Mehran Karimi Nasseri lived in France Airport for 18 years dgtl
France
চলত লেখাপড়া, ডায়েরি লেখা, বহু দেশ নাগরিকত্ব দিতে চাইলেও ১৮ বছর বিমানবন্দরেই কাটান ইনি
মেহরান করিমি নাসেরি। অধিক পরিচিত স্যর আলফ্রেড মেহরান হিসাবে। জীবনের ১৮টি বছর তিনি বিমানবন্দরেই কাটিয়ে দিয়েছেন। সে কারণে তিনি আবার ‘দ্য টার্মিনাল ম্যান’।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ ১২:২৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
মেহরান করিমি নাসেরি। অধিক পরিচিত স্যর আলফ্রেড মেহরান হিসাবে। জীবনের ১৮টি বছর তিনি বিমানবন্দরেই কাটিয়ে দিয়েছেন। সে কারণে তিনি আবার ‘দ্য টার্মিনাল ম্যান’।
০২১৯
১৯৮৮ সালের ২৬ অগস্ট থেকে ২০০৬ সালের জুলাই পর্যন্ত তিনি ফ্রান্সের শার্লে দি গৌলে বিমানবন্দরে থেকেছেন। থাকা, খাওয়া, পড়াশোনা সব কিছুরই সঙ্গী ছিল এই বিমানবন্দর।
০৩১৯
তাঁকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মামলাও হয়। কিন্তু ২০০৬ সালের জুলাইয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত কেউ তাঁকে বিমানবন্দর থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি।
০৪১৯
নাসেরির জন্ম ইরানে। বাবা ছিলেন ইরানের অ্যাংলো-পার্সিয়ান তেল কোম্পানির চিকিত্সক। মায়ের জন্ম স্কটল্যান্ডে। তিনিও কর্মসূত্রে এই কোম্পানিতে নার্স ছিলেন।
০৫১৯
১৯৭৩ সালে ইউনির্ভাসিটি অব ব্রাডফোর্ড থেকে ৩ বছরের একটি কোর্স করার জন্য তিনি ব্রিটেনে আসেন। তারপর ফের ইরানে ফিরে যান।
০৬১৯
১৯৭৭ সালে নাসেরি দাবি করেন, ইরানের শেষ রাজা মহম্মদ রেজা শাহের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় তাঁকে ইরান থেকে বার করে দেওয়া হয়। তারপর একাধিক দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানান তিনি। তবে তাঁর আবেদন গৃহীত হয়নি।
০৭১৯
বেলজিয়ামের ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার ফর রিফিউজি তাঁকে উদ্বাস্তু তকমা দেয়। যদিও ইরান থেকে তাঁকে বার করে দেওয়া হয়েছিল বলে নাসেরি যে দাবি করেছিলেন তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
০৮১৯
উদ্বাস্তু তকমা মেলায় তিনি ইউরোপের বেশ কিছু দেশে ঢোকার অনুমতি পেয়ে যান। বাকি জীবনটা ব্রিটেনে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন তিনি।
০৯১৯
১৯৮৮ সালে লন্ডনে যাওয়ার জন্য ফ্রান্স থেকে বিমানে ওঠেন তিনি। লন্ডনে অবতরণের পর ইমিগ্রেশন অফিসারদের কাছে নিজের পাসপোর্ট দেখাতে পারেননি। ফলে বিমানবন্দর থেকেই তাঁকে ফ্রান্সে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানেই তিনি গ্রেফতার হন।
১০১৯
তিনি দাবি করেছিলেন, লন্ডনের জন্য বিমান ধরার সময় তাঁর ব্যাগ চুরি হয়ে যায়। সেই ব্যাগেই পাসপোর্ট-সহ যাবতীয় জরুরি নথি ছিল।
১১১৯
ফরাসি পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করলেও শেষমেশ তিনি ছাড়া পেয়েছিলেন। কারণ লন্ডনের জন্য ফ্রান্সের বিমানবন্দর থেকে বিমান ধরার সময় তিনি নথি দেখিয়েছিলেন। সেই রেকর্ডের ভিত্তিতেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
১২১৯
আইনের চোখে নাসেরি উদ্বাস্তু ছিলেন। নির্দিষ্ট করে কোনও দেশেই তাঁকে পাঠানো সম্ভব ছিল না। আর তাঁর ইচ্ছা ছিল ব্রিটেন যাওয়ার। সেটাও সম্ভব ছিল না। সেই থেকে ফ্রান্সের ওই বিমানবন্দরের এক নম্বর টার্মিনাল হয়ে ওঠে তাঁর ঘর-বাড়ি।
১৩১৯
তাঁকে বিমানবন্দর থেকে সরানোর অনেক চেষ্টা হয়েছে। মামলাও হয়েছে। কিন্তু ১৯৯২ সালে ফ্রান্সের আদালত জানিয়ে দেয়, নাসেরি বেআইনিভাবে বিমানবন্দরে প্রবেশ করেননি। তাই তাঁকে সেখান থেকে সরানো যাবে না।
১৪১৯
নাসেরি চেয়েছিলেন ব্রিটিশ হতে। তিনি নিজের নাম বদলে হয়েছিলেন স্যর আলফ্রেড মেহরান। তাই পরবর্তীকালে বেলজিয়াম এবং ফ্রান্স তাঁকে নাগরিকত্ব দিতে চাইলেও নাসেরি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি।
১৫১৯
২০০৬ সালে অসুস্থ হয়ে এক নম্বর টার্মিনাল ছাড়েন নাসেরি। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরই তাঁর থাকার জায়গা ভেঙে ফেলেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
১৬১৯
এর পর হাসপাতাল থেকে তাঁর দায়িত্ব নেয় ফ্রান্সের রেড ক্রস। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কিছু দিন তাঁকে বিমানবন্দরের কাছে একটি হোটেলে রাখা হয়। পরে তাঁকে অভিবাসীদের একটি হোমে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৭১৯
বিমানবন্দরের এক নম্বর টার্মিনালে দীর্ঘ ১৮ বছর তিনি পড়াশোনা করে, ডায়েরি লিখে কাটিয়েছেন। বিমারবন্দরের কর্মীদের কাছ থেকেই খাবার খেতেন, তাঁদের সঙ্গে বসেই গল্প করতেন।
১৮১৯
২০০৪ সালে নাসেরির আত্মজীবনী ‘দ্য টার্মিনাল ম্যান’ প্রকাশিত হয়। তাঁর জীবনের উপর ভিত্তি করে ফিল্মও হয়েছে।
১৯১৯
‘লস্ট ইন ট্রানজিট’ নামে একটি ফরাসি ফিল্ম মুক্তি পেয়েছিল তাঁর জীবনী অবলম্বনে। লেখক-পরিচালক অ্যালেক্সি কুরোস তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র বানিয়েছেন।