সাংবাদিক বৈঠকে লেফ্টেন্যান্ট জেনারেল কে এস ঢিলোঁ।
পুলওয়ামায় এনকাউন্টারে তিন জঙ্গি খতম করার পর জঙ্গিদের পাশাপাশি এ বার কাশ্মীরের সাধারণ নাগরিকদেরও কঠোর বার্তা দিল ভারতীয় সেনা। ‘অস্ত্র হাতে তুলে নিলেই গুলি করা হবে’,—এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন ভারতীয় সেনার চিনার কোর-এর কমান্ডার কানওয়ালজিৎসিংহঢিলোঁ। মঙ্গলবার সেনা, সিআরপিএফ এবং পুলিশের তরফে সাংবাদিক বৈঠকে ঢিলোঁর দাবি, পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার ১০০ ঘণ্টার মধ্যেই উপত্যকা থেকে জইশ জঙ্গিদের নিকেশ করা হয়েছে। হামলার নেপথ্যে থাকা জইশ জঙ্গিদের পাক সেনা এবং আইএসআই নিয়ন্ত্রণ করে বলেও এ দিন স্পষ্ট জানিয়েছেন লেফ্টেন্যান্ট জেনারেল ঢিলোঁ।
সোমবারই পুলওয়ামার পিংলিশ গ্রামে অভিযান চালিয়ে তিন জইশ জঙ্গিকে খতম করে ভারতীয় সেনা। তাদের মধ্যে নিহত কামরান ছিল পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার মাস্টারমাইন্ড। এ ছাড়া ছিল হিলাল আহমেদ নামে এক স্থানীয় বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ এবং রশিদ ওরফে গাজি ওরফে লুকমান। হামলায় এক স্থানীয় বাসিন্দার মৃত্যু হয়। তিনি ওই জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। অন্য দিকে, ভারতীয় সেনার মেজর বিভূতিশঙ্কর ধৌনদয়াল, সিপাহি হরি সিংহ, অজয় কুমার, হাবিলদার শেও রাম, এবং জম্মু কাশ্মীরের হেড কনস্টেবল আবদুল রশিদ কলসও এনকাউন্টারে গিয়ে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন।
এই ঘটনার পরই মঙ্গলবার তিন বাহিনীর তরফে সাংবাদিক বৈঠক করা হয়। সেনার পক্ষে ঢিলোঁ ছাড়াও ছিলেন সিআরপিএফ-এর ডিজি জুলফিকার হাসান এবং কাশ্মীর পুলিশের আইজি এপ পি পানি। এই সাংবাদিক বৈঠকেই সাধারণ কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে নরমে গরমে বার্তা দিল সেনা। পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার শিকড় যে পাকিস্তানেই, এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক যে পাক সেনা এবং পাক গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) সে কথা এ দিন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন ঢিলোঁ। কোনও অনুপ্রবেশকারী এ দেশে ঢুকলে সে বেঁচে ফিরতে পারবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন ঢিলোঁ।
আরও পডু়ন: সিনেমায় সেনাবাহিনী
আরও পডু়ন: ‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানিরা বিকানের ছাড়ুন’! নির্দেশিকা জারি করল জেলা প্রশাসন
কাশ্মীরের যুবকদের একটা অংশের মগজ ধোলাই করে তাদের জঙ্গি দলে নাম লেখানোর অভিযোগ নতুন নয়। আবার স্থানীয় কাশ্মীরিদের একটা অংশ যে জঙ্গিদের মদত এবং আশ্রয় দেয়, সে অভিযোগও বহুদিন ধরেই রয়েছে। এই প্রবণতা রুখতেই এ দিন কড়া বার্তা দিয়েছে তিন বাহিনী। ইতিমধ্যেই জঙ্গি দলে নাম লেখানো কাশ্মীরিদের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘‘আত্মসমর্পণ করুন, আপনাদের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া হবে।’’ কাশ্মীরের মহিলাদের আর্জি জানিয়ে ঢিলো বলেন, ‘‘সন্তানরা যাতে বিপথে না যায়, তার জন্য তাঁদের বোঝান। আত্মসমর্পণ করতে বলুন।’’
কিন্তু তার পরও যাঁরা জঙ্গিদের ফাঁদে পা দেবেন, বা ইতিমধ্যেই দিয়েছেন এবং আত্মসমর্পণের ভাবনা নেই, তাঁদের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল। তাঁর ঘোষণা, ‘‘এ বার কাশ্মীরের কেউ অস্ত্র হাতে তুলে নিলেই গুলি করে মারা হবে। উপত্যকায় জঙ্গি কার্যকলাপ কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।’’ সোমবারের এনকাউন্টারে এক সাধারণ কাশ্মীরি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। সে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে সাংবাদিক সম্মেলনে। ঢিলোঁর জবাব, ‘‘কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে আমরা বদ্ধ পরিকর। তাই কোথাও এনকাউন্টার হলে তার ধারে-কাছে কেউ যাবেন না।’’
আরও পডু়ন: রাজ্যে বিদ্বেষমূলক প্রচার, গুজব ছড়ানো রুখতে পুলিশকে কড়া বার্তা মমতার
উল্টো দিকে, সেনার একাংশের বিরুদ্ধেও উপত্যকার সাধারণ মানুষের উপর মাঝে মধ্যেঅত্যাচারের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সেনাকর্তা বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনার কোনও প্রমাণ নেই। এগুলি জঙ্গিদের তৈরি করা ভ্রান্ত প্রচার। এই ফাঁদে কেউ পা দেবেন না।’’ জঙ্গিদের প্রতি কাশ্মীরের বাসিন্দাদের সমর্থন এবং সহযোগিতা গত কয়েক মাসে অনেক কমেছে বলেও এ দিন দাবি করেন ঢিঁলো।
পুলওয়ামা হামলায় ব্যবহৃত গাড়িটি কাশ্মীরের। প্রাথমিক তদন্তে সেটা একপ্রকার নিশ্চিত সেনা। পাশাপাশি আইইডি বিস্ফোরক কোথা থেকে কী ভাবে জোগাড় করেছিল জঙ্গিরা, সে বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এসেছে সেনার হাতে। এ বিষয়ে এ দিন ঢিলোঁর দাবি, গাড়ি এবং বিস্ফোরক সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য হাতে এসেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো সম্ভব নয়।
(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy