শরীরের বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়াই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। শরীরকে সক্রিয় রাখলে তবেই পেশি ও হাড় সক্রিয় হয়, যা রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু এখানেই দ্বন্দ্ব। কোন ধরনের শরীরচর্চা স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী? যদি কারও হাতে ৩০ মিনিট মাত্র সময় থাকে, তা হলে হাঁটা ভাল না কি যোগাসন করা? কোনটি বেছে নেওয়া উচিত?
ওজন কমানো: যদি লক্ষ্য হয় ওজন কমানো, মেদ ঝরানো এবং হৃদ্রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া, তা হলে হাঁটার বিকল্প নেই। ৩০ মিনিটের দ্রুত হাঁটা অনেক রকমের রোগ মুক্তিতে সাহায্য করতে পারে। হাঁটার সময়ে হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি পায়। আর তাতেই হার্টের উপকার। গতি এবং ওজনের উপর নির্ভর করে প্রায় ১২০-১৮০ ক্যালোরি পোড়ানো উচিত। সময় বেঁধে হাঁটলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়। ফলে হৃদ্রোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও কমে যেতে পারে। অন্য দিকে, যোগাসন আদপেই ওজন কমানোর জন্য তত কার্যকরী নয়। তবে বিপাকক্রিয়ায় বড় অবদান রয়েছে যোগের, যা আবার ওজন নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা পালন করে।
গাঁটের ব্যথা কমানো: হাঁটাচলা করলে পায়ের গঠন সুন্দর হয় ঠিকই, কিন্তু সামগ্রিক ভাবে শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে খুব বেশি ভূমিকা নেই। তবে যোগাসনেরর ফলে অস্থিসন্ধির নমনীয়তা এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়। হাত, পা এবং পিঠের পেশিও শক্তিশালী হয়। এই ক্ষেত্রে হাঁটার চেয়ে যোগাসন বেশি কার্যকরী। আর্থ্রাইটিস অথবা গাঁটে ব্যথা থাকলে যোগ খুবই উপকারী।

সময় বেঁধে হাঁটলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়। ফলে হৃদ্রোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও কমে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: হাঁটা এবং যোগাসন, দুই-ই মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কার্যকরী। তবে যোগাসন মানসিক চাপ কমানোর জন্য বেশি ভাল। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, ধ্যান, প্রাণায়াম ইত্যাদি স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে। স্ট্রেস হরমোন ‘কর্টিসল’-এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। অন্য দিকে হাঁটলে মনমেজাজ ভাল থাকে। কিন্তু যোগাসনের মতো মনের গভীরে গিয়ে প্রশান্তি দিতে পারে না।
স্বাচ্ছন্দ্য: দুই ধরনের শরীরচর্চার মধ্যে তুলনা করলে যোগের চেয়ে হাঁটা অনেক বেশি সহজ এবং সুবিধাজনক। যোগাসনের জন্য বিশেষ পোশাক, নির্দিষ্ট স্থান ইত্যাদির প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু হাঁটতে গেলে খুব বেশি আয়োজনের প্রয়োজন পড়ে না। সে ক্ষেত্রে পার্ক হোক বা বাড়ির ছাদ, যে কোনও জায়গাই উপযুক্ত। কেবল দরকার, সঠিক জুতো। এ দিকে যোগাসন অত্যন্ত উপকারী হলেও তাতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সঠিক নিয়ম, ভঙ্গি ইত্যাদি না শিখলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
আরও পড়ুন:
বিএইচএমএস-এর পুষ্টিবিদ এবং চিকিৎসক স্মৃতি ঝুনঝুনওয়ালার মতে, হাঁটা এবং যোগাসন উভয়েই খুব উপকারী। তবে এগুলি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টিই নির্ভর করে। কিছু ক্ষেত্রে হাঁটা উপকারী, কিছু ক্ষেত্রে যোগাসন। ফলে এত সহজে তুলনা করা উচিত নয়। এক দিকে হাঁটা হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে এবং মেদ ঝরায়। অন্য দিকে যোগাসন পেশির নমনীয়তা বৃদ্ধি করে, মানসিক শান্তি দেয়। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ, দুই পদ্ধতিকেই এক জায়গায় আনা। রোজের রুটিনে হাঁটা এবং যোগসনকে একসঙ্গে আনলেই সমস্যা মিটে যায়। দু’ধরনের শরীরচর্চার উপকারই আপনি পেতে পারেন। হৃদ্রোগের সম্ভাবনা কমে যাওয়া থেকে শুরু করে পেশির জোর বাড়ানো, সব দিকেই লাভবান হবেন আপনিই।