেখেছেন, দিনে যাঁরা বেশি হাঁটাহাঁটি করেন এমন ৪০ বছর বয়সি বা তদোর্ধদের ২৫ শতাংশের অকালমৃত্যুর আশঙ্কা যাঁরা তা করেন না তাঁদের থেকে ৪৩/৫০ শতাংশ কম।
আর বয়সটা যদি ৬০ বা তার কিছু বেশি হয় তা হলে দিনে নিয়ম করে ছয় হাজার পা জোরে জোরে ফেললেই হবে। এড়ানো সম্ভব হতে পারে অকালমৃত্যুর আশঙ্কা।
তবে বয়স যাঁদের ৪০-এর নীচে, তাঁরা দিনে আট বা দশ হাজার পা ফেলতে পারেন জোরে জোরে। সে ক্ষেত্রে এই বাড়তি পরিশ্রম নেওয়ার ধকল তাঁদের শরীর সহ্য করতে পারবে। বাড়তি কোনও বিপদ ডেকে আনবে না। বরং এই পরিশ্রম হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ককে আরও সচল সক্রিয় রাখতে সাহায্য করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy