শিল্পীর চোখে মঙ্গলের ‘নদীখাত’। ছবিটি প্রকাশ করেছে নাসা।
লালগ্রহে জল রয়েছে!
‘রহস্যের এ বার সমাধান হবে’—২৪ ঘণ্টা আগে থেকেই ‘ব্রেকিং’ দেখাচ্ছিল চ্যানেলগুলো। অবশেষে সাংবাদিক বৈঠক করে নাসা আজ ঘোষণা করল, তরল অবস্থায় জল রয়েছে মঙ্গলে। তার জোরদার প্রমাণ দিয়েছে তাদের পাঠানো মহাকাশযান ‘মার্স রিকনিস্যান্স অরবিটার’ (এমআরও)। যা থেকে স্পষ্ট, মঙ্গলের মাটি চিরে মাঝেমধ্যে বয়ে যায় নোনা জলের স্রোত। গবেষণাপত্রটি আজ প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার জিওসায়েন্স’-এ।
কী ভাবে এত নিশ্চিত হচ্ছে নাসা? তারা জানাচ্ছে, এমআরও-র ইমেজিং স্পেকট্রোমিটার-এ তোলা ছবিতে ধরা পড়ে, বেশ কিছু রেখা মঙ্গলের মাটি চিরে চলে গিয়েছে। রহস্যময় ওই রেখাগুলো কখনও কখনও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কখনও হারিয়ে যায়। এটাই অদ্ভুত ঠেকে তাঁদের! বিজ্ঞানীরা খুঁটিয়ে দেখেন, মঙ্গলে যখন গরমকাল অর্থাৎ তাপমাত্রা -২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি, তখন ওই রেখাগুলো ঘন, গভীর হয়ে ওঠে। শীতকাল এলে রেখাগুলো কী ভাবে যেন মুছে যায়।
আরও দেখা যায়, নদীখাতের মতো ওই রেখাগুলির ঢালে রয়েছে খনিজ লবণ (যা কিনা মিশে যেতে পারে জলে অর্থাৎ হাইড্রেটেড মিনারেল)। প্রশ্ন ওঠে বিজ্ঞানী মহলে, তা হলে কি খনিজ লবণের উপস্থিতি এবং মঙ্গলের মাটিতে নদীখাতের রেখা— এই দুইয়ের মধ্যে কোনও সংযোগ রয়েছে? সূত্র দু’টি ধরে এগিয়ে চলে নাসা।
বিষয়টি প্রথম নজরে এনেছিলেন নেপালের ছেলে, গবেষকদলের প্রধান, জর্জিয়া টেকনোলজির বিজ্ঞানী লুজেন্দ্র ওঝা। ২০১০ সালে তখন তিনি অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের ছাত্র। আজ তিনি বলেন, ‘‘গরম পড়লেই ওই জলীয় লবণগুলোর দেখা মেলে। এটা দেখেই সন্দেহ জোরদার হয়, জলের সঙ্গে এর নিশ্চয় সম্পর্ক রয়েছে। আর ওই জলের উপস্থিতির জন্যই হয়তো নদীখাতের মতো দেখতে রেখাগুলো তৈরি হয়েছে।’’
এখন মঙ্গলে বায়ুস্তর খুব পাতলা। তাপমাত্রাও সাঙ্ঘাতিক কম। এ অবস্থায় বরফ যদি বা থাকে, জল কী ভাবে থাকতে পারে? নাসার ফিনিক্স ল্যাডারের পাঠানো ছবিতে আগেই ধরা পড়েছিল, মঙ্গলের মেরু অঞ্চলে বরফ আছে। কিন্তু তা বলে জল!
উত্তরটা দিলেন নাসার বিজ্ঞানী অমিতাভ ঘোষ। বললেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে জলের স্রোত মানে কিন্তু গঙ্গার মতো নদী নয়। নোনা জলের অগভীর স্রোত। আর তা গঙ্গাজলের মতো তুলে আনাও সম্ভব নয়।’’ কিন্তু তা-ই বা কী ভাবে থাকছে? অমিতাভবাবুর কথায়, ‘‘জলে নুন মিশিয়ে ঠান্ডা করলে ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে গিয়ে তা বরফ হয়। লাল গ্রহের জলে এমন খনিজ লবণ মিশে রয়েছে, যার ফলে তাপমাত্রা যখন -২৩ ডিগ্রির কাছাকাছি (যা মঙ্গলে প্রায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা), তখন জলের হাল্কা রেখা চোখে পড়ছে। তা-ও সাময়িক।’’ মঙ্গলের মাটিতে থাকা এই লবণগুলি হল ম্যাগনেসিয়াম পারক্লোরেট, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরেট, সোডিয়াম পারক্লোরেট। কিছু কিছু পারক্লোরেট মিশে থাকলে তা -৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও জলকে বরফ হতে দেয় না। বিজ্ঞানীদের দাবি, মঙ্গলে জল থাকার কারণ এটাই।
এই জলের উৎসটা কোথায়? অমিতাভবাবু জানাচ্ছেন, মাটির নীচে। ভবিষ্যতে মঙ্গলে মানুষ পা রাখলে, হয়তো আর জল নিয়ে যেতে হবে না। ওই নোনা জল থেকেই সে পানীয় জল বানিয়ে নিতে পারবে। রকেটের জ্বালানিও তৈরি করা যাবে জল থেকে।
আর জীবন? ‘‘থাকতে পারে। তবে এখনই বলা সম্ভব নয়। তা জানতে আরও উন্নত যন্ত্রের প্রয়োজন,’’ হেসে বললেন অমিতাভবাবু।
নাসার অরবিটার যখন জলের খোঁজ দিচ্ছে ভারতের ‘মম’ কী বলছে? ইসরো-র স্পেস অ্যাপলিকেশন সেন্টারের ডিরেক্টর তপন মিশ্র জানালেন, ‘মার্স অরবিটার মিশন’-এর সবে এক বছর হয়েছে। এর মধ্যেই হাজারো ছবি পাঠিয়েছে সে। ওই তথ্য বিশ্লেষণ করতে সময় লাগবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy