আলোচনা: জনসভার মঞ্চে চন্দ্রবাবু নায়ডু ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার বিশাখাপত্তনমে। নিজস্ব চিত্র
কলকাতা থেকে রবিবার দুপুরে রওনা হওয়ার সময় পরনে ছিল আকাশনীল পাড়ের শাড়ি। সন্ধ্যায় চন্দ্রবাবু নায়ডুর নির্বাচনী সভায় যাওয়ার সময় ব্যাগ হাতড়ে বার করলেন যে-শাড়িটি, তার পাড় হলুদ রঙা। বললেন, ‘‘তেলুগু দেশম পার্টির পতাকার রং হলুদ, এটা বেশ মানিয়ে যাবে।’’
মানিয়ে গেল আরও অনেক কিছুই। যেমন, তেলুগু ভাষায় এখানকার মানুষদের সম্বোধন জানানোর মতো কয়েকটি বাক্যও। বক্তৃতার শুরুতেই প্রিয়দর্শিনী স্টেডিয়ামে পতপত করে উড়তে থাকা অসংখ্য হলুদ রঙা পতাকার নীচে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার মানুষ তা শুনে উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠল ‘দেশের মা’ বলে। এ ভাবেই সূচনা হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২০১৯-এর নির্বাচনী অভিযান।
এ বারেই প্রথম নিজের রাজ্যের বাইরে এসে প্রচার শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা-ও অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে। যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু মমতার প্রস্তাবিত ফেডারেল ফ্রন্টের অন্যতম সংগঠক এবং ঘটনাচক্রে তৃণমূল নেত্রী মমতার মতো তাঁর সঙ্গেও কংগ্রেসের কোনও আসন বোঝাপড়া হয়নি। ‘২০১৯ বিজেপি ফিনিশ’-এর যে-স্লোগান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তুলেছেন, তাঁর এ দিনের বক্তৃতায় কার্যত সেটাই উচ্চারিত হয়েছে বারবার। বরং আরও জোর দিয়ে জনতার উদ্দেশে তিনি বলেছেন, এখনই এই সভা থেকে সবাই মিলে শপথ নিন, ‘‘আমরা মরব, তবু নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি ও তাদের বন্ধুদের ক্ষমতায় ফিরতে দেব না।’’ মমতা বলেছেন ‘মোদী হটাও’, জনতা বলেছে ‘দেশ বাঁচাও’।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ঘুরেফিরে এসেছে বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, সেই প্রসঙ্গও। মমতার আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল তাঁর বক্তৃতায় এই প্রশ্ন তুলে একই সুরে জবাব দিয়েছেন, ‘‘সেটা ভোটের পরে ঠিক হবে।’’ আর মমতা বলেছেন, ‘‘সে-সব মোদীকে ভাবতে হবে না। আমরা জানি, কী করে কী করতে হয়।’’ প্রসঙ্গত দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বড় বড় আঞ্চলিক দল যে-ভাবে মোদীর বিরোধিতায় মাঠে নেমেছে তারও উল্লেখ করে চন্দ্রবাবু, অখিলেশ, মায়াবতী, কেজরীবাল— প্রত্যেকের কথা তুলে মমতা বলেন, ‘‘এঁরা নিজ নিজ রাজ্যে সরকার চালিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, কী করে সরকার চালাতে হয়।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই তালিকায় অনুচ্চারিত ছিল কংগ্রেসের নাম।
এ দিনই ঘটনাচক্রে অন্ধ্রের বিজয়ওয়াড়ায় এসে রাহুল গাঁধী নাম না-করে তেলুগু দেশমকে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, অন্ধ্র-তেলঙ্গানা ভাগ হওয়ার পরে অন্ধ্রের ‘স্পেশ্যাল স্টেটাস’ নিয়ে কেউ কিছু করেনি। এই খোঁচা ফিরিয়ে দিয়ে মমতার মন্তব্য, ‘‘কেউ কেউ বলছেন চন্দ্রবাবু নাকি কিছুই করেননি। তাঁদের মনে করিয়ে দেব, স্পেশ্যাল স্টেটাসের দাবিতেই চন্দ্রবাবু এনডিএ ছেড়ে ছিলেন।’’
সভায় আসার আগে শহরের একটি হোটেলে চন্দ্রবাবু এবং কেজরীবালের সঙ্গে বৈঠকও করেন মমতা। তাঁরা দু’জনেই পশ্চিমবঙ্গের প্রচারে যাবেন বলে ঠিক হয়েছে। বিশেষ করে খড়গপুরের তেলুগুভাষীদের কাছে চন্দ্রবাবুর প্রচার কাজে আসবে বলে তৃণমূল নেত্রী মনে করেন। তাঁদের আধঘণ্টার আলোচনায় ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়েও কথা হয়। কথা ওঠে রাহুল গাঁধীর বিভিন্ন বক্তৃতার বিষয়বস্তু নিয়েও। তবে একটি ব্যাপারে সকলেই একমত, মূল লড়াই যে-হেতু বিজেপির সঙ্গে তাই সেটাকেই পাখির চোখ করতে হবে। আরও একটি বিষয়ে তাঁরা একমত, তা হল, আঞ্চলিক দলগুলির অগ্রগতি যে-কোনও মূল্যে নিশ্চিত করতেই হবে, যাতে বিজেপি-বিরোধী সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা অনিবার্য এবং সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy