তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা কেন এত বাড়ল চেরনোবিলে? -ফাইল ছবি।
ইউক্রেনের রাজধানী কিভ থেকে খুব দূরে না থাকা চেরনোবিলের পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র ও তার লাগোয়া এলাকাগুলিতে অত্যন্ত ক্ষতিকর গামা রশ্মির বিকিরণের মাত্রা বেড়ে স্বাভাবিকের ২০ গুণ হয়ে গিয়েছে। ইউক্রেনের সরকারি সূত্রে শুক্রবার এই খবর দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রের বাইরে বিশাল যে এলাকা জুড়ে রয়েছে এক্সক্লুসন জোন, তার সম্পূর্ণ অংশেই বিকিরণের মাত্রা এতখানি বেড়ে গিয়েছে।
কেন বেড়েছে তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সরকারি সূত্রটি জানিয়েছে, এক্সক্লুসন জোনের ঠিক বাইরেই এখন রাশিয়া ও ইউক্রেনের সেনাদের লড়াই চলছে। রুশ সেনাবাহিনীর দিক থেকে ক্রমাগত ছুটে আসছে বন্দুকের গুলি, মর্টার, কামানের গোলা। অদূরে বেলারুশ-ঘেঁষা ইউক্রেনের উত্তর সীমান্ত থেকে ছুটে আসছে প্রচুর রুশ ক্ষেপণাস্ত্র। এই গোলাবারুদেই এক্সক্লুসন জোনে গামা রশ্মির বিকিরণের মাত্রা গত তিন দিনে এতখানি বেড়ে গিয়েছে।
চেরনোবিলের পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের একাংশ বৃহস্পতিবারই দখল করে নেয় রুশ সেনারা।
চেরনোবিলের এক্সক্লুসন জোনে রয়েছে একটি অটোমেটেড রেডিয়েশন-মনিটরিং সিস্টেম। এর মাধ্যমেই এক্সক্লুসন জোনে গামা রশ্মি-সহ বিভিন্ন ধরনের তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা ঘণ্টায় ঘণ্টায় মাপা হয়। ১৯৮৬ সালে দু’-দু’টি ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রটির পরমাণু চুল্লি। সেই বিস্ফোরণে চুল্লির উপরের প্রায় দু’হাজার টন ওজনের ধাতব ঢাকনাটি উড়ে যায় এক লহমায়। তার পর তেজস্ক্রিয় বিকিরণ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে লাগোয়া এক হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকায়। তার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন। বিকিরণের ছোবল থেকে মানুষকে বাঁচাতে পরে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের বাইরে বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা হয় এক্সক্লুসন জোন। সেই সময়েই বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন, ২৪ হাজার বছর ওই এলাকা আর মানুষের বসবাসের পক্ষে উপযোগী করে তোলা সম্ভব হবে না। তার পরেই শুরু হয় সেই এক্সক্লুসন জোনে নিয়মিত বিকিরণ মাপার কাজ। যাতে আগামী দিনে পারমাণবিক বর্জ্য থেকে লাগোয়া এলাকাগুলিতে কোনও বিপদের সঙ্কেত আগেভাগেই মেলে।
রুশ সেনা চেরনোবিলের দখল নেওয়ার পরপরই হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি একটি বিবৃতিতে তীব্র আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘ওই কেন্দ্রের বহু কর্মীকে ধরে রেখেছে রুশ সেনারা। তার ফলে, পারমাণবিক বর্জ্যগুলিকে কড়া নজরদারিতে রাখার কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।’’
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, গত ক’দিন ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সেনাদের লড়াইয়ে ছোড়া গুলিগোলার আঘাতেই কোনও ভাবে ফাটল ধরতে পারে পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রের বাইরে দ্বিস্তরের দু’টি নিরাপত্তা প্রাচীরের বাইরেরটিতে। তার ফলে, দুটি প্রাচীরের মধ্যে থাকা তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বাইরে বেরিয়ে এসে ছড়িয়ে পড়েছে লাগোয়া এলাকাগুলিতে। ওই সব এলাকায় তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা সম্ভবত এই ভাবেই স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে অত্যন্ত ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলি থেকে বেরিয়ে আসা বিকিরণগুলির অন্যতম— গামা রশ্মি।
তবে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র ইগর কোনাশেঙ্কোভ ওই দাবি অস্বীকার করেছেন। জানিয়েছেন, বিকিরণের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে রুশ সেনারাও পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রের কর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন।
যদিও ব্রিটেনের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পারমাণবিক শক্তি বিশেষজ্ঞ প্রযুক্তিবিদ ব্রুনো মার্ক চেরনোবিল থেকে ততটা বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। তবে এ-ও জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে যদি কেউ ফন্দি এঁটে থাকে তা হলে বড় বিপদ ঘনিয়ে আসতেই পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy