সব কাজেই অসন্তুষ্ট? এখনই লাগাম টানুন নিজের স্বভাবে। ছবি: শাটারস্টক।
সাফল্যের অন্যতম শর্ত হল যথাসম্ভব নিখুঁত ভাবে কাজ করার চেষ্টা করা৷ কিন্তু তা যদি বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায় তা হলে? খুঁতবিহীন কাজ করতে গিয়ে কাজটাই শেষমেশ করা হয়ে না ওঠে। ব্যর্থতা তো আসেই, জীবনযাপনও দুরূহ হয়ে পড়ে৷
এই অভ্যাস থেকেই জন্ম নেয় অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার। কাজেই আপনি ঠিক পথে চলেছেন না বাড়াবাড়ি করে ফেলছেন, তা বুঝে নেওয়া বেশ জরুরি— এমনই মত মনোচিকিৎসক ওমপ্রকাশ সিংহের৷
বাতিকগ্রস্ত হয়ে পড়া বা অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডারের হাত থেকে বাঁচতে খতিয়ে দেখুন নিজের মধ্যেই কখনও এই অসুখের লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে না তো? জানেন এমন মানসিক অসুখের প্রাথমিক লক্ষণ কী কী?
আরও পড়ুন: হাতে সময় কম? নামমাত্র খরচে এ সব উপায়েই সারান চুলের নানা সমস্যা
খুঁটিনাটি সব কাজে নিঁখুত হওয়া আদতে অসুখ, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাতিকগ্রস্থ হওয়ার লক্ষণ
কাজ হবে নিখুঁত। সে রান্না হোক কি অফিসের কাজ, বাচ্চা মানুষ করা হোক কি ঘর গুছনো৷ অন্যদেরও একই ভাবে কাজ করতে হবে। না হলেই মনে হবে তাঁরা অযোগ্য৷ বেশির ভাগ অশান্তির সূত্রপাত হয় এ নিয়ে৷ লক্ষ্যমাত্রা সব স্থির করা আছে৷ ছেলে–মেয়েকে পরীক্ষায় প্রথম হতে হবে, স্ত্রীকে রান্না করতে হবে ঠিক মনের মতো করে, অফিসে বসের চেয়ার পেতে হবে তাড়াতাড়ি ইত্যাদি৷ চাহিদা পূরণ না হলে রাগ, অশান্তি, হতাশা, অপরাধবোধ দেখা দেয়৷ ভাল কাজ করেও সন্তুষ্টি আসে না৷ কাজ শেষ করার চেয়ে নিখুঁত ভাবে করার দিকেই মন বেশি থাকে৷ হার–জিত বা ঠিক–ভুলের মাঝামাঝি কিছু বোঝেন না৷ কথাতেও তাই ‘কখনও না’, ‘সব সময়’, ‘এখনই’, ‘খুব খারাপ’, ‘খুব ভাল’ ইত্যাদির ছড়াছড়ি৷ ছোট সমস্যা বড় হয়ে মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷
এই লক্ষণগুলির মধ্যে কয়েকটিও যদি নিজের মধ্যে দেখেন তা হলে বাড়াবাড়ি হওয়ার আগে, অর্থাৎ অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার নামে রোগের কবলে পড়ার আগেই কিছু নিয়ম মেনে চলুন৷ তাতে সমাধান না হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে৷
আরও পড়ুন: মাইগ্রেন কমাতে যৌন সম্পর্কের দাওয়াই! কেন জানেন?
চিকিৎসকদের মতে, জীবনের সব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় না, এই সত্য মানতে হবে।
সমাধান
গুরুত্বের বিচারে কাজের তালিকা বানিয়ে বন্ধু বা কাউন্সিলরের সাহায্যে তাকে ছোট করুন৷ সিদ্ধান্ত নিন যে কাজ বাদ গেল তা নিয়ে ভাববেন না৷ প্রতি দিন প্রতিটি কাজের জন্য সময় বেঁধে নিন৷ অফিসে ৮ ঘণ্টার কাজ শেষ করুন ৮ ঘণ্টাতেই৷ কিছু কাজ মনের মতো হয় না৷ এই মত মেনে নিতেই হবে৷ কখনও সখনও ভেবে দেখুন, আপনার বাড়াবাড়ি চাহিদাতেই কি ঘরে–বাইরে অশান্তি বাড়ে? এমনটা হলে নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করুন৷
নিজের ও অন্যের কাজের মান নিয়ে অসন্তুষ্টি ও সেখান থেকে অশান্তি দেখা দিলে পর পর কয়েকটি পদক্ষেপ করুন। যেমন–
নিজের দোষ, গুণ এবং চাহিদা পর পর লিখুন৷ ভেবে দেখুন এই চাহিদা কি আদৌ বাস্তবসম্মত? যে যে চাহিদা পূরণ করতে অতিরিক্ত খাটতে হবে বা খেটেও পূরণ হবে কি না সন্দেহ— তা নিয়ে ভাবা বন্ধ করুন৷ অন্যের কাজ পছন্দ না হলে রেগে না গিয়ে ভেবে দেখুন তাঁদের এ কাজ করার ক্ষমতা আছে কি না৷ না থাকলে একসঙ্গে বসে ঠিক করে নিন তারা কতটা বেশি দিতে পারবেন আর আপনি কতটা বাদ দিতে পারবেন।
এমন মানুষরা অতিরিক্ত দায়িত্ব নিলে তা আলাদা চাপ তৈরি করে। তাই আলাদা করে কোনও দায়িত্ব নেবেন না। কোনও কোনও ক্ষেত্রেঘুরিয়ে ‘না’ বলতে শিখুন৷ সারা সপ্তাহ কাজের চাপ থাকে। তাই সপ্তাহের অন্তত এক দিন কাজের টেনশন ঝেড়ে ফেলে আনন্দ করুন৷ বছরে বার দুয়েক বেড়াতে যান৷ চেষ্টা করে ভুলে থাকুন কাজের কথা৷ এই অসুখ ঠেকাতে মেলামেশা বাড়ালেও ভাল উপকার পাবেন। দরকার হলে কয়েক জনের সঙ্গে মিশে একজোট হয়ে প্রাতর্ভ্রমণ, যোগাসন মেডিটেশন করুন নিয়মিত৷ এতেও সমস্যা আয়ত্তে না এলে মনোবিদ বা মনস্তত্ত্ববিদদের পরামর্শ নিন৷
(ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy