Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

শেক্সপিয়র ও রবীন্দ্রনাথ

দুই কবিকে নিয়েই ‘উইলিয়াম টেগোর মিট’। শুনে এলেন শঙ্করলাল ভট্টাচার্যএক্কেবারে বড়বাবুদের ব্যাপার। যার ওপর কথা হবে না। এক দিকে উইলিয়াম শেক্সপিয়র, যাঁকে শ’য়ে শ’য়ে বছর ধরে জগদ্বাসী মহাকবি জ্ঞান করে আসছে। আরেক দিকে রবীন্দ্রনাথ, আমাদের নিজস্ব বাঙালি মহাকবি, যিনি কৈশোর-কালে বিলাতি কবির ‘ম্যাকবেথ’ নাটক অনুবাদ করেছিলেন এবং বয়স কালে তাঁকে সম্মান করেছেন বড় ইংরেজ বলে।

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০৬
Share: Save:

এক্কেবারে বড়বাবুদের ব্যাপার। যার ওপর কথা হবে না। এক দিকে উইলিয়াম শেক্সপিয়র, যাঁকে শ’য়ে শ’য়ে বছর ধরে জগদ্বাসী মহাকবি জ্ঞান করে আসছে। আরেক দিকে রবীন্দ্রনাথ, আমাদের নিজস্ব বাঙালি মহাকবি, যিনি কৈশোর-কালে বিলাতি কবির ‘ম্যাকবেথ’ নাটক অনুবাদ করেছিলেন এবং বয়স কালে তাঁকে সম্মান করেছেন বড় ইংরেজ বলে।

এই সমস্ত বড় বাবুদের নিয়ে ‘আইডিয়া সেলজ’ সংগঠন এক অভিনব ইংরেজি-বাংলা অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ করল সম্প্রতি। ‘উইলিয়াম টেগোর মিট’ শিরোনামের আসরের উপকরণ ছিল পাঠ, আবৃত্তি, আড্ডা ও অভিনয়, যা ক্রমাগত বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে গেছে সেই সেই বিষয়ে তাঁদের ভাবনা, অনুভূতি ও প্রেক্ষিত তুলে ধরতে। প্রেম, বন্ধুত্ব, আকাঙ্খা, উচ্চাশা, হত্যা, পাপ, মুক্তি, শ্রেণি কিংবা বর্ণবিদ্বেষ, এমনকী প্রতিশোধ।

প্রথমেই ধন্যবাদ বিপ্লব দাশগুপ্ত ও অনসূয়া মজুমদারকে এমন প্রকল্প নির্বাচন করে শেক্সপিয়রের ৪৫০ জন্মবর্ষ এবং রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কারের শতবর্ষ মানানোর জন্য। আরও এক ধন্যবাদ এক চমৎকার স্ক্রিপ্টে দুই কবিকে শ’ শ’ বছরের দূরত্ব মুছে প্রায় এক সংলাপে মুখোমুখি আনার জন্য। এবং এও কম ধন্যবাদার্হ নয় যে বিপ্লব ও অনসূয়া কখনও পাঠ আর কখনও কণ্ঠাভিনয়ে কবিদের অমর পঙক্তি, রুপোলি শব্দ, রক্তিম রচনাংশকে ক্রমাগত প্রকট করে গেছেন। অথচ সারাক্ষন ওঁরা পাশাপাশি দুই টেবিলে বসে। আসরের সুন্দর মুখপাত করেছিলেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। চোখা, হাল্কা মেজাজে। তারপর ক্রমশ বিষয়ের রং বদলে বদলে আসরে রক্তের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।

‘বিসর্জন’-এর জয়সিংহের ব্যাকুল আর্তির পাশে ‘ম্যাকবেথ’ নাটকে লেডি ম্যাকবেথের নিদ্রামগ্ন চলাফেরা আর কান্না। ‘রাজরক্ত চাই তোর, দয়াময়ী। জগৎপালিনী মাতা? নহিলে কিছুতে তোর মিটবে না তৃষা?’—এক দিকে। অন্য দিকে—‘হিয়ার’জ দ্য স্মেল অফ দ্য ব্লাড স্টিল: অল দ্য পার্ফিউমজ অফ অ্যারেবিয়া উইল নট সুইটেন দিস লিটল হ্যান্ড। ওহ্! ওহ্! ওহ্!

পাশাপাশি উইলিয়াম ও টেগোরকে আনতে লেডি ম্যাকবেথের সংলাপে অনসূয়া এবং জয়সিংহের বাচনে বিপ্লব যে অনায়াস উচ্চারণ ও প্রক্ষেপণ রাখলেন তা প্রায় নিখুঁত। তাতে রীতিমতো একটা প্রেক্ষিত, ব্যাখ্যা ও ডিসকোর্স উঠে আসছিল। খুব আধুনিক হয়ে ফিরে এল এক দীর্ঘ বিতর্কিত প্রসঙ্গ যখন ‘দ্য মার্চেন্ট অব ভেনিস’-এ নায়িকা পোর্শিয়া বিচারসভায় দাঁড়িয়ে বলেন, ‘দ্য কোয়ালিটি অফ মার্সি ইজ নট স্ট্রেন্ড; ইট ড্রপেথ অ্যাজ দ্য জেন্টল রেন ফ্রম হেভেন’।

কিন্তু ইহুদি উত্তমর্ণ শাইলক অটল থাকেন তাঁর ‘রাউন্ড অব ফ্লেশ’-এর দাবিতে।

তর্কটা শুধু দয়া ও দাবির মধ্যে সীমিত থাকে না, মিলনাত্মক নাটকেও। ট্র্যাজেডি আক্রান্ত করে শাইলককে, বিষয় হয়ে ওঠে জাতিবিদ্বেষ। এই বিদ্বেষটাই আজকের দিনে ‘দ্য মার্চেন্ট অব ভেনিস’-এর মূল প্রবলেম বা সমস্যা ও সম্পাদ্য। বিপ্লব ও অনসূয়ার পাঠ ছুঁয়ে গেছে দুই কবির আরও নানা রচনা, সে পাঠকে নাট্যমঞ্চের আবহ দিয়েছে দেবাশিস সাহার কিবোর্ড সঙ্গত, সুব্রত সাহার ধ্বনি নিয়ন্ত্রণ এবং গৌর মিত্রের আলেক সম্পাত।

ইচ্ছে ‘বন্দি’

সুদীপা বসুর দু’টি নাটকেই। লিখছেন পিয়ালী দাস

হাওড়া জোনাকির প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হল ‘বহিরাগত’ এবং ‘অঙ্গিরা বাড়ী নেই’। বিষয় ভিন্ন হলেও নাটক দু’টি যেন কোথায় এক সূত্রে বাঁধা পড়েছে। সময়ের পাকচক্রে জীবনের ইচ্ছেগুলো শুধু বন্দি হয়েই থাকছে তাই নয়, স্বাধীনতাতেও যেন টান পড়ছে। মানিয়ে নেওয়াই সেখানে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

‘বহিরাগত’ নাটকে যেমন একজন সফল অভিনেত্রী বিজেতা থিয়েটার ছেড়ে মেগা সিরিয়ালের পরিচালক হলেন। বিজেতার ইচ্ছেয় আনা হল দুই প্রবীণ থিয়েটার কর্মীকে। যাদের মধ্যে নাট্যকার শম্ভু মিত্র এবং তৃপ্তি মিত্রের ছায়া। কিন্তু দুর্ভাগ্য টিআরপির দৌরাত্মে তাদের সঠিকভাবে ব্যবহার করা গেল না, অপরিচিত মুখ বলে। বিজেতা মনের মতো পরিচালনা করতে পারলেন না। এখানে প্রাধান্য পেল বাণিজ্য। তাই আপস করা। বিজেতাকেও নিজের সত্তা জলাঞ্জলি দিয়ে চলতে হয় প্রযোজকের ইচ্ছে মাফিক। ক্রমশ নাটক জমে ওঠে। বিজেতা পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায় অনবদ্য। ইচ্ছের সঙ্গে আপস করে নেওয়া, ভেতরে ভেতরে কুঁড়ে খাওয়া যন্ত্রণার প্রকাশ তিনি সাবলীলভাবেই করেছেন। এছাড়াও অভিনয়ে ছিলেন কৌশিক ঘোষ, গোপা নন্দী, তরুণ চট্টোপাধ্যায়, সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, বর্ণা সাহা, মধুমিতা সেনগুপ্ত প্রমুখ।

আবার ‘অঙ্গিরা’ নাটকে মূল চরিত্র বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। বেড়ে উঠছে কঠিন অনুশাসনের মধ্যে। কোনও দিনও নিজের ইচ্ছে মতো চলতে পারেনি। মানসিক চাপে একসময় বাক্শক্তি হারায় অঙ্গিরা। মেয়েকে মনস্তত্ত্ববিদের কাছে গোপনে নিয়ে যাওয়া, জানাজানি হওয়ার ভয়ে। আভিজাত্য, ক্লাস খর্ব হওয়ার ভয়ে লুকিয়ে মেয়েকে দিয়ে শিবের উপোস করানো। এমন নানা ঘটনা যা দর্শকদের কঠিন প্রশ্নের সামনে দাঁড় করায়। আর এখানেই একটি প্রশ্ন। আধুনিকতার প্রকৃত সংজ্ঞা তবে কী? অঙ্গিরা মোম ভট্টাচার্যের নির্বাক অভিনয় মুগ্ধ করে। বাবা রাহুল সেনগুপ্ত এবং মায়ের চরিত্রে অনিন্দিতা কপিলেশ্বরী যথাযথ। দুটি নাটকেরই নির্দেশক সুদীপা বসু।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE