‘গো মাতা’-দের দাপটে কার্যত নাভিশ্বাস উঠছে রাজস্থানের কৃষকদের। —নিজস্ব চিত্র।
এত দিন সম্বর, হরিণ আর নীলগাইয়ের হাত থেকে ফসল বাঁচাতেই নাজেহাল হয়ে যেতেন চাষিরা। এখন তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘গোমাতা’-দের দাপট। আর এই জোড়া আক্রমণে কার্যত নাভিশ্বাস উঠছে রাজস্থানের কৃষকদের। এর জন্য মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার গো-রাজনীতিকেই দায়ী করছেন তামাম চাষিরা।
এই মরুপ্রদেশের জাতীয় বা রাজ্য সড়ক দিয়ে যাতায়াতের সময় হরিণ-নীলগাইয়ের পালের মুখোমুখি হওয়া খুব সাধারণ ঘটনা। রাজ্যের প্রায় সব প্রান্তেই এই তৃণভোজী বনজরা বিপুল সংখ্যায় রয়েছে। বুঁদি জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বোজাকি ধানি। এখানে ধানি বলতে ছোট বসতি বোঝানো হয়। সেই বোজাকি ধানির কৃষক জয়প্রকাশ কুমায়ত। তিনি বলেন, “এ বছরেই এক রাতে প্রায় এক বিঘে জমির বাদামের গাছ উজার করে দিয়েছিল নীলগাই আর সম্বরের পাল।” এখন তাঁর মাঠে রয়েছে মূলো এবং মটরশুঁটির মত আনাজ। জয়প্রকাশ বলেন, “দিনের বেলায় সেই ফসল ভবঘুরে গরুর পালের থেকে রক্ষা করাই কঠিন হয়ে দাঁডাচ্ছে।”
একই অবস্থা কোটা জেলার নুর কি ধানির চাষি উসমান খানের। তিনি বলেন, গত দু’বছরে মালিকানাহীন গরুর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। রাজস্থানের কৃষক নেতা অমরা রামেরও বক্তব্য, মালিকানাহীন গরু প্রচুর ফসল নষ্ট করছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, বসুন্ধরা সরকার গো-রাজনীতি করার জন্যই রাজ্যের ১৯৯৫ সালের ‘গো জাতীয় পশু রক্ষা আইন’কে গত দু’বছর ধরে খুব কড়া ভাবে লাগু করেছে।
(ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন— ফিরে দেখা এই দিন।)
এই আইন অনুযায়ী গরু জাতীয় (বোভাইন) কোনও পশু উপযুক্ত অনুমতি ছাড়া পরিবহণ এবং রাজ্যের বাইরে নিয়ে যাওয়া অপরাধ। শুধু তাই নয়, ওই পশুদের হত্যা বা আঘাত করাও অপরাধ। দোষী প্রমাণিত হলে দশ বছর পর্যন্ত কারাবাস।
আরও পড়ুন: রাজস্থানে সিপিএমের কৃষক আন্দোলনের ফসল ঘরে তোলার আশায় কংগ্রেস
গত দু’বছরে রাজস্থানে মালিকানাহীন গরুর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
আজমল খান নামে অজমেঢ়ের এক পশুপালক বলেন, “যে কোনও গরু একটি নির্দিষ্ট সময়ে দুধ দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তখন পশুপালকরা সাধারণত সেই গরুকে বাইরে বিক্রি করে দিতেন। পরিবর্তে অন্য গরু কিনতেন যে দুধ দিতে সক্ষম।” তিনি বলেন, ওই আইনের জন্য এখন গরু বিক্রি কর যাচ্ছে না। তার উপর রয়েছে গো-রক্ষকদের তাণ্ডব। আলওয়ারে গোরক্ষকদের হাতে পর পর সংখ্যালঘু পশুপালকদের খুন হওয়ার পর থেকে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। কেউ এখন আর গরু বিক্রি করার চেষ্টাই করছেন না। অন্য দিকে উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা গরুকে বাড়িতে রেখে খাওয়াতেও পারছেন না। তাই ছেড়ে দিচ্ছেন। সেই সমস্ত গরুই নিজেদের মতো করে চরে খাচ্ছে, নষ্ট করছে চাষির ফসল। সেই সংখ্যাটা গোটা রাজ্যে বেশ কয়েক হাজার।
আরও পড়ুন: সচিনকে আটকাতে ‘রামভক্ত’ ইউনুস বাজি বসুন্ধরার
সমস্যার সমাধানে বিকানের জেলায় ২১০ হেক্টর জমিতে গো-রক্ষা এবং পালন কেন্দ্র তৈরি করার কথা বলেছিলেন বসুন্ধরা। ওই কেন্দ্রে প্রায় ১০ হাজার এ ধরনের মালিকানাহীন গরুকে আশ্রয় দেওয়া হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বিশ বাঁও জলে।
ফলে এই মুহূর্তে ‘গো মাতা’-দের দাপটে ফসল সামলাতে দিশেহারা সে রাজ্যের কিসানরা! আর ভোটের ময়দানে বিজেপি যে কৃষক অসন্তোষ নিয়ে এ বার রীতিমতো চিন্তিত, সেই অসন্তোষের একটা কারণ এই গোরু সমস্যাও।
(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরাবাংলা খবরপেতে পড়ুন আমাদেরদেশবিভাগ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy