Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
National News

প্রেমিকের স্বপ্নপূরণে বাড়িতেই কোটি টাকার ডাকাতি প্রেমিকার!

শ্বশুরকে উচিত শিক্ষা দিতে তাঁর মেয়েকেই (সোনালি বেন্দ্রে) কিডন্যাপের ফন্দি এঁটে ফেলেন জামাই। কিডন্যাপ করে শ্বশুরের কাছে এক কোটি টাকা মুক্তিপণও চান তিনি। গল্পটা এই নিয়েই।

অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।

অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।

সংবাদ সংস্থা
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:০৬
Share: Save:

‘লভ কে লিয়ে কুছ ভি করেগা’— ঈশ্বরণ নিবাস পরিচালিত এই ছবির কথা মনে আছে? যেখানে এক ধনী ব্যবসায়ীর মেয়েকে (সোনালি বেন্দ্রে) বিয়ে করেছিল সমস্যা জর্জরিত ছোটখাটো এক ব্যবসায়ী (সইফ আলি খান)। শ্বশুরের (দিলীপ তাহিল) না-পসন্দ ছিলেন জামাই। সব সময় তাঁকে উপহাস করতেন। তাই শ্বশুরকে উচিত শিক্ষা দিতে তাঁর মেয়েকেই (সোনালি বেন্দ্রে) কিডন্যাপের ফন্দি এঁটে ফেলেন জামাই। কিডন্যাপ করে শ্বশুরের কাছে এক কোটি টাকা মুক্তিপণও চান তিনি। গল্পটা এই নিয়েই।

তবে বেঙ্গালুরুর এক তরুণীর ভালবাসার গল্প যেন ঈশ্বরণ নিবাসের ছবিকেও হার মানিয়েছে। বাস্তবের এই কাহিনির গোটাটাই যেন একটা ‘ক্রাইম কমেডি’! এই কাহিনির ‘হিরো’ কিন্তু ওই তরুণীই। ঘটনাচক্রে, বাস্তবের এই কাহিনিতে ওই তরুণীর বাবাও এক জন ধনী ব্যবসায়ী!

তরুণীর নাম প্রিয়ঙ্কা পরসানা। বয়স ২০। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি নিয়ে পড়াশোনা করছেন। প্রাইভেট টিউশনে গিয়ে তাঁর আলাপ হয় এয়ারপোর্ট রোডের গীত গুর্জারি সোসাইটির এক যুবক হেট শাহের সঙ্গে। হেটও একই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছেন। গল্পের সূত্রপাত এখান থেকেই।

আরও পড়ুন: ১৯৮৪ শিখ দাঙ্গায় সজ্জন কুমারের যাবজ্জীবন, ‘মূল্য দিতে হবে গাঁধী

হেট চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি নিয়ে পড়লেও তাঁর ইচ্ছা পাইলট হওয়ার। কিন্তু সেটা বাড়িতে জানাতে পারছিলেন না। তা ছাড়া পাইলটের ট্রেনিংয়ের জন্য ২০ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। সে টাকাও বাড়িতে চাওয়ার মতো সাধ্য ছিল না তাঁর। ইতিমধ্যেই হেট ও প্রিয়ঙ্কার প্রণয় বেশ পেকে উঠেছে। আর সেই সুযোগেই প্রেমিকার কাছে নিজের মনের কথাটা পেড়ে ফেলেন হেট। প্রেমিকের কথা যে তাঁকে রাখতেই হবে! কিন্তু প্রেমিককে পাইলট বানানোর জন্য এত টাকা কোথায় পাবেন? এই চিন্তায় বিভোর হয় পড়েন প্রিয়ঙ্কা। তখনই ফন্দিটা মাথায় আসে তাঁর। টাকা যদি জোগাড় করতেই হয় তা হলে নিজের বাড়ি থেকেই করবে। সোজা পথে পাওয়া যাবে না জানতেন তিনি, তাই বাঁকা পথটাই ধরলেন। নিজের বাড়িতেই ডাকাতি করলেন প্রিয়ঙ্কা! হ্যাঁ, তেমনটাই করেছেন।

সে দিন ছিল ২৯ নভেম্বর। প্রিয়ঙ্কার বোনকে বাইরে ঘুরতে গিয়েছিলেন তাঁর মা। বাড়িতেই ছিলেন প্রিয়ঙ্কা। মোক্ষম সুযোগটাকে হাতছাড়া করতে চাইলেন না তিনি। আলমারি খুলে সোনার-রুপোর গয়না, নগদ টাকা একটা ব্যাগে পুরে নেন। তার পর বাড়ির ভিতরে ভাঙচুর চালান। আলমারি ওলটপালট করে রাখেন। ঘরদোর অগোছালো করে দেন। যেন দেখলেই মনে হয় বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে!

প্ল্যান সাকসেসফুল! দুপুর দেড়টা নাগাদ ঘর থেকে বেরিয়ে যান প্রিয়ঙ্কা। আড়াইটে নাগাদ তাঁর বাবা বাড়িতে ফিরেই চমকে ওঠেন। দেখেন ঘরদোর ওলটপালট হয়ে রয়েছে। সে সময় বাড়িতে প্রিয়ঙ্কা না থাকায় তিনি ধরেই নেন যে বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। পুলিশে ও বিষয়ে একটা অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু সর্ষের মধ্যেই যে ভূত লুকিয়ে সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। ১ ডিসেম্বর প্রিয়ঙ্কার মা বাড়িতে ফিরলে সোনাদানা খোওয়া যাওয়ার বিষয়টিও সামনে আসে।

তদন্তে নেমে ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসাররাও চমকে ওঠেন। তাঁরা সব খতিয়ে দেখে বুঝতে পারেন, বাইরের কেউ নয়, চোর ওই ঘরেরই কেউ। তদন্ত আরও এগোলে বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয়। শুক্রবার তদন্তকারীদের হাতে উঠে আসে আসল কাহিনি। তাঁরা জানিয়ে দেন, বাইরের কেউ নয়, চুরি করেছেন প্রিয়ঙ্কাই! কথাটা শুনে যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না প্রিয়ঙ্কার বাবা-মা।

আরও পড়ুন: ঈশার বিয়েতে ঐশ্বর্যারা কেন খাবার পরিবেশন করেছিলেন? খোলসা করলেন অভিষেক

তদন্তকারীরা জানান, সন্দেহটা হয় কয়েকটা বিষয় দেখে। প্রথমত, বাইরের কেউ ডাকাতি করলে দরজা বা তালা ভাঙা থাকত। এ ক্ষেত্রে সে রকম জোর করে ঢোকার চিহ্ন পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয়ত, আলমারি ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে খোলা হয়েছিল। তদন্তকারীরা জানান, ৩ কেজি সোনা, ২ কেজি রুপো এবং নগদ ৬৪ হাজার টাকা চুরি করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা। সব মিলিয়ে এর মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা।

তদন্তকারীরা সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেন। প্রিয়ঙ্কাকে জেরা করতেই অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন তিনি। তখনই সন্দেহটা আরও গাঢ় হয় তাঁদের। রাজকোট পুলিশ কমিশনার মনোজ আগরওয়াল জানান, জেরায় প্রিয়ঙ্কা জানিয়েছেন তাঁর প্রেমিকের স্বপ্নপূরণ করতেই এ কাজ করেছেন তিনি! হেটের বাড়িতেও হানা দেয় পুলিশ। সেখান থেকেই গয়না ও টাকা উদ্ধার হয়। হেট পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি এবং প্রিয়ঙ্কা ডাকাতির ফন্দি এঁটেছিলেন।

(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরাবাংলা খবরপেতে পড়ুন আমাদেরদেশবিভাগ।)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Kidnap Bengaluru
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE