চাঁদকে ভয়ঙ্কর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হতেই হবে শুক্রবার। -ফাইল ছবি।
চাঁদকে শুক্রবার সামনে থেকে ক্ষতবিক্ষত হতে, তার একাংশকে ভেঙে গুঁড়িয়ে যেতে দেখা যাবে। দেখা যাবে, প্রচণ্ড গতিতে কোনও কিছুর আছড়ে পড়ায় কী ভাবে সুবিশাল গহ্বর (ক্রেটার) তৈরি হয় চাঁদের বুকে। কী ভাবে তার আগে চাঁদের বুকে ওড়ে ধুলোর ঝড়। এমনকি, আগুনের ঝলকও।
পৃথিবী এই প্রথম সাক্ষী হতে পারবে এমন ঘটনার। দু’টি মহাকাশযানের দৌলতে।
তবে শুক্রবার পৃথিবীর সেই সৌভাগ্যের জন্য ভূমিকা থাকবে কার, তা নিয়ে যদিও এখনও সংশয় কাটিয়ে উঠতে পারেননি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কারও ধারণা, তা হতে পারে চিনের দৌলতে। কারওবা অনুমান, তা আমেরিকার ধনকুবের এলন মাস্কের সংস্থা স্পেস-এক্স এর জন্যেও।
যার জন্যই হোক, চাঁদকে ভয়ঙ্কর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হতেই হবে শুক্রবার। কারও আঘাতে চৌচির, চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যেতে হবে চাঁদের পিঠের একটি অংশকে। আর সেই অভিঘাতে চাঁদের বুকে তৈরি হবে সুবিশাল একটি গহ্বর। যা হয়তো আগামী দিনে চাঁদের বুকের অতলে কী রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তার খোঁজ পেতে, চাঁদের অন্তর-অন্দর থেকে ‘মণিমাণিক্য’ (খনিজ) তুলে আনতে সাহায্য করবে জ্যোতির্বিজ্ঞানী, মহাকাশবিজ্ঞানীদের।
সেটি কোন দেশের, আমেরিকার নাকি চিনের, তা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অন্তত একটি বিষয়ে সুনিশ্চিত, চাঁদের কাছাকাছি থাকা কোনও বাতিল রকেটের বুস্টার ইঞ্জিন প্রচণ্ড গতিবেগে শুক্রবার আছড়ে পড়বেই চাঁদের বুকে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যে হিসাব কষেছেন, সেই মতো আছড়ে পড়ার সময় রকেটের বুস্টার ইঞ্জিনের গতিবেগ থাকার কথা ঘণ্টায় প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার বা ঘণ্টায় ছয় হাজার মাইলেরও বেশি।
অত প্রচণ্ড গতিতে আছড়ে পড়ার ফলে সেই অভিঘাতে ‘ঝড়’ উঠবেই চাঁদের বুকে। চাঁদের পিঠের বড় একটি অংশ ফেটে চৌচির হয়ে যাবে। ক্ষতবিক্ষত চাঁদের পিঠে তৈরি হবে সুবিশাল একটি গহ্বরও।
পৃথিবীর জন্মের পর থেকে কয়েকশো কোটি বছরে অগণিত গ্রহাণু, বিশাল বিশাল উল্কাপিণ্ড আছড়ে পড়ে এই নীলাভ গ্রহে বহু গহ্বর তৈরি করেছে। তার বেশির ভাগ চোখের সামনে হতে না দেখা গেলেও বেশ কয়েকটিকে চাক্ষুষ করা সম্ভবও হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে চাঁদেও। তাই চাঁদেও রয়েছে অগণন গহ্বর। তবে তার একটিকেও চোখের সামনে তৈরি হতে দেখা যায়নি এখনও পর্যন্ত।
শুক্রবার সেই ঘটনারই ব্যাতিক্রম ঘটতে চলেছে। রকেটের তিন টন ওজনের বুস্টার ইঞ্জিনের যে গতিবেগে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা চাঁদের বুকে, তাতে বড়সড় গহ্বর তৈরি হবেই পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহে। এমন ঘটনা এর আগে চাক্ষুষ করা সম্ভব হয়নি। যেহেতু এ বার আগেভাগেই জানা সম্ভব হয়েছে এমন ঘটনা ঘটতে চলেছে তাই সেই অভিঘাতে চাঁদের ঠিক কোন অংশে কতটা বিশাল গহ্বর তৈরি হতে চলেছে তার উপর নজর রাখার জন্য ইতিমধ্যেই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে ভারতের চন্দ্রযান-১ এবং নাসা-র ‘লুনার রিকনাইস্যান্স অরবিটার (এলআরও)’-কে। ওই সময় এই দু’টি মহাকাশযানই থাকবে চাঁদের যে দিকটি আমাদের চোখের আড়ালে থাকে সব সময় সেই দিকে। যে দিকে আছড়ে পড়়ার কথা বাতিল রকেটের ভারী বুস্টার ইঞ্জিনের।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক ধারণা ছিল, সেই বুস্টার ইঞ্জিনটি হয়তো স্পেস এক্স-এর রকেটেরই। যার উৎক্ষেপণ হয়েছিল ২০১৫-য়। পরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মত বদল করে জানান, তাঁদের আগের হিসাবে ভুল হয়েছিল। স্পেস এক্স-এর রকেটের অংশটি চাঁদ থেকে অনেক দূরে রয়েছে। চাঁদের অভিকর্ষ বলও খুব কম। তাই অত দূর থেকে চাঁদের টানে তার চাঁদের বুকে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনাও অনেক কম। চাঁদের বুকে বরং আছড়ে পড়তে চলেছে চিনের একটি রকেট। যার উৎক্ষেপণ হয়েছিল আট বছর আগে, ২০১৪ সালে।
চিনের মহাকাশ গবেষণা যদিও সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। সপ্তাহখানেক আগেই জানিয়েছে, তাদের বানানো কোনও রকেটের অংশ চাঁদের বুকে শুক্রবার আছড়ে পড়বে না। সেই রকেটের অংশের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ার সম্ভাবনাই বরং অনেক বেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy