দাবি আদায়ের আন্দোলন।—নিজস্ব চিত্র।
হাসপাতালে সঠিক ভাবে চিকিত্সা হচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে বসিরহাট জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীরা। রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে হিঙ্গলগঞ্জ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। একই দাবিতে গত শনিবার সকালে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। চার-পাঁচ ঘণ্টা বিক্ষোভ চলার পর স্বাস্থ্যকর্তার সঙ্গে কথা বলার প্রতিশ্রুতি পেয়ে ওই দিন অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ দিন স্বাস্থ্যকর্তা ঘটনাস্থলে গেলে তাঁকে ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়তে হয়। বিক্ষোভকারীদের দাবি, হাসপাতাল আছে, অথচ চিকিত্সক নেই। ফলে বেড থাকা সত্ত্বেও রোগী ভর্তি নেওয়া হয় না। মাঝে মধ্যে এক জন ফার্মাসিস্ট রোগী দেখতে যান। ক্ষেত্র বিশেষে ওষুধপত্রও দেন তিনি। ফলে চিকিত্সক না আসা পর্যন্ত তাঁরা স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে আন্দোলন চালাবেন বলেও জানান।
এ বিষয়ে বসিরহাট জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক পুষ্পেন্দু সেনগুপ্ত জানান, চিকিত্সক নেই এ কথা ঠিক নয়। মধুসূদন মৃধা নামে এক চিকিত্সক সপ্তাহে ছ’দিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখেন। তাঁর দাবি, ৭ জন নার্স এবং ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মীও আছেন। পুষ্পেন্দুবাবু বলেন, “তবে যাতে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে অন্তত একজন সর্ব ক্ষণের চিকিত্সক এখানে নিয়োগ করা যায়, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০১২ সালে রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে হিঙ্গলগঞ্জ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১০টি বেডের ব্যবস্থা করা হয়। তখন স্বাস্থ্যকর্তারা বলেছিলেন, এ বার থেকে রোগী ভর্তি করে চিকিত্সা করা হবে। প্রয়োজনে জরুরি অপারেশনও করা হবে। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই চিকিত্সকের অভাবে রোগী ভর্তি বন্ধ হয়ে যায়। এমনকী, ছোটখাটো অপারেশনও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এলাকার মানুষ জানান, চিকিত্সকের দাবিতে সোচ্চার হয়ে একাধিক বার তাঁরা স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে দরবার করেছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়, হিঙ্গলগঞ্জ এলাকায় আড়াই লক্ষের উপর মানুষের বাস। এ দিকে, চিকিত্সক মাত্র পাঁচ জন। মাঝে মধ্যে তাঁদেরও জরুরি প্রয়োজনে অন্যত্র ছুটতে হয়। ফলে এ বিষয়ে তাঁদের কিছু করার নেই। এতেই ক্ষোভ বাড়ে মানুষের।
পুলিশ জানায়, শনিবার বেলা ১১টা নাগাদ দুর্ঘটনায় এলাকার এক ব্যক্তির মাথা ফেটে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে নিয়ে ছোটেন হিঙ্গলগঞ্জ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিন্তু সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়ে দেন চিকিত্সক নেই, অসুস্থকে যেন অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। এমনিতেই ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিল জনতা। তার উপর এই প্রতিক্রিয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা। নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের বাইরে বের করে দিয়ে হাসপাতালের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। চিকিত্সকের দাবিতে দেওয়ালে পোস্টারও লাগানো হয়। বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন হিঙ্গলগঞ্জ থানার ওসি এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতা। রবিবার পোলিও সপ্তাহ থাকায় প্রশাসনের পক্ষে হাসপাতালের দরজা খুলে দেওয়ার জন্য বিক্ষোভকারীদের আবেদন করা হয়। স্বাস্থ্যকর্তার সঙ্গে কথা বলার এবং দ্রুত অন্তত এক জন চিকিত্সকের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলে শান্ত হয় জনতা।
জনতার ঘেরাওয়ের মাঝে, পুষ্পেন্দুবাবু বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, সুন্দরবন এলাকায় চিকিত্সকেরা সচরাচর থাকতে চান না। তবু এক জন সর্ব ক্ষণের চিকিসকের পাশাপাশি প্রতিদিন যাতে বহির্বিভাগ খোলা থাকে, সেই ব্যবস্থা করা হবে। তিনি স্বীকার করেন, সুন্দরবন এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক। তাই হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের সুন্দরবন এলাকায় হিঙ্গলগঞ্জ, সান্ডেলেরবিল, যোগেশগঞ্জ এবং সাহেবখালি হাসপাতালে যাতে অন্তত একজন করে চিকিত্সক সব সময়ের জন্য থাকেন, তার ব্যবস্থা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতিও দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy