• বাবা মারা গিয়েছেন ১৪ বছর আগে। একটি কোম্পানির ৩,০০০ শেয়ার ছিল তাঁর কাছে। বাবার উত্তরাধিকারী ৩ জন, আমি, মা ও ভাই। আমি ও ভাই বিবাহিত। মায়ের বয়স ৬৪। বাবা কোনও উইল করে মারা যাননি। আমরা এখনও পর্যন্ত কোনও সাকশেসন সার্টিফিকেট বের করিনি। এই সাকশেসন সার্টিফিকেট পাওয়ার পদ্ধতি কী? এতে কি স্ট্যাম্প ডিউটির প্রয়োজন হয়? তা নির্ধারণ করা হয় কী ভাবে?
লিপি দাঁ, হাওড়া
• আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মারা গিয়েছেন কয়েক মাস আগে। তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলে (বয়স যথাক্রমে ২৪ ও ১৭ বছর) রয়েছে। তিনি একটি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টে তাঁর গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের প্রায় ১০ লক্ষ টাকা রেখেছিলেন। কিন্তু, ওই অর্থের কোনও নমিনি নেই। এখন ব্যাঙ্ক বলছে, ওই টাকা তুলতে ‘সাকশেসন সার্টিফিকেট’ লাগবে। আইনজীবীর কাছে যাওয়ার পর, যাবতীয় খরচ-সহ তিনি বিপুল অর্থ লাগবে বলে জানিয়েছেন। বন্ধুর স্ত্রীর পক্ষে দুই সন্তান-সহ সংসার চালিয়ে সামান্য পেনশনের টাকায় ‘সাকশেসন সার্টিফিকেট’-এর জন্য বিপুল খরচ করা সম্ভব নয়। জানতে চাই, ওই সার্টিফিকেট পাবার জন্য আসল খরচ কত হতে পারে?
স্বরাজনাথ সরকার
আপনাদের দু’জনেরই মূল প্রশ্ন কার্যত এক। প্রত্যেকেই সাকশেসন সার্টিফিকেট সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে চান।
লিপি দাঁ, বাবা যখন উইল করে যাননি, তখন আপনি, আপনার মা ও ভাই, তিন জনেই বাবার সম্পত্তির হকদার। সাধারণত স্থাবর সম্পত্তি ভাগ বণ্টনের ক্ষেত্রে ‘উইল’ বা ‘ইচ্ছাপত্র’ ইত্যাদির প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু অস্থাবর সম্পত্তি পাবার জন্য উত্তরাধিকারীদের সাকশেসন সাটির্ফিকেট পাওয়ার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতেই হয়। নাম থেকেই বুঝতে পারছেন যে, ‘সাকশেসর’ বা উত্তরাধিকার সংক্রান্ত শংসাপত্র পাওয়ার জন্যই আদালতে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
স্বরাজনাথ সরকার যে সমস্যার কথা বলছেন সেটাও ওই সাকশেসন সার্টিফিকেট কী ভাবে বের করতে হবে, সেই সংক্রান্ত একটি সমস্যা। স্বরাজবাবুর প্রশ্নের আর একটি অংশ হল, তাঁরা যখন আইনজীবীর কাছে গিয়েছেন, তিনি বিপুল অর্থের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন। স্বরাজবাবু, আপনাকে জানাই, আইনজীবী কী বলেছেন, কত খরচ চেয়েছেন, সে সম্পর্কে আমার মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। তবে মামলা চালাবার জন্য যতটুকু খরচ প্রয়োজন, সেটুকু তো আপনাকে করতেই হবে।
এ বার আসি কী ভাবে এই সার্টিফিকেট পাবেন, সেই প্রসঙ্গে—
মৃত ব্যক্তির অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে, যে কোনও ব্যক্তি নিজের দাবির প্রমাণপত্র-সহ সাকশেসন সার্টিফিকেটের জন্য দরখাস্ত করতে পারেন। যে কোনও হিন্দু ব্যক্তি (এ ছাড়াও ব্রাহ্ম, শিখ, জৈন বা বৌদ্ধ) সাকশেসন সার্টিফিকেটের জন্য দরখাস্ত করতে পারেন, যেখানে উইল বা চরমপত্র নেই। যে স্থানে উইল বা চরমপত্র আছে, সেখানেও যদি ডেট বা সিকিউরিটির প্রতি নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা না-করা যায়, সেই ক্ষেত্রেও সাকশেসন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে, সিকিউরিটি মানে, প্রমিসরি নোট, ডিবেঞ্চার, স্টক বা অন্য কোনও রকম সিকিউরিটি যা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি হতে পারে অথবা স্টক বা ডিবেঞ্চার বা কোনও কোম্পানির শেয়ার হতে পারে।
ভারতীয় উত্তরাধিকার আইনের অধীনে সাকশেসন সার্টিফিকেটের জন্য, নির্দিষ্ট জুরিসডিকশন বা এলাকার দেওয়ানি আদালতে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে আপনাকে দিতে হবে—
• কার উত্তরাধিকারী হিসেবে আপনি শংসাপত্র চাইছেন।
• কখন কোথায় তিনি গত হন।
• মৃত্যুর সময় তাঁর সাধারণ বসবাসের ঠিকানা এবং যদি সেই ঠিকানা, সেই আদালতের অধীনে না-ও হয়, তা হলে যেখানে আবেদন করা হচ্ছে, সেই আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকায় মৃতের সম্পত্তির বিবরণ দিতে হবে।
• মৃতের পরিবার ও তাঁর নিকট আত্মীয়ের নাম, বিবরণ ও ঠিকানা।
আবার হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের অধীনে মামলা দায়ের হলে একই ভাবে ওই আইন অনুযায়ী মৃতের উত্তরসূরিদের নাম ও ঠিকানা, আবেদনকারীর দাবি করার অধিকারের বিবরণ, সেই সমস্ত অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণ যার উপর শংসাপত্র দাবি করা হচ্ছে।
সাকশেসন সার্টিফিকেট পাওয়ার অন্যতম বিষয় হল, সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য। এই বাজার মূল্যের উপরেই কোর্ট ফি ধার্য হবে। এবং তা আপনাকে দিতেই হবে।
• আমার অবিবাহিত ভাই, একটি সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দুই লক্ষ বাইশ হাজার টাকা রেখে মারা যান। ওই অ্যাকাউন্টের কোনও নমিনি-ও সে রেখে যায়নি। বর্তমানে তার উত্তরাধিকারী আমি ও আমার বিধবা মা। এখন আমার মা ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিতে চান। তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই। আমরা আমাদের যাবতীয় নথি আদালতে পেশ করি। সাকশেসন সার্টিফিকেটে উত্তরাধিকারীদের নাম স্বীকৃত হয়েছে। ব্যাঙ্কও সমস্ত কাগজপত্র ছেড়ে দিয়েছে।
এখন সমস্যা হল, ব্যাঙ্ক দুজন গ্যারান্টার চাইছে। যাঁদের ওই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে এবং সেই অ্যাকাউন্টে ২ লক্ষ ২২ হাজার টাকা রাখা আছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমরা এমন কাউকে খুঁজে পাইনি। এই পরিস্থিতিতে কী করব?
নবনীতা রায়
আপনি বলেছেন অবিবাহিত ভাই তাঁর সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দুই লক্ষ বাইশ হাজার টাকা রেখে মারা গিয়েছেন। আপনারা সাকশেসন সার্টিফিকেট পেয়েও গিয়েছেন। তবে আপনার সমস্যাটা অন্য জায়গায়। ব্যাঙ্ক এখন দু’জন গ্যারান্টার চাইছে যাঁদের ওই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে এবং তাতে দু’লক্ষ বাইশ হাজার টাকা রাখা আছে।
দেখুন এটা কিন্তু ‘সাকশেসন সার্টিফিকেট’ পাওয়া সংক্রান্ত ব্যাপার নয়। এটা ব্যাঙ্কের সম্পূর্ণ নিজস্ব একটা ব্যাপার।
আসলে ব্যাঙ্ক এমন গ্রাহক খুঁজছে, যার ওই পরিমাণ টাকাটা আছে। অনেকেই গ্যারান্টার হতে রাজি হন। অনেকে আবার হতেও চান না। তবে সাধারণ ভাবে সমস্যা হয় না। সমস্যা তৈরি হলে যাতে ওই গ্যারান্টারদের সহায়তা পাওয়া যায়, সেই জন্যই এই নীতির সৃষ্টি। তাই আপনি বরং এক কাজ করুন, ব্যাঙ্কের সঙ্গেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলুন।
পরামর্শদাতা জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy