গিরিজাশঙ্কর
১৯২৩–এর নভেম্বর মাসে টালা অঞ্চলের সম্ভ্রান্ত সংগীতরসিক মন্মথনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে বসেছিল এক গানের আসর। সেখানে মাঝেমধ্যেই সংগীতের আসর বসলেও সে দিনের আকর্ষণ ছিল কিছুটা ভিন্ন। সেই আসরের বিশেষ শিল্পীকে নিয়ে শ্রোতাদের আকর্ষণ আর উৎসাহের অন্ত ছিল না। সকলেই জানতেন তাঁর গান শোনা মানেই এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়।
যথাসময়ে গৃহকর্তার নির্দেশে গাড়ি পাঠানো হয়েছিল শিল্পীকে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও শিল্পী কিংবা গাড়ির চালক কারও দেখা নেই। এ ভাবেই রাত দশটা বেজে গেল! গাড়ির চালক শিল্পীর বাড়িতে গিয়ে জানতে পারলেন শিল্পী অন্যত্র গান গাইতেন গিয়েছেন। কখন ফিরবেন তার ঠিক নেই। তাই অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য হয়ে অবশেষে ফিরে এসে তিনি গৃহকর্তাকে ব্যাপারটা জানালেন। সে দিন গান হবে না শুনে অন্যরা বিরক্ত হলেও মন্মথবাবু কিন্তু একটুও বিরক্ত হলেন না। কেননা তিনি জানতেন, গান গাইতে বসে সেই শিল্পী এতটাই বিভোর হয়ে পড়েন যে, হুঁশ থাকে না। জাগতিক গণ্ডি ছাড়িয়ে তিনি চলে যান সংগীতমুখর এক ভিন্ন লোকে। তিনি গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তী।
সে দিন গান হল না ঠিকই, তবে মন্মথবাবুও ছাড়ার পাত্র নন। তিনি সেই নভেম্বরেই আবারও আয়োজন করলেন গিরিজাবাবুর গানের আসরের। পরের আসরে শুধু গিরিজাশঙ্কর নন, উপস্থিত ছিলেন সেকালের আরও কয়েক জন প্রখ্যাত শিল্পী। সন্ধে থেকেই আসর একেবারে জমজমাট! গেয়ে চলেছেন শিল্পীরা। রাত দশটা নাগাদ এলেন গিরিজাশঙ্কর। তিনি আসরে পা রাখা মাত্রই শোরগোল শোনা গেল। দশটায় গান ধরে শেষ করলেন রাত দেড়টায়। গান শেষে আবেগাপ্লুত মন্মথবাবু গিরিজাশঙ্করকে জড়িয়ে ধরলেন। তাঁর চোখেমুখে তখন এক স্বর্গীয় তৃপ্তি। তখনই গিরিজাশঙ্কর বিনীত ভাবে ক্ষমা চেয়েছিলেন আগের আসরে আসতে না পারার জন্য। বলেছিলেন, ‘‘ভবিষ্যতে যখনই ডাকবেন, চলে আসব। একটা কুকুরের গলায় ঘণ্টা বেঁধে আমায় ডাকতে পাঠালেও সেই আওয়াজ শুনে আমি চলে আসব।’’ গিরিজাশঙ্করের আন্তরিকতায় সকলেই বিস্মিত হয়েছিলেন।
মন্মথনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের আরও এক পরিচয় প্রখ্যাত তবলিয়া হীরু হঙ্গোপাধ্যায়ের বাবা এবং সরোদশিল্পী শ্যাম গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকা। সে দিনের আসরে গিরিজাশঙ্করের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেছিলেন কিশোর হীরু। সেই থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হীরুবাবু ছিলেন গিরিজাশঙ্করের নিত্যসঙ্গী।
এক অসামান্য গায়ক ছাড়াও গিরিজাশঙ্কর এক আদর্শ শিক্ষক ছিলেন, যাঁর অবিস্মরণীয় অবদান রয়েছে বাংলায় খেয়াল ও ঠুমরিকে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে। গত শতকের কুড়ির দশক পর্যন্ত কলকাতার সংগীতের আসরে মূলত ধ্রুপদ, ধামার ও টপ্পার প্রচলন থাকলেও সেগুলি গাইতেন শুধুমাত্র পুরুষ শিল্পীরা। ধ্রুপদী রাগসংগীত যা কিনা কিছু রাজা, মহারাজা, জমিদারের জলসাঘর আর কিছু বাইজিবাড়ির কোঠার চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে ছিল, গিরিজাশঙ্কর সেই ধারাকে সংগীত সম্মেলনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ভদ্র বাঙালি সমাজে। তেমনই সে কালে ভদ্র পরিবারের মেয়েদের প্রকাশ্যে গান শেখা ও গাওয়া ছিল নিষিদ্ধ। তথাকথিত অভিজাত ও ভদ্র বাঙালি পরিবারের মেয়ে ও বউদের মধ্যে ধ্রুপদী সংগীত শিক্ষার প্রচলনের কৃতিত্ব তাঁরই। অথচ এই শিল্পী স্মৃতির অতলে।
বহরমপুরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে গিরিজাশঙ্করের জন্ম ১৮ ডিসেম্বর ১৮৮৫ সালে। সংগীতের জগতে না এলে গিরিজাশঙ্কর চিত্রশিল্পী, নয়তো ভাল অভিনেতা হতে পারতেন। তাঁর বাবা ভবানীকিশোর সে কালের খ্যাতনামা আইনজীবী। তিনি ছিলেন দরাজ মনের মানুষ। হয়তো সে জন্যই বিনা বাধায় গিরিজাশঙ্কর সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি হতে পেরেছিলেন। সেখানেও নিজের প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন গিরিজাশঙ্কর। থিয়েটারের প্রতিও তাঁর সমান আগ্রহ ছিল। অভিনয়ে ছিল তাঁর সাবলীল দক্ষতা। তাঁর নায়কতুল্য ভাবভঙ্গি দর্শকদের মুগ্ধ করত।
সে সময় মুর্শিদাবাদের নবাবি সংস্কৃতি অস্তমিত হলেও তার রেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। কাশিমবাজারের সংগীতরসিক মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর প্রাসাদে বসত সংগীতের আসর। আসতেন দেশের প্রখ্যাত শিল্পী আর সংগীত রসিকরা। এক সময় বিষ্ণুপুর ঘরানার প্রবাদপ্রতিম রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামী কলকাতার ব্রাহ্মসমাজের গায়ক ছিলেন। পরে তিনি মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্রের সভাগায়ক হয়ে বহরমপুরে আসেন। সেখানেই মণীন্দ্রচন্দ্রের অনুপ্রেরণা ও রাধিকাপ্রসাদের পরিচালনায় সংগীত বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল। আনুমানিক ১৯০৪ নাগাদ গিরিজাশঙ্কর তালিম নিতে শুরু করেন রাধিকাপ্রসাদের কাছে। টানা আট বছর তিনি তালিম নেন ধ্রুপদ-ধামারের। শিষ্য গিরিজাশঙ্করের ধ্রুপদাঙ্গের গানে সুর বিস্তারে স্বয়ং রাধিকাপ্রসাদও মুগ্ধ হয়ে যেতেন। অল্প সময়ের মধ্যেই গিরিজাশঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন তাঁর অন্যতম প্রিয় শিষ্য।
সেই সময় শ্যামলাল ক্ষেত্রী কলকাতার অন্যতম এক সংগীতগুণী। হ্যারিসন রোডে তাঁর বাড়িতে বসত সংগীতের আসর। সেই আসরের আকর্ষণে আসতেন দেশের প্রখ্যাত শিল্পী থেকে সমঝদারেরা। ১৯১২ নাগাদ গিরিজাশঙ্করের সঙ্গে শ্যামলাল ক্ষেত্রীর যোগাযোগ হয়। গিরিজাশঙ্কর এ বার যেন নদী থেকে সমুদ্রে এসে পড়লেন। সেই যোগাযোগ পরে বন্ধুত্বে বদলে যায়। সে সময় শ্যামলালের বাড়িতে আসতেন ভাইয়া গণপত রাও সাহেব, মওজুদ্দিন খান, আলাউদ্দিন খান প্রমুখ। মওজুদ্দিন খানের বন্দিশি বা বোল-বনাও ঠুমরি তখন গোটা দেশকে মাতিয়ে রেতেছে। এই বন্দিশি বা বোল-বানাও ঠুমরির প্রতি গিরিজাশঙ্করের প্রবল আকর্ষণ ছিল। জনশ্রুতি, গিরিজাশঙ্কর মওজুদ্দিন খানের কাছে তালিম নিয়েছিলেন।
কলকাতায় এলেও গিরিজাশঙ্কর কখনও মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্রকে ভোলেননি। তাঁরই উদ্যোগে গিরিজাশঙ্কর দিল্লি দরবারে গান গাইতে গিয়েছিলেন। সেখানেই প্রবাদপ্রতিম মুজফ্ফর খান তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। এর পর গিরিজাশঙ্কর গিয়েছিলেন রামপুরে। সেখানে উস্তাদ মহম্মদ আলি খান ও ছম্মন খাঁ সাহেবের কাছে তিনি তালিম পান।
তাঁর সংগীতশিক্ষা এখানেই থেমে ছিল না। গিরিজাশঙ্কর ধ্রুপদের তালিম নিয়েছিলেন নাসিরুদ্দিন খাঁ সাহেবের কাছে, খেয়াল শিখেছিলেন এনায়েৎ হুসেন খাঁ সাহেবের কাছে আর ঠুমরির তালিম পান গণপৎ রাও সাহেবের কাছে। এ ছাড়াও গান শিখেছিলেন ওয়াজির খান (রামপুর), গ্বালিয়রের এনায়েৎ হুসেন খান, লখনউয়ের বড়ে মুন্নে খানের কাছেও। ১৯১৯ নাগাদ উস্তাদ বদল খান কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। সেই সময় গিরিজাশঙ্কর তাঁর কাছে খেয়ালের রাগ বিস্তারের জটিল বিষয়ে তালিম নেন। এমন প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্বদের সান্নিধ্যে গিরিজাশঙ্কর নিজেই হয়ে উঠেছিলেন এক প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, শিল্পী হিসেবে নিজের প্রচারের চেয়ে তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের গড়ে তুলতেই আজীবন মগ্ন ছিলেন।
১৯৩৩-এর এলাহাবাদ সংগীত সম্মেলনে শ্রেষ্ঠ স্থানাধিকারী সকলেই গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর ছাত্র-ছাত্রী ছিলেন। কণ্ঠ ও যন্ত্রসংগীতে বিচারকের আসনে ছিলেন নাসিরুদ্দিন খান এবং আলাউদ্দিন খান। সে বছর তিনি পেয়েছিলেন ‘বেস্ট টিচার্স কাপ’ পুরস্কার। সেই থেকে প্রতি বছর গিরিজাশঙ্কর সেখানে আমন্ত্রিত থাকতেন। সে বছরই যামিনী গঙ্গোপাধ্যায় ওই সম্মেলনে খেয়াল গেয়ে সাড়া ফেলে দেন। তেমনই অন্যান্যদের মধ্যে রথীন চট্টোপাধ্যায়, শৈলেন বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তিলতা মুখোপাধ্যায় অন্যান্য বিষয়ে পুরস্কৃত হয়েছিলেন।
তাঁর প্রখ্যাত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ছিলেন যামিনী গঙ্গোপাধ্যায়, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, তারাপদ চক্রবর্তী, সুখেন্দু গোস্বামী, সুধীরলাল চক্রবর্তী, নয়না দেবী। এ ছাড়াও তাঁর কাছে গান শিখেছিলেন ইভা দত্ত (গুহ), গীতা মিত্র (দাস), আরতি দত্ত (দাস)। এক বার গিরিজাশঙ্করের কাছে বাঙালি মেয়েদের বিলম্বিত খেয়াল গাওয়ার দক্ষতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন পণ্ডিত এস এন রতনঝঙ্কার। শোনা যায়, গিরিজাশঙ্করের ছাত্রীদের কণ্ঠে বিলম্বিত খেয়াল শুনে অবাক হয়েছিলেন তিনি। মেয়েদের গান শেখানোর সময় সে কালে মূলত তানপুরা, এস্রাজ এবং পাখোয়াজ বাজানো হত। গিরিজাশঙ্কর সেখানে তবলার প্রচলন করেন। এ নিয়ে সে সময় সমালোচনা হলেও, তিনি তা উপেক্ষা করেছিলেন।
সে সময় বাংলায় ধ্রুপদী সংগীতের যতটা কদর ছিল, তার তুলনায় খেয়ালের কদর ততটা ছিল না। গিরিজাশঙ্কর খেয়ালকে কলকাতার সমাজে জনপ্রিয় করে তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন। শোনা যায়, খেয়াল ও ঠুমরির প্রচারের জন্য তিনি আর্থিক ক্ষতি ও নানা ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, বাংলায় সংগীতশিক্ষার পদ্ধতির জন্যই খেয়াল ও ঠুমরির জনপ্রিয়তা কম। তাই শেখানোর সময় স্বতন্ত্র পদ্ধতি মেনে চলতেন।
এক আসরে গিরিজাশঙ্করের গান শুনে উচ্ছ্বসিত হয়ে সেতারি এনায়েৎ খান বলেছিলেন, ‘‘জীবনে বহু বার তিনি নামকরা উস্তাদদের গান শুনেছিলেন। তবে এর আগে কারও গানে তিনি এমন স্বর্গীয় আবেগ উপলব্ধি করেননি।’’ শচীনদেব বর্মণ লিখেছিলেন, ‘‘সে যুগে সংগীতের প্রায় সকল ছাত্র-ছাত্রীর স্বপ্ন ছিল গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর কাছে গান শেখার।’’ পাথুরিয়াঘাটা ভূপেন্দ্রকৃষ্ণ ঘোষের বাড়িতে গানের আসরে গিরিজাশঙ্করের গান শুনেছিলেন সদ্যপ্রয়াত সরোজকুমার চট্টোপাধ্যায় (ঘেন্টিবাবু)। সেই প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণে তিনি বলেছিলেন, ‘‘গান গাইতে গাইতে দরাজ গলায় হঠাৎ একটা এমন তান তুলতেন যে, শ্রোতারা সুরের মায়াজালে বিভোর হয়ে পড়তেন। তাঁর গায়কিতে ধ্রুপদে মূল রাগের শুদ্ধতা, খেয়ালে অলঙ্কার তেমনই ঠুমরির ক্ষেত্রে রাগ এবং রূপের মেলবন্ধন ফুটে উঠত। সে জন্যই তিনি খেয়াল, টপ্পা, ঠুমরি কিংবা গজলেও ছিলেন সমান পারদর্শী।’’
আজও ইতিহাসে কান পাতলে শোনা যায় তাঁকে নিয়ে কত কাহিনি। অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্সের প্রথম অধিবেশনে খেয়াল ও বোলবানাও ঠুমরি গেয়ে আসর মাতিয়েছিলেন গিরিজাশঙ্কর। সেকালের ‘সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রবেশিকা পত্রিকা’ সম্পাদনাও করেছিলেন কিছু সময়ের জন্য। রচনা করেন বেশ কিছু খেয়ালও। দীর্ঘ সময় ধরে গিরিজাশঙ্কর অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর সঙ্গে গায়ক এবং প্রশিক্ষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। মধ্য কলকাতায় তাঁর বাড়িতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সঙ্গীতকলা ভবন এবং ভবানীপুর সঙ্গীত ভারতী। এ ছাড়াও তিনি সঙ্গীত সম্মিলনীর অধ্যক্ষ ছিলেন।
বিভিন্ন রেকর্ড কোম্পানি থেকে প্রকাশিত তাঁর বেশ কিছু গানের রেকর্ড জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। তার মধ্যে ‘ভুলো না মন তারে’, ‘স্মরণ মে আয়ে হ্যায়’, ‘এরি মোহে জানে’ উল্লেখযোগ্য। রেকর্ড সংগ্রাহকদের কাছে আজও গিরিজাশঙ্করের গানের রেকর্ডগুলি কালেক্টর্স আইটেম। ২৫ এপ্রিল ১৯৪৮ বহরমপুরে গিরিজাশঙ্করের মৃত্যুতে ধ্রপদী সংগীত জগতের এক নক্ষত্র কালের গর্ভে বিলীন হয়েছিল।
ঋণ— আ মিউজিশিয়ান এক্সট্রাঅর্ডিনারিলি: ব্রজেন ভট্টাচার্য, সঙ্গীতগুরু গিরিজাশঙ্কর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy