গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রথম জনের কাছে লড়াই সুনাম রক্ষার। দ্বিতীয় জনের কাছে অস্তিত্বের। এ বার মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটে পওয়ার পরিবারের অন্দরের লড়াইকে এ ভাবেই দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে। প্রথম জন এনসিপির প্রতিষ্ঠাতা তথা মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শরদ পওয়ার। দ্বিতীয় জন, তাঁর ‘বিদ্রোহী’ ভাইপো তথা সে রাজ্যের বর্তমান উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দু’জনেই ভোটের প্রচারে পরস্পরের বিরুদ্ধে পরিবারে ভাঙন ধরানোর অভিযোগ তুলছেন নিয়ম করে!
আগামী ২০ নভেম্বরে এক দফায় মহারাষ্ট্রে ২৮৮টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট হবে। গণনা ২৩ নভেম্বর। মূল লড়াই বিজেপি-শিবসেনা (একনাথ শিন্ডে)-এনসিপি (অজিত)-এর জোট ‘মহাজুটি’ এবং কংগ্রেস-শিবসেনা (ইউবিটি)-এনসিপি (শরদ)-এর ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’র মধ্যে। প্রাক নির্বাচনী পরিসংখ্যান বলছে, অজিতের কেন্দ্র বারামতী-সহ মোট ৩৬টি আসনে মুখোমুখি লড়াই হবে দুই এনসিপির। তার মধ্যে ১৫টিই ‘পওয়ার পরিবারের গড়’ হিসাবে পরিচিত পশ্চিম মহারাষ্ট্রে। এ ছাড়া, উত্তর মহারাষ্ট্রের ৭, মরাঠওয়াড়ার ৫, বিদর্ভের ৪, বৃহত্তর মুম্বই এলাকার ৩ এবং কোঙ্কণ উপকূলের ২টি বিধানসভা আসন রয়েছে এই তালিকায়।
লোকসভা ভোটে কন্যা সুপ্রিয়া সুলেকে দিয়ে বারামতীতে বাজিমাত করেছিলেন ‘সাহেব’ (মরাঠা রাজনীতিতে এই নামেই পরিচিত শরদ)। হারিয়ে দিয়েছিলেন ‘দাদা’ (অনুগামীদের কাছে এই নামে অজিতের পরিচিতি)-র স্ত্রী সুনেত্রাকে। এ বার বিধানসভা ভোটেও পারিবারিক গৃহযুদ্ধের সাক্ষী হচ্ছে পশ্চিম মহারাষ্ট্রের ওই আসন। বারামতী বিধানসভার সাত বারের বিধায়ক অজিতের বিরুদ্ধে শরদ এ বার প্রার্থী করেছেন তাঁর নাতি যুগেন্দ্র পওয়ারকে। যুগেন্দ্র আবার অজিতের ভাইপো। তাঁর বাবা শ্রীনিবাস হলেন অজিতের দাদা। শরদের দলের হয়ে তাঁর আর এক নাতি রোহিত পওয়ারও এ বার বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছেন অদূরের কারজ়াট-জামখেড় আসনে।
২০২৩ সালের ২ জুলাই এনসিপিতে পটপরিবর্তন মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে বদলে দিয়েছিল বেশ কয়েকটি সমীকরণ। অজিত-সহ ন’জন বিদ্রোহী এনসিপি বিধায়কের মন্ত্রিত্ব এবং ভাল দফতর লাভের পরে এনডিএ-র অন্দরে ক্রমশ তাঁর শিবিরের পাল্লা ভারী হচ্ছিল। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ‘এনসিপি’ নাম এবং নির্বাচনী প্রতীক ‘ঘড়ি’ও আপাতত মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিতের দখলে যায়। শরদের নতুন দলের নাম হয় এনসিপি (শরদচন্দ্র পওয়ার)। নির্বাচনী প্রতীক ‘তুতারি’ (পশ্চিমি বাদ্যযন্ত্র ট্রাম্পেটের মরাঠি সংস্করণ)। কিন্তু নাম ও প্রতীক হারিয়েও লোকসভা ভোটে বাজিমাত করেছিলেন শরদ। জিতেছিলেন আটটি আসনে। অন্য দিকে, চারটিতে অজিতের দল জিতেছিল মাত্র একটি আসনে।
লোকসভা ভোটের পর অজিতের দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য প্রকাশ্যে বিজেপিকে ‘পরামর্শ’ দিয়েছে আরএসএস। বিরোধী ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’র অন্য দুই সহযোগী কংগ্রেস এবং উদ্ধবসেনা যখন শরদের দলকে ৮৫টি আসন ছেড়েছে, তখন সহযোগী বিজেপি, শিন্ডেসেনার থেকে অজিতের প্রাপ্তি মাত্র ৫৫! এমনকি, মুম্বইয়ের মানখুর্দ-শিবাজিনগর আসনে অজিতের দলের প্রার্থী নবাব মালিকের বিরুদ্ধে বিজেপির সমর্থন নিয়ে লড়তে নেমেছেন শিন্ডেসেনার প্রার্থী এসকে পাটিল। এই আবহে বিধানসভা ভোট কার্যত অজিতের অস্তিত্বের লড়াই বলেই মনে করছেন অনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy