পদার্থবিজ্ঞানে তিন নোবেলজয়ী। আর্থার অ্যাশকিন (বাঁ দিক থেকে), জেরার্ড মুরো এবং ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড। ছবি- নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটের সৌজন্যে।
সায়েন্স ফিকশনের গল্পকে বাস্তবায়িত করেছেন তিন বিজ্ঞানী! এ বার শুধু আলো ফেলেই নড়ানো-চরানো যাবে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা ও কণিকাকে!
লেসার রশ্মির ‘আঙুল’ দিয়ে এ বার ধরা যাবে খুব ছোট ছোট কণা, পরমাণু, ভাইরাস আর জীবন্ত কোষকে। তাদের নড়ানো, চরানো যাবে।
অবাক করে দেওয়া সেই উপায় বাতলিয়ে অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় পর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন এক মহিলা। কানাডার ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড। পুরস্কার ভাগ করে নিলেন আরও দু’জন- আমেরিকার আর্থার অ্যাশকিন ও ফ্রান্সের জেরার্ড মুরোর সঙ্গে।
লেসার রশ্মির ‘দুই আঙুল’ (টুইজার)-এর জাদুর খেলা’ দেখানোর জন্য ২০১৮ সালে পদার্থবিজ্ঞানে এই তিন জনকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হল। ‘দ্য রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এর তরফে মঙ্গলবার তিন পুরস্কারজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
১১৭ বছরে পদার্থবিজ্ঞানে স্বীকৃতি তিন মহিলার
নোবেল পুরস্কারের ১১৭ বছরের ইতিহাসে পদার্থবিজ্ঞানে এই নিয়ে তিন জন মহিলাকে স্বীকৃতি দেওয়া হল। এর আগে যে দুই মহিলা এই সম্মান পেয়েছেন, নাগরিকত্বের দিক দিয়ে তাঁরা ছিলেন পোলিশ। ১৯০৩-এ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পান মারি ক্যুরি আর ১৯৬৩-তে পান মারিয়া গেপার্ট মেয়ার।
পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল-ঘোষণা: দেখুন ভিডিয়ো
Watch the moment the 2018 #NobelPrize in Physics is announced.
— The Nobel Prize (@NobelPrize) October 2, 2018
Presented by Göran K. Hansson, Secretary General of the Royal Swedish Academy of Sciences. pic.twitter.com/EukMJmGrGo
এত প্রবীণ কেউ নোবেল পাননি এর আগে
এ বার পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার আরও একটি রেকর্ড গড়েছে। মার্কিন নাগরিক আর্থার অ্যাশকিন পুরস্কার পেলেন ৯৬ বছর বয়সে। এর আগে বয়সে এত প্রবীণ কেউ নোবেল পাননি।
আলোর ‘আঙুল’-এর ফাঁদে কণা, ভাইরাস
গবেষণাগারে এত দিন ইলেকট্রনের মতো খুব ছোট ছোট কণা, পরমাণু আর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাস বা জীবন্ত কোষগুলিকে জাপটে ধরার কাজটা ছিল খুবই দুরূহ। কারণ, ধরার মতো জুৎসই ‘আঙুল’ ছিল না। এ বার চুলের কাঁটার মতো লেসার রশ্মির ‘আঙুল’ দিয়ে সেই খুব ছোট ছোট কণা আর ভাইরাসদের জাপটে ধরা যাবে। তাদের ওপর লেসার রশ্মির মতো বিশেষ ধরনের আলো ফেলে আমাদের ইচ্ছা মতো তাদের নড়ানো, চরানো যাবে। ছোটানো যাবে কাঙ্খিত গতিবেগে বা প্রয়োজনে তাদের থামানো যাবে। ঠিক যেন সেই সায়েন্স ফিকশনের গল্প!
পুরস্কার ঘোষণার পর নোবেল কমিটিকে দেওয়া আর্থার অ্যাশকিনের সাক্ষাৎকার: দেখুন ভিডিয়ো
আরও পড়ুন- ক্যানসারে ‘ব্রেক’ কষে নোবেল জেমস অ্যালিসন এবং তাসুকু হঞ্জোর
আরও পড়ুন- সাহিত্য বাদ নোবেলে, সঙ্কটে অ্যাকাডেমি
আলোর ‘আঙুল’-এ ধরা, আটকে রাখা
ঘোষণার পর পুরস্কারজয়ী ডোনা স্ট্রিকল্যান্ডকে টেলিফোনে খবর দিচ্ছে নোবেল কমিটি। মঙ্গলবার
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা, কণিকা, পরমাণু, ভাইরাসদের জাপটে ধরার কাজটা মূলত করেছিলেন অ্যাশকিন। আজ থেকে প্রায় ৫৫/৫৬ বছর আগে। ছয়ের দশকের মাঝামাঝি। ওই সময় তিনি তাঁরা বানানো লেসার রশ্মির ‘আঙুল’ দিয়ে জীবন্ত ব্যাকটেরিয়াদের ধরতে পেরেছিলেন। রশ্মির একটা ‘আঙুল’ দিয়ে ব্যাকটেরিয়াদের ঠেলতে ঠেলতে পাঠাতে পেরেছিলেন রশ্মির মাঝখানটায়। তার পর রশ্মির আর একটা ‘আঙুল’ দিয়ে তাকে আটকে ফেলতে পেরেছিলেন। যেন খাঁচায় বন্দি ব্যাকটেরিয়া! আমাদের শরীরে সে আর ক্ষতি করবে কী ভাবে? কিন্তু লেসার রশ্মি দিয়ে আটকে ফেলে ব্যাকটেরিয়ারও কোনও ক্ষতি করেননি অ্যাশকিন। বরং তাদের জীবনচক্র আরও অনেকটা সময় ধরে নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণের পথ দেখিয়েছিলেন অ্যাশকিন।
নোবেল কমিটির তরফে ফোন গেল ডোনা স্ট্রিকল্যান্ডের কাছে। কী বললেন ডোনা? দেখুন ভিডিয়ো
লেসার রশ্মিকে আরও শক্তিশালী করার উপায়
আর লেসার রশ্মির পাল্স বা কম্পনগুলির ‘দৌড়’টাকে অনেকটাই অল্প পাল্লার করে তুলে তাদের বহুগুণ শক্তিশালী করে তোলার পথ দেখিয়েছিলেন জেরার্ড মউরউ এবং ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড। সেটাও ৩৩ বছর আগেকার কথা। এই বিষয়টাই ছিল ডোনার গবেষণাপত্রের ভিত। কোনও একটা ঢেউ খুব অল্প জায়গায় উঠলে তা অনেকটা উঁচু (পিক) তে উঠে যায়। কিন্তু সেই ঢেউটাই ধীরে ধীরে আরও বেশি জায়গায় ছড়িয়ে পড়লে তার উচ্চতাও উত্তরোত্তর কমতে থাকে। এটাই করেছিলেন ডোনা ও জেরার্ড। তাঁরা সময় বাড়িয়ে লেসার রশ্মির পাল্সগুলিকে টেনে বাড়িয়েছিলেন। ইল্যাস্টিক পদার্থের মতো। তাতে পাল্সগুলির ‘পিক’ নামতে থাকে। পরে সেই ‘পিক’গুলিকে তারা তাঁদের ইচ্ছা মতো উঠিয়েছিলেন। আর শেষে চাপ দিয়ে সেই ‘পিক’গুলির উচ্চতা কমিয়ে দিয়েছিলেন। ‘পিক’গুলিকে ছোট করলেই ওই জায়গায় আলোর শক্তি অনেকটা বেড়ে যায়। সেই আলো অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ওই ভাবেই লেসার রশ্মিকে শক্তিশালী করে তুলেছিলেন ডোনা ও জেরার্ড। ওঁদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিটির নাম- ‘চার্পড পাল্স অ্যামপ্লিকেশন’ বা ‘সিপিএ’। ডোনা আর জেরার্ডের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতেই লেসার রশ্মিকে বহু গুণ ক্ষুরধার করে তোলা সম্ভব হয়েছে। আর সেটাই কাজে লাগছে চোখের সুক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ অংশের অস্ত্রোপচারে।
আর কী কী ভাবে কাজে লাগানো যাবে শক্তিশালী লেসার রশ্মিকে?
নোবেল কমিটি জানিয়েছে, এই প্রযুক্তি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রের গতি ও কার্যক্ষমতা অনেক গুণ বাড়াবে। বানানো যাবে আরও শক্তিশালী সোলার সেল। আরও ভাল অণুঘটক। আরও শক্তিশালী কণা-ত্বরায়ক যন্ত্র বা পার্টিকল অ্যাক্সিলেটর (যেমন রয়েছে ‘সার্ন’-এ, লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার)।
ছবি ও ভিডিয়ো সৌজন্যে: নোবেল কমিটির ওয়েবসাইট ও টুইটার অ্যাকাউন্ট
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy