Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

নাগরিক পঞ্জির শহিদদের স্বজন আজও লড়াইয়ে

মইদুলের পরিবারের ১৮ জনের মধ্যে ১৬ জনের নামই উঠেছে এনআরসির চূড়ান্ত খসড়ায়।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৮ ০৫:৩৯
Share: Save:

অকালে কেন হারাতে হল— মেজ ছেলে মইদুল ইসলাম মোল্লার স্মৃতি আঁকড়ে ভাবতেন বরপেটার খন্দকরপাড়ার কলিমুন্নেসা। আট বছর ধরে একই প্রশ্ন কুরে খেয়েছে কুমুল্লিপাড়ার নুর বেগমকেও। তিনি হারিয়েছেন স্বামী মাজাম আলিকে। একই প্রশ্ন ছিল কুমুল্লিপাড়ার খন্দকর মোতালেব আলি (২০) ও বনিয়ারপাড়ার সিরাজুল হক (২৭)-র পরিবারেরও। মইদুল, মাজাম, মোতালেব ও সিরাজুল— অসমের চার ‘এনআরসি শহিদ’-এর পরিবার পেয়ে গিয়েছে তাদের প্রশ্নের উত্তর। তা হল, তাঁদের স্বজনরা প্রাণ দিয়েছেন, যাতে ওঁদের গ্রামের মানুষ ‘বাংলাদেশি’ অপবাদ ঘুচিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারেন। চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের পরে ওই চার পরিবারের কারও নাম এসেছে চূড়ান্ত খসড়ায়। কারও বা আসেনি। কিন্তু আশা ছাড়ছেন না তাঁরা।

অসমের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নবীকরণের সিদ্ধান্ত হয় ২০০৯ সালে। পরের বছর জুলাইয়ে বরপেটা জেলায় শুরু হয় পাইলট পর্বের কাজ। তত দিনে এই ধারণাটা বেশ চালু হয়ে গিয়েছে যে, সংখ্যালঘু-প্রধান বরপেটায় মুসলিম মাত্রই বাংলাদেশি। গুজব ও আশঙ্কা ছড়ায়, বাংলাদেশিদের তাড়াতেই এনআরসি নবীকরণ হচ্ছে। ২১ জুলাই প্রায় হাজার দশেক আমসু সদস্য জেলাশাসকের দফতরে অভিযান চালায়। পুলিশের লাঠি ও গুলিতে মারা যান ওই চার জন। জখম হন ৫০ জনেরও বেশি। সেই স্মৃতিতে আমসু পালন করে শহিদ দিবস। ওই দিনের আন্দোলনের জেরেই থমকে যায় এনআরসির কাজ। পরে ফের আমসু, আসু, সরকার আলোচনায় বসে। এনআরসির পদ্ধতি ও নিয়মকানুন বদল করা হয়। ২০১৫ সালে সর্বসম্মত ভাবে এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ফের শুরু হয় এনআরসির কাজ।

মইদুলের পরিবারের ১৮ জনের মধ্যে ১৬ জনের নামই উঠেছে এনআরসির চূড়ান্ত খসড়ায়। বাকি দু’জনও নিশ্চিত, চূড়ান্ত তালিকায় তাঁদের নামও উঠবে। কিন্তু মাজামের স্ত্রী নুরের নাম তালিকায় নেই। তিনি জানান, পঞ্চায়েত প্রধানের দেওয়া শংসাপত্র গ্রাহ্য হয়নি। তবে হাল ছাড়ছেন না তিনি। সিরাজুল ও মোতালেবের পরিবারেও কারও নাম আছে, কারও নেই। কিন্তু সিরাজুলের বাবার কথায়, ‘‘চিরকালের মতো আমাদের মাথা থেকে বাংলাদেশি তকমাটা মোছার জন্য বাকি তিন ছেলেও জীবন দিতে প্রস্তুত।’’

বরপেটায় ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ঐতিহ্য বদলে যায় অসম আন্দোলনের পরে। অথচ অসম আন্দোলনের প্রথম শহিদ বরপেটারই উজান বরবরি গ্রামের বাসিন্দা খড়্গেশ্বর তালুকদার। বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী হিসেবে আসার পরেও এখানকার মন্টু নাগ আসুর প্রথম হিন্দু বাঙালি সম্পাদক হন। তাঁর সঙ্গেই হাত মিলিয়ে জেলার দুই মুসলিম ছাত্রনেতা আসগর আলি ও আব্দুল হাই নাগরি ১৯৭৯-এ বরপেটায় অসম আন্দোলনের সূচনা করেন। মতানৈক্যের জেরে পরের বছর হিন্দু ও মুসলিম বাঙালি নেতারা আমসু তৈরি করেন। সেই ফাটল আজও জোড়া লাগেনি, বলছেন বরপেটার পুরোনো বাসিন্দারা।

অন্য বিষয়গুলি:

NRC Assam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE