Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Bangladesh Unrest

‘জয় বাংলা’ লিখে খুন ২,পরেশ বড়ুয়ার ফাঁসি রদ

পরিবার দু’জনকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মারা গিয়েছে মাসুদ ও রায়হান। খুনের কথা স্বীকার করলেও পুলিশের দাবি, নিছক ‘জয় বাংলা’ লেখার কারণেই এটা ঘটেছে বলে তারা মনে করে না।

এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে।

এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:২৭
Share: Save:

বিজয় দিবসে রঙের স্প্রে-ক্যানিস্টার নিয়ে দেওয়ালে দেওয়ালে ‘জয় বাংলা’ লিখে দিচ্ছিল ছেলেটা। পরিবর্তিত বাংলাদেশে দিনের আলোয় এই কাজ করা যায় না, তাই নিঝুম শীতের রাতকে বেছে নিয়েছিল পলিটেকনিক স্কুলের ছাত্র মাসুদ রানা। বয়সে আরও ছোট পাড়ারই স্কুলছাত্র রায়হানের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল মোবাইল ফোন, ভিডিয়ো তোলার জন্য। সেই ভিডিয়ো ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছিল মাসুদ।

পরের দিন রাত সাড়ে ১০টার সময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের মল্লিকপুর বাজারে মাসুদ এবং রায়হানের বাড়িতে চড়াও হয় সরকার সমর্থক ‘তৌহিদি-জনতা’, যাদের নামে এখন বাংলাদেশে সাত খুনও মাফ। মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান লেখার সাহস কোথা থেকে পেল তারা, প্রধানত এই ছিল জিজ্ঞাস্য। সঙ্গে চড়চাপড়। ‘শিক্ষা দিতে’ বাড়ির বাইরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় দুই তরুণকে, যারা ছাত্র লীগের কর্মী বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ। আধ ঘণ্টা ধরে প্রবল মারের পরে সংজ্ঞাহীন দু’জনকে ফেলে উধাও হয় ‘ছাত্র-জনতা’। পরিবার দু’জনকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মারা গিয়েছে মাসুদ ও রায়হান। খুনের কথা স্বীকার করলেও পুলিশের দাবি, নিছক ‘জয় বাংলা’ লেখার কারণেই এটা ঘটেছে বলে তারা মনে করে না।

এর মধ্যেই বুধবার ঢাকার হাই কোর্ট ২০ বছর আগে চট্টগ্রামে ধরা পড়া ১০ ট্রাক অস্ত্রশস্ত্রের মামলার রায়ে অসমের জঙ্গি সংগঠন আলফা-র তৎকালীন সামরিক প্রধান পরেশ বড়ুয়ার প্রাণদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করল। তার চেয়েও বড়কথা, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী জোট সরকারের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর-সহ ৬ আসামিকে এ দিন বেকসুর খালাস দিয়ে দিয়েছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। বাবর, শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামি, পরেশ-সহ ১৪ জনকে প্রাণদণ্ড দিয়েছিল নিম্ন আদালত। যুদ্ধাপরাধের মামলায় শিল্পমন্ত্রী তথা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির (প্রধান) নিজামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে ইতিমধ্যেই। তবে বাকিদের শাস্তির মেয়াদ কামিয়ে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডদেওয়া হয়েছে।

২০০৪-এর ১ এপ্রিল একটি জাহাজে করে বিপুল পরিমাণ আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র এনে চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর উপরে সরকারের শিল্প দফতরের জেটিতে খালাস করা হয়। অ্যাসল্ট রাইফেল ছাড়া রকেট লঞ্চার, রকেট, মেশিনগান এবং প্রচুর পরিমাণ গোলাগুলি এর পরে ১০টি ট্রাকে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরে সেগুলি ধরা পড়ে যায়। বি‌এনপি-জামায়াত সরকার তদন্তের নামে প্রমাণ লোপাট করে ঘটনা ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লেগেছিল। তার পরে অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখল করা সেনা সরকার তদন্ত করে জানতে পারে, ভারতের অসমের বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠন আলফা-র জন্য চিন থেকে এই অস্ত্র আনা হয়েছিল। তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী জামায়াত নেতা নিজামি এবং প্রতাপশালী স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর বিষয়টি শুধু জানতেনই নয়, সহযোগিতাও করেছিলেন। বাংলাদেশের জেএমবি জঙ্গিরা এই ট্রাকগুলি অসমে পৌঁছে দেবে বলে ঠিক ছিল, বিনিময়ে তাদেরও কিছু অস্ত্রশস্ত্র পাওয়ার কথা ছিল। বাবরকে গ্রেফতার করার পর থেকে তিনি এখনও জেলেই রয়েছেন। এই মামলায় খালাস পেলেও অন্য মামলায় তাঁকে জেলেই থাকতে হবে।

এ দিনই কাকভোরে ঢাকার অদূরে টঙ্গিতে তুরাগ নদীর তীরে তাবলিগ জামাতের আন্তর্জাতিক সমাবেশ‘বিশ্ব ইজতেমা’-কে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে অন্তত ৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। জখম হয়েছেন একশোর বেশি মানুষ। মৌলানা জুবায়েরের অনুসারীদের অভিযোগ, বিশ্বের বৃহত্তম এই ইসলামি তীর্থ সমাবেশে উপস্থিত তাঁদের লোকেরা রাতে যখন তাঁবুর মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলেন, মৌলানা সাদের অনুসারীরা অস্ত্র নিয়ে হামলা করে কোপাতে থাকে। সংঘর্ষ ছড়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। ময়দানের আশপাশের বাড়িঘরে আগুনলাগানো হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আপাত শান্তিরব্যবস্থা করেছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh Unrest Bangladesh awami league Bangladesh Awami League Deaths
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy