গ্রামীন এলাকার ১০০ দিনের প্রকল্পের এমন কাজই চালু হতে পারে শহরাঞ্চলেও।
পুজো-দীপাবলিতে খরচের জন্য সরকারি কর্মীদের হাতে ১০ হাজার টাকা অগ্রিম বা এলটিসি নগদে দিলে অল্প কিছু দিনের জন্য বাজারে কেনাকাটা বাড়লেও তা বেশি দিন স্থায়ী হবে না। নরেন্দ্র মোদী সরকারও এ কথা বুঝতে পারছে। তাই উৎসবের মরসুমের পরেও যাতে বাজারে কেনাকাটা চালু থাকে, তার জন্য মোদী সরকার মনরেগা-র মতো শহরেও রোজগার প্রকল্প চালু করতে চাইছে।
মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কে ভি সুব্রহ্মণ্যন আজ বলেন, ‘‘রোজগার তৈরির প্রকল্প বিবেচনার মধ্যে রয়েছে। চাকরি বা রোজগারের সুযোগ তৈরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাতে কাজ থাকলে আগামী দিনে আয়ের ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা তৈরি হয়। সে কারণেই রোজগার তৈরির প্রকল্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।’’ একই সঙ্গে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য আরও এক দফা দাওয়াই ঘোষণা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সুব্রহ্মণ্যন। তিনি নিজে রাজকোষ থেকে আরও খরচের পক্ষে বলে জানিয়ে সুব্রহ্মণ্যনের যুক্তি, আমদানিতে খরচের তুলনায় রফতানি থেকে বেশি বিদেশি মুদ্রা আয়ের ফলে খরচ করার সুযোগ রয়েছে।
ইউপিএ সরকারের আমলে গ্রামের মানুষকে বছরে অন্তত ১০০ দিনের রোজগারের নিশ্চয়তা দিয়ে মনরেগা প্রকল্প চালু হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাকে গর্ত খোঁড়ার প্রকল্প বলে কটাক্ষ করলেও, লকডাউনের পরে গ্রামে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য সেটাই একমাত্র সম্বল হয়ে উঠেছে। মোদী সরকারও মনরেগা-য় বিপুল বরাদ্দ বাড়িয়েছে। এখন শহরেও একই রকম প্রকল্প চালুর কথা ভাবা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, শহরের রোজগার প্রকল্প পাকাপাকি ভাবে চালু না-ও থাকতে পারে। পরিস্থিতি অনুযায়ী ছয় মাস বা এক বছরের জন্য এই প্রকল্প চালু রাখা হতে পারে। মূলত শহরে যে সব পরিকাঠামো প্রকল্পের কাজ শুরু হবে, সেখানেই শ্রমিকদের রোজগারের বন্দোবস্ত করার চেষ্টা হবে। সুব্রহ্মণ্যনও সেই ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘‘প্রথমে পরিকাঠামোয় খরচে নজর দেওয়া হবে। তার পরে রোজগার তৈরির প্রকল্পের কথা ভাবা হবে।’’
সোমবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজারে চাহিদা বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের অগ্রিম, নগদে এলটিসি, পরিকাঠামোয় কেন্দ্রের বাড়তি খরচ এবং রাজ্যকে পরিকাঠামোয় খরচের জন্য ঋণের ঘোষণা করেছিলেন। সীতারামনের ঘোষণায় সরকারের ঘর থেকে শুধুমাত্র পরিকাঠামোয় বাড়তি ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে।
আজ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম একে ‘পর্বতের মূষিক প্রসব’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, লকডাউনের পরে ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজও যে ব্যর্থ, তা প্রমাণিত। কারণ শিল্পোৎপাদন টানা ছয় মাস ধরে কমছে। এখন সরকার বাজারে কেনাকাটা বাড়াতে ১ লক্ষ কোটি টাকার গল্প শোনাচ্ছে। বাস্তবে জিডিপি-র মাত্র ০.১ শতাংশ বাড়তি খরচ হচ্ছে। পুরোটাই ভাঁওতা। তাঁর মতে, নানাবিধ শর্ত মেনে কত জন সরকারি কর্মী এলটিসি সুবিধা নিতে যাবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। দু’তিন বছর পরে সিএজি-র রিপোর্ট এলেই সব জানা যাবে। তা ছাড়া, সরকার কেন কর্মীদের অভিভাবকের মতো বলে দেবে, তাঁরা নিজের প্রাপ্য টাকায় কী কিনবেন, কখন কিনবেন!
সীতারামনের যুক্তি ছিল, সরকারের ঘর থেকে বেশি খরচ করলে ঋণের বোঝা অস্বাভাবিক বেড়ে যাবে। মূল্যবৃদ্ধিও আকাশছোঁয়া হবে। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার ৭.৩৪ শতাংশ ছাপিয়ে গিয়েছে। রাজকোষ থেকে খরচ করার জন্য অর্থই নেই। এমনিতেই ঘাটতি ৩.৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে থাকবে না। বাজেটে রাজকোষ ঘাটতি ৭.৯৬ লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে বেঁধে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। তা বেড়ে ১৪ লক্ষ কোটি টাকায় চলে যেতে পারে।
চিদম্বরমের যুক্তি, ‘‘রঘুরাম রাজন, অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন, অরবিন্দ পনগড়িয়া, জাহাঙ্গির আজিজ থেকে সি রঙ্গরাজন, এম গোবিন্দ রাওয়ের মতো রক্ষণশীল অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, ঘাটতির কথা না ভেবে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে খরচ বাড়াতে হবে। অর্থমন্ত্রী কি বলতে চাইছেন, এই সব অর্থনীতিবিদরা ঋণের বোঝার কথা ভাবেননি? আমি তো অর্থমন্ত্রীর বদলে এঁদের কথাই শুনব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy