শিশু আর পাঁচজনের মতো আচরণ করছে না মানেই যে সে অটিস্টিক, তা নয়। আবার অটিজ়মে আক্রান্ত শিশুর আচরণকে কেবল মানসিক কিছু সমস্যা ভেবে এড়িয়েও যান অনেক অভিভাবকই। আচার-আচরণে বা বৌদ্ধিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা অটিজ়মের লক্ষণ কি না, তা ধরতে পারাই জটিল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাবা-মায়েরাও মেনে নিতে পারেন না যে, শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে কিছু সমস্যা রয়েছে। ঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা হয় না। অনেক অভিভাবকই মনে করেন, সন্তান বড় হলে এমনি ঠিক হয়ে যাবে। ফলে যত দিনে রোগ ধরা পড়ে, দেরি হয়ে যায় অনেকটাই। অটিজ়ম সঠিক ভাবে নির্ণয় করার পদ্ধতি নিয়ে নানা গবেষণা চলছে। যার মধ্যে একটি পদ্ধতি নিয়ে সমীক্ষার রিপোর্ট পেশ করেছেন গবেষকেরা।
মুখের মধ্যে বাসা বেঁধে থাকে যে সব ব্যাক্টেরিয়া, তাদের চিহ্নিত করলেই নাকি ধরা যাবে অটিজ়ম আছে কি না। তেমনটাই দাবি করেছেন ইউনিভার্সিটি অফ হংকং-এর সাইকোলজি ও ডেন্টাল বিভাগের গবেষকেরা। আমেরিকা ও হংকং-এর অনেক শিশুর উপরে পরীক্ষাটি করা হচ্ছে। অটিস্টিক শিশুদের মুখ থেকে নেওয়া নমুনা পরীক্ষা করে ১১ প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়ার খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যাদের উপস্থিতিই প্রমাণ করবে, শিশু অটিস্টিক কি না।
‘জার্নাল অফ ডেন্টিস্ট্রি’-তে এই গবেষণার খবর প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা দাবি করেছেন, এই পদ্ধতিতে অটিজ়ম ৮১ শতাংশ নির্ভুল ভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব। হংকংয়ের অন্তত ৪৯ জন অটিস্টিক শিশুকে এই ভাবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। এই বিশেষ পদ্ধতিতে অটিজ়ম নির্ণয় করার প্রক্রিয়াকে বলা হচ্ছে ‘মাইক্রোবায়োম বায়োমার্কার’।
আরও পড়ুন:
অটিজ়মে আক্রান্ত শিশুদের মানসিক সমস্যার পাশাপাশি শারীরিক নানা সমস্যাও দেখা দেয়। যেমন পেটের রোগ সারতে চাইবে না, ঘন ঘন পেটখারাপ হবে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হবে। সে ক্ষেত্রে এমন ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ হবে যা দেখেই রোগ ধরা যাবে। গবেষকেরা এই উপায়টিকেই বেছে নিয়েছেন। জানিয়েছেন, শিশুদের যদি নিয়মিত দন্ত পরীক্ষা করা হয়, তা হলে অনেক রোগ চিহ্নিত করা সম্ভব।
অটিজ়মের কোনও চিকিৎসাপদ্ধতি এখনও অবধি নেই। কোনও শিশুর মধ্যে অটিজ়মের লক্ষণ প্রকাশ পেলে নির্দিষ্ট কিছু থেরাপি করা হয়, যেমন— ‘অকুপেশনাল থেরাপি’, ‘স্পিচ থেরাপি’, ‘স্পেশ্যাল এডুকেটর লার্নিং থেরাপি’। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, গোড়াতেই যদি রোগ ধরা পড়ে, তা হলে তার চিকিৎসা কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। সেই লক্ষ্যেই এই গবেষণাটি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।