ডিজিটাল যুগে নাগালের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে সময়। হয় ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে, নয়তো আকাশকুসুম কল্পনা করতে করতে ঘড়ির দিকে খেয়াল থাকছে না। সেই ভাবনাচিন্তার মধ্যে বেশির ভাগ সময়েই নিজের প্রতি বিশ্বাস হারানোর দিকে হাঁটছে মানুষ। নির্ধারিত কাজটি আর করা হচ্ছে না। ফলে আত্মবিশ্বাস হারানোর প্রবণতাও বেড়ে যাচ্ছে। এমন সময়েই অভিনব এক উপায় বাতলে দিলেন লেখিকা মেল রবিনস। তাঁর বই ‘দ্য ৫ সেকেন্ড রুল: ট্রান্সফর্ম ইয়োর লাইফ, ওয়ার্ক অ্যান্ড কনফিডেন্স উইথ এভরিডে কারেজ’-এ জীবন যাপনের এক নতুন পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। যেটির হাত ধরে অকারণ আলস্য, কাজে দেরি, আত্মবিশ্বাস হারানোর মতো নেচিবাচক দিকগুলি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হতে পারে।
আরও পড়ুন:
বলা সহজ, করা নয়। মেল রবিনসের মতে, জীবনে বদল আনতে চান অনেকেই। কিন্তু সকলের মস্তিষ্ক চট করে কোনও পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে পারে না। ফলে নিজের শখ, ইচ্ছাগুলিকে দমন করেই জীবনের পথে হেঁটে যান। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, যদি কারও মনে হয়, রোজ এক ঘণ্টা করে হাঁটবেন, কিন্তু তা নিয়ে হাজার চিন্তা করে করে আর কাজটিই করতে পারলেন না। অথবা কর্মস্থলে কোনও বৈঠকে বসে বসে কারও মাথায় ভাল একটি পরামর্শ এল। কিন্তু ‘বলবেন, কি বলবেন না’, এই দোলাচলে থাকতে থাকতে সময় পেরিয়ে গেল। কেউ স্থির করলেন, ফোন ঘাঁটাঘাঁটির সময় কমিয়ে অথবা টেলিভিশন বন্ধ করে বই পড়বেন। কিন্তু ‘এখন না, তখন’ করে করে না থামল ফোন ঘাঁটা, না বন্ধ হল টিভি। এই বদল আনার প্রক্রিয়া আদপে সহজ নয়। সে ক্ষেত্রে নতুন এই ‘৫ সেকেন্ড রুল’ মুশকিল আসান হিসেবে দেখা দিয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। তার পর থেকেই সারা বিশ্বে জীবন যাপনের নতুন ধারা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে এই নিয়মকে।

—প্রতীকী ছবি।
কী এই ‘৫ সেকেন্ড রুল’?
যেই মুহূর্তে টেলিভিশন বন্ধ করে বই পড়তে ইচ্ছে করছে, কিন্তু করতে পারছেন না, সঙ্গে সঙ্গে পাঁচ থেকে এক পর্যন্ত নীচের দিকে গুনতে শুরু করতে হবে। ৫, ৪, ৩, ২, ১। ব্যস। রিমোট তুলে বন্ধ করে দিতে হবে ‘বোকা বাক্সটি’। রিমোট নামিয়ে হাতে তুলে নিতে হবে বই। এই হল জনপ্রিয় নিয়মের সারাংশ। এই নিয়মটি আসলে মানুষের মাথা নেতিবাচক চিন্তা শুরু করার আগেই থামিয়ে দেবে। নির্দিষ্ট কাজটি নিয়ে নেতিবাচক যা যা চিন্তা মানুষের মনে আসতে পারে, সেগুলি প্রবেশ করার আগেই বন্ধ করে দেয় এই ‘৫ সেকেন্ড রুল’।
মেল রবিনসের লেখায়, ‘আমি লক্ষ করেছি, আমার কাজ করার প্রবণতা এবং শরীরটিকে উঠিয়ে সেই কাজটি করার মধ্যে যত বেশি সময় নষ্ট হয়, কাজটি না করার জন্য অজুহাতগুলি তত দ্রুত প্রবেশ করে মাথায়। আর তার পরে সেই কাজটি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়।’
আরও পড়ুন:
রবিনসের মতে, পাঁচ সেকেন্ডের নিয়মটি ব্যবহারের তিনটি উপায় রয়েছে:
১. আপনার ব্যবহার ও আচরণ পরিবর্তন: নতুন অভ্যাস তৈরির থেকে পুরনো অভ্যাস ভাঙা আরও কঠিন। পাঁচ থেকে এক পর্যন্ত গুনলে, মস্তিষ্ক সেই পরিবর্তনের জন্য বাধ্য করবে।
২. রোজ সাহসের সঙ্গে কাজ করা: এই নিয়মটি আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। প্রতি দিনের কাজের সময় মনের মধ্যে যদি আবেগ নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তা হলে মুশকিল। ৫ সেকেন্ড রুলের মাধ্যমেই এই ভাবে রোজের ছোট ছোট কাজের দিকে অনেক তাড়াতাড়ি পা বাড়াতে পারবেন। যেমন, কর্মক্ষেত্রে বৈঠক চলাকালীন ভেবে ভেবে সময় না খরচ করে আরও বেশি করে নিজের মনের কথা বলতে পারবেন।

—প্রতীকী ছবি।
৩. মানসিকতা নিয়ন্ত্রণ করা: এটি সবচেয়ে কার্যকরী এবং শক্তিশালী। নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলার সময়ে ক্রমাগত নেতিবাচক হয়ে পড়েন? নিজের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন? এই সমস্ত ক্ষেত্রে ভাবনা বন্ধ করে পাঁচ থেকে এক পর্যন্ত নীচের দিকে গুনতে শুরু করতে হবে। তার পর আলোচনা থামিয়ে উদ্যোগী হয়ে কাজটি করে ফেলতে হবে। অন্তত একটি পা বাড়াতে হবে। এর ফলে মানসিকতায় পরিবর্তন আসে। রবিনস বলেন, ‘‘এই নিয়ম আপনার মস্তিষ্ককে এমন নতুন তৈরি করবে, যেখানে মন আর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না, বরং কাজটি করার দিকে এগোবে।’’
আরও বেশি করে রান্না করা, আঁকা শেখা, আরও বেশি প্রেম করতে যাওয়া থেকে শুরু করে সকালে ঘুম থেকে ওঠা এবং বিছানা গুছিয়ে নেওয়া, পাঁচ সেকেন্ডের নিয়মই আপনাকে সব কাজ সময়ে সময়ে করিয়ে নেবে।