• ভারতের বৃহত্তম ব্যাঙ্কের কর্ণধার হিসেবে এই সংস্থাকে কী ভাবে দেখেন?
স্টেট ব্যাঙ্ক শুধু ব্যাঙ্কিং ব্যবসাই যে করে, তা তো নয়। বরং সাধারণ গ্রাহকদের রকমারি লেনদেন, এমনকী তাঁদের বৈষয়িক সিদ্ধান্তের সঙ্গে পা মিলিয়ে হাঁটতে হয় আমাদের। যেমন ধরুন, উইল। এমনিতে উইল বানানোর ঝক্কি কম নয়। তাতে আইনি মারপ্যাঁচ বুঝতে হয় যথেষ্ট। কিন্তু সেই গোলকধাঁধায় না-ঘুরে আমাদের ওয়েবসাইট থেকেই আপনি উইল লিখে ফেলতে পারবেন। স্টেট ব্যাঙ্কের সাইটই আপনাকে সাহায্য করবে সেই উইল লিখতে। এ জন্য আমাদের সাইটে ঢুকে ‘লগ ইন’ করতে হবে। দিতে হবে ২,৫০০ টাকা।
• সকলের জন্য ব্যাঙ্ক— গত কয়েক বছর ধরে এই পরিকল্পনা খুব বেশি এগোয়নি। কেন?
দেখুন, শহর-গ্রাম-এমনকী দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তেও সকলের দরজায় ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দেওয়াটা একটা মস্ত চ্যালেঞ্জ। বলতে পারেন, একটা যুদ্ধ। এই লড়াইয়ে যে এখনও পর্যন্ত খুব একটা এগোনো যায়নি, তার একটা বড় কারণ প্রযুক্তি। তা ছাড়া, ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে দিতে পারাটাই এই যুদ্ধের শেষ কথা নয়। বরং সেই অ্যাকাউন্ট নিয়মিত ব্যবহার করাতে পারাই হল আসল চ্যালেঞ্জ।
এক জন দিনমজুরের কথাই ধরুন। শুরুতে একটি অ্যাকাউন্ট না হয় তিনি খুললেন। কিন্তু ব্যাঙ্কে গিয়ে সেই অ্যাকাউন্টে লেনদেন করতে গেলে তাঁকে হয়তো এক দিনের মজুরি হারাতে হবে। তা হলে সেই মজুরি হারিয়ে নিজের ক্ষতি করে ব্যাঙ্কের সুবিধা তিনি নিতে যাবেন কেন?
তা ছাড়া, এঁদের হাতে দিনের-দিন টাকা আসে। কোনও কোনও দিন আবার তা আসেও না। টাকার অঙ্ক নেহাতই অল্প। তাই হাতে থাকলে, তা খরচও করে ফেলেন তাঁরা। এটাই স্বাভাবিক। সারদার মতো সংস্থা কোথায় গিয়ে এই বাজারটা ধরে? তাদের এজেন্ট রোজ নিয়ম করে দিনমজুরদের কাছে গিয়ে দিনের শেষে টাকা সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। যেটা আমরা পারিনি। তাই প্রাথমিক সমস্যা হল, এই সব মানুষের দরজায় পৌঁছনো। তাঁদের মতো করে তাঁদের প্রয়োজন বোঝা।
• আর পরের সমস্যা?
পরের সমস্যাটি হল সঞ্চয়। এই ধরনের সাধারণ মানুষ ভেবে পান না যে, তাঁরা পেটের কথা ভেবে বা আজ-বাদে-কাল কিছু কিনতে যা প্রয়োজন হবে, তার জন্য টাকা জমাবেন, না কি তা তুলে রাখবেন ভবিষ্যতের জন্য— যাতে দীর্ঘ মেয়াদে আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়।
জন-ধন প্রকল্পের মজা হল, এখন এঁদের হাতে কার্ড তুলে দেওয়া হচ্ছে। তা ব্যবহার করে যে-কোনও এটিএম থেকে প্রয়োজন বুঝে টাকা তুলতে পারছেন তাঁরা। আমরা গ্রামে গ্রামে ‘বিজনেস করেসপন্ডেন্ট’দের পৌঁছে দিতে চাইছি। যাঁরা আমাদের প্রত্যেক গ্রাহকের কাছে ব্যক্তিগত ভাবে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসবেন পরিষেবা।
ইতিমধ্যেই ৬৬ হাজার গ্রামে আমরা পৌঁছে গিয়েছি। চাইছি, প্রতিটি গ্রামে যেন অন্তত একজন বিজনেস করেসপন্ডেন্ট থাকেন। আমাদের একটি শাখা ১৫ থেকে ৪০টি গ্রামের দায়িত্বে থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে যতগুলি গ্রাম কোনও শাখার কাজের আওতায় রয়েছে, অন্তত তত জন বিজনেস করেসপন্ডেন্ট সেই শাখায় থাকতে হবে।
• কী ভাবে কাজ করবেন এঁরা?
এঁদের কাছে একটি আঙুলের ছাপ স্ক্যান করার যন্ত্র (ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার) থাকবে। গ্রাহকদের আঙুলের ছাপ যাচাই করার পরে আর একটি যন্ত্রে ডেবিট কার্ড সোয়াইপ করে (ঘষে) টাকা তোলা বা জমা দেওয়ার কাজ করা যাবে। প্রতিটি লেনদেনের জন্য রসিদও বেরোবে ওই যন্ত্র থেকে।
• বিজনেস করেসপন্ডেন্টদের হাত ধরে আপনারা প্রত্যন্ত গ্রামেও ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। অথচ তাঁদের অভিযোগ, পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রাপ্য টাকা তাঁরা ঠিক সময়ে পাচ্ছেন না।
ঠিক সময়ে টাকা না-পাওয়ার এই অভিযোগ কিন্তু ঠিক নয়। একটা সময়ে কিছু সমস্যা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তা এখন মিটে গিয়েছে।
• এই পুরো ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের দরজায় পৌঁছতে এত সময় লেগে যাচ্ছে কেন?
এক কথায় এর উত্তর হল সুরক্ষা। গ্রাহকের দরজায় শুধু টাকা জমা-তোলা কিংবা অন্যান্য ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দিলেই তো হবে না। যে-প্রযুক্তি মারফত তা পৌঁছবে, আগে তা হতে হবে সুরক্ষিত। তা এই প্রযুক্তি সুরক্ষিত করে তুলতেই আমাদের সময় লেগে গিয়েছে প্রায় বছর দশেক।
অনেক আগে আমরা উত্তর-পূর্ব ভারতে কার্ড ছেড়েছিলাম। কিন্তু সেই প্রযুক্তি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত এবং বহুল প্রচলিত করে তুলতে আমাদের সময় লেগেছে। এখন আমরা সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত। মাঝে আধার নম্বর হয়ে যাওয়ায় আমাদের বিস্তর সুবিধা হয়েছে। কারণ, শুধু তা দিয়েই যন্ত্রে গ্রাহকের আঙুলের ছাপ মেলানো যাচ্ছে।
• কিন্তু ব্যাঙ্কের কাজ করে যাঁরা অভ্যস্ত নন, তাঁদের এই ব্যাপারে প্রশিক্ষিত করে তোলাও তো একটা মস্ত চ্যালেঞ্জ?
নিশ্চয়ই। তবে এই পুরো কাজটিকে আমরা একটি সার্বিক জায়গা থেকে দেখার চেষ্টা করছি। সঞ্চয় এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক শিক্ষা— মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই দুুই জায়গাকে মিলিয়ে নিয়ে আলাদা একটা জায়গায় পৌঁছতে চাইছি আমরা।
এই লক্ষ্য মাথায় রেখেই আমরা ১১৬টির মতো গ্রামীণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করেছি। এগুলির মাধ্যমে গ্রামে-গ্রামে কারিগরি শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। যেমন, মোবাইল ফোন সারানো।
একই সঙ্গে আবার আর্থিক প্রশিক্ষণের ক্যাম্প করা হচ্ছে। ছোট ব্যবসা করতে কী ভাবে ঋণ পাওয়া যায়, তা শেখানো হচ্ছে সেখানে। দেওয়া হচ্ছে তার জন্য প্রয়োজনীয় ধারও। এ ব্যাপারে বিভিন্ন অ-সরকারি সংস্থার সঙ্গে হাত মেলাচ্ছি আমরা। যেমন, দোরাবজি টাটা ট্রাস্ট।
• যেটা আপনি বলছিলেন, শুধু অ্যাকাউন্ট খুলেই দায়িত্ব শেষ নয়...
একেবারেই তাই। দেখুন, ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন বা সকলের জন্য উন্নয়ন মানে শুধু ব্যাঙ্কে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্ট খোলা নয়। বরং প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় আর্থিক লেনদেনে সকলকে সামিল করা। আর বুঝতেই পারছেন, ওই ব্যবস্থায় সবাইকে নিয়ে আসার কাজটা শুধু অ্যাকাউন্ট খোলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না।
আমরা দেখেছি, অনেকেরই হয়তো অ্যাকাউন্ট আছে। কিন্তু তাঁরা তার কার্ড ব্যবহার করতে ভয় পান। দ্বিধা বোধ করেন ব্যাঙ্কে কাজ করতে যেতে। এই ভয় বা দ্বিধা ভাঙিয়ে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় তাঁদের সড়গড় বা অভ্যস্ত করে তোলাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। যেমন ধরুন, প্রতি কুড়ি দিনে একবার কার্ড ব্যবহার করলে যে বিমার সুযোগ পাওয়া যায়, তা-ও কিন্তু অনেকে জানেন না।
• এই প্রসঙ্গে একটা কথা জেনে রাখি। জন-ধন প্রকল্পের আওতায় থাকা কেউ মারা গেলে, বিমার টাকা কী ভাবে পাওয়া যাবে?
এ ক্ষেত্রে বিমার টাকা পেতে ব্যাঙ্কের শাখার মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। তারপরে গ্রাহকের সেই আবেদন বিমা সংস্থার কাছে পৌঁছে দেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কই। টাকা পেতে অসুবিধা হবে না।
• তার মানে, নমিনির নাম নথিভুক্ত করতে হবে। তাই তো?
আমরা এখন প্রতিটি অ্যাকাউন্টেই নমিনির উল্লেখ করতে বলছি। যাতে টাকা পেতে গ্রাহকের উত্তরাধিকারীর কোনও অসুবিধা না-হয়।
• আপনার কথা অনুযায়ী, জন-ধন ব্যবস্থার লক্ষ্য সফল করতে হলে প্রযুক্তি-নির্ভরতা বাড়াতে হবে। এটিএম এই ব্যবস্থার অন্যতম অস্ত্র। কিন্তু মুশকিল হল, এটিএমে ১০০০, ৫০০ আর ১০০ টাকার নোট পাওয়া যায়। অনেক সময়ে এমনকী টান পড়ে ১০০ টাকার নোটেও। কিন্তু সাধারণ মানুষ সব সময়ে এত বড় নোট হাতে পেলে তা দিয়ে কী করবেন?
আমার মতে, সাধারণ মানুষের উচিত পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস বা পস*) থেকে টাকা তোলা। এটা ঠিকই যে, শহরে এই সমস্ত কেন্দ্র ততটা দৃশ্যমান নয়। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি সেই খামতি মিটিয়ে ফেলতে। তবে গ্রামের ক্ষেত্রে এটিএম নয়, পস-ই উপায়। কারণ, এটিএমে নিয়মিত গাড়ি পাঠিয়ে টাকা ভরতে হয়। প্রত্যন্ত গ্রামে সেই কাজ খুব সহজ নয়।
• আর একটা অভিযোগ আছে কেওয়াইসি ফর্ম নিয়ে। ওই ফর্ম জমা দিয়ে কোনও রসিদ বা প্রমাণপত্র পাওয়া যায় না। ফলে অনেককেই এই কারণে একাধিক বার ফর্ম জমা দিতে হচ্ছে।
কেওয়াইসি ফর্ম হারানো নিয়ে যে -অভিযোগের কথা আপনি বললেন, তা আমি নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখব। এটা হওয়া একেবারেই উচিত নয়।
• মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ে তো আপনারা ঢুকেছেন অনেক পরে...
ঠিকই। মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ে স্টেট ব্যাঙ্ক অনেক পরে ঢুকেছে। ২০০৮-’০৯ সালে, আমি যখন এই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিফ জেনারেল ম্যানেজার, তখনই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। নথিভুক্ত (রেজিস্টার্ড) ব্যবহারকারীর সংখ্যার নিরিখে শুরুতেই আমরা শীর্ষে পৌঁছে যাই। এখন আমাদের মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ে সব কিছু করা যায়। এমনকী মিনি পাসবুক পর্যন্ত। এতে গত এক বছরের লেনদেনের সমস্ত হিসাব পাবেন আপনি।
• আর দু’বছর পরে আপনার অবসর। এই দু’বছরে স্টেট ব্যাঙ্ককে কোথায় নিয়ে যেতে চান আপনি?
আমার লক্ষ্য, আগামী দু’বছরের মধ্যে স্টেট ব্যাঙ্ককে সর্ম্পূণ প্রযুক্তি নির্ভর ব্যাঙ্ক করে তোলা। গ্রাহক পরিষেবাকে আরও উন্নত করা। তা ছাড়া, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের ক্রমাগত বাজারে আনতে থাকতে হবে এমন সব নতুন নতুন প্রকল্প, যাতে গ্রাহকরা উপকৃত হন।
উদাহরণ দিয়ে বলি। আমাদের যখন বয়স কম ছিল, তখন ব্যাঙ্কগুলিতে প্রথাগত কিছু প্রকল্প ছাড়া আর কিছু পাওয়া যেত না। এখন আপনার চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা ঋণ প্রকল্প তৈরি করছি। এখন আপনি চাকরিতে ঢুকেই একটা ফ্ল্যাট কেনার জন্য ঋণ নিতে পারছেন। সেই ফ্ল্যাটে ঢোকার আগেই আপনার আয় বাড়ছে। তখন আপনি আবার একটা ফ্ল্যাট বা গাড়ি কেনার জন্য ধার নিতে পারছেন। শুধু তা-ই নয়। প্রকল্পগুলিতে গ্রাহকের চাহিদা বুঝে নানা পরিবর্তনও করা যাচ্ছে। আগে কিন্তু এই সমস্ত সুবিধা তেমন ছিল না।
ম্যাক্স গেন প্রকল্পের কথাই মনে করুন। ধরা যাক, আপনি ঋণ নিয়েছেন। তা শোধের জন্য মাসিক কিস্তি (ইএমআই) দেওয়া শুরু করলেন। এ বার আপনি বোনাস পেলেন। কিন্তু সেই টাকা এখনই খরচ করতে চান না। ওই টাকা আমানত হিসেবে রাখলে (ফিক্সড ডিপোজিট) আপনি একটা সুদ পাবেন। এই প্রকল্পে এ ধরনের টাকা খাটানো বেশ সুবিধা।
কী ভাবে? সাধারণ আমানত হিসেবে রাখার বদলে আপনি বরং ওই টাকা ঋণের অ্যাকাউন্টে ফেলুন। তাতে আপনার ইএমআই কমবে। স্বল্পকালীন ভিত্তিতে কিছুটা কমে যাবে আপনার ঋণের মোট অঙ্কও। আবার যখন প্রয়োজন হবে, তখন ওই টাকা ফের তুলে নেওয়া যাবে। তুলে নেওয়ার পরে আপনার ইএমআই ফের পুরনো অঙ্কেই ফিরে যাবে। কিন্তু মাঝখান থেকে টাকা রেখে অন্তত কিছু দিনের জন্য কম ইএমআইয়ের সুযোগ পেলেন। এই ভাবেই আপনাদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ঋণ প্রকল্পগুলিকে নতুন সাজে সাজিয়ে তুলছি আমরা।
আর একটা উদাহরণ। মনে করুন, কেউ তাঁর পরিবার থেকে দূরে থাকেন। কিন্তু প্রতি মাসে তাঁকে পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে হয়। সাধারণত এই সমস্ত ক্ষেত্রে তাঁকে নানা রকম ফর্ম ভরতে হয়। অনেকের কাছেই এই কাজ বেশ ঝক্কির। এই সমস্যার কথা ভেবেই ‘গ্রিন রেমিট কার্ড’ তৈরি করেছি আমরা।
এই কার্ডের সুবিধা হল, এ ধরনের ক্ষেত্রে যে-কেউ তা ব্যবহার করে টাকা পাঠাতে পারবেন। এর জন্য প্রথমে ব্যাঙ্কের যে-কোনও শাখায় গিয়ে নিজের অ্যাকাউন্ট আর পরিবারের যে-অ্যাকাউন্টে নিয়মিত টাকা পাঠাতে চান, সেই অ্যাকাউন্টের নম্বর দিতে হবে। তা হলেই সেই তথ্য ভরে একটি কার্ড তাঁকে দেওয়া হবে। ফলে এ বার যখনই প্রয়োজন হবে, তখনই যে- কোনও শাখায় বা পস-এ গিয়ে ওই কার্ড ঘষে টাকা পাঠিয়ে দিতে পারবেন সংশ্লিষ্ট গ্রাহক। যেহেতু এই কার্ডে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য আর একটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টেই টাকা পাঠানোর তথ্য ভরা থাকে, তাই তা একেবারে সুরক্ষিত। হারিয়ে গেলেও চিন্তা নেই। সঙ্গে সঙ্গেই আর একটি কার্ড পেয়ে যাবেন। এই কার্ড চুরি করে চোরের কোনও লাভ নেই!
এই দু’টি উদাহরণ আপনাকে বললাম কেন জানেন? কারণ এই দু’টি উদাহরণ আমাদের পদক্ষেপের দিক নির্দেশ করছে। প্রকল্প এবং প্রযুক্তিকে মিশিয়ে সাধারণ মানুষের চাহিদা আরও বেশি করে মেটানোই আমাদের আগামী দু’বছরের লক্ষ্য।
* ব্যাঙ্কের নির্দেশ মেনে কোনও দোকান হয়তো অল্প পরিমাণ টাকা দেওয়া-নেওয়ার কাজ করে।
শাখার বাইরে এ ধরনের লেনদেনের জায়গাকেই বলে পয়েন্ট অব সেলস বা পস।
অন্য অরুন্ধতী
এক কথায় নিজেকে বর্ণনা করবেন কী ভাবে? স্মিত হেসে ছোট্ট উত্তর, “আমি আমার কাজ করি।”
ভারতের এক নম্বর ব্যাঙ্কের এক নম্বর মানুষটি এই মুহূর্তে আর্থিক বাজারে অন্যতম ক্ষমতাশালী। কিন্তু শুধু সেই কারণেই অরুন্ধতী ভট্টাচার্যকে শ্রদ্ধামিশ্রিত সম্ভ্রমের চোখে দেখেন না সহকর্মীরা। তাঁদের মতে, অনেক ছোট ছোট আপাত সাধারণ গুণই এই বাঙালি ভদ্রমহিলাকে আর পাঁচ জনের থেকে আলাদা করে দিয়েছে। পৌঁছে দিয়েছে এই উচ্চতায়।
বাবা কাজ করতেন ইস্পাত সংস্থা সেল-এ। ছোটবেলা কেটেছে ভিলাইয়ে। তারপর ইংরেজি নিয়ে কলকাতায় লেডি ব্রেবোর্ন এবং যাদবপুর। চেয়েছিলেন সাংবাদিক হতে। কিন্তু হয়ে গিয়েছেন ব্যাঙ্কার। স্বামী ছিলেন আইআইটি খড়্গপুরে। রাঁধতে ভালবাসেন। অরুন্ধতীদেবীর হাতে তৈরি মেয়োনেজ না কি এক সময়ে বিখ্যাত ছিল তাঁর স্বামীর বন্ধু-বান্ধবদের আড্ডায়। বাড়িতে তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। নিজেই বলেন, আজ এই জায়গায় পৌঁছনোর পিছনে প্রচুর ত্যাগ রয়েছে তাঁর পরিবারের।
এক কথার মানুষ তিনি। সময়ের কাজ সময়ে চান। তবে পরিবারের জন্য সময় বার করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। কারণ, কাজের চাপে প্রায় সর্বদা চরকি পাকে তিনি ব্যস্ত। মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাতে পারাটাই বরং তাঁর কাছে বিলাসিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বই পড়তে ভালবাসেন। বিছানার পাশের টেবিলে এখন রয়েছে দীপক চোপড়ার ‘সেভেন স্পিরিচুয়াল লজ অব সাকসেস’। পি ডি জেমসের উপন্যাস থেকে রাউলিংয়ের গলব্রেথ ছদ্মনামে লেখা গোয়েন্দা উপন্যাস সবেতেই তাঁর স্বচ্ছন্দ গতি। ইতিহাসের প্রতি আকর্ষণ বরাবরের। ইদানীং একাধিক বই একই সঙ্গে পড়ে চলেন। যখন যেমন সময় পান।
আর্থিক সংবাদের জগতে বাদ যায় না তাঁর শাড়ির রং নিয়ে আলোচনাও। সেখানে অভিযোগ, চাকচিক্যহীনতার! জবাবে আবার সেই স্মিত হাসি। সংক্ষিপ্ত উত্তর, “পরি তো। কিন্তু তা বলে কাজের জায়গায় নয়। গাঢ় সবুজ রংয়েরশাড়িতে ছবিও তো বেরিয়েছে। খবরের কাগজেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy